টিপাইমুখ বাঁধ : কেটে ফেলা হচ্ছে ৮২ লাখ গাছ

tipaiসাকির আহমদ: ভারত তাদের বরাক নদীর উপর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে আরেকটি বাধা অতিক্রম করার পথে অগ্রসর হচ্ছে। মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার জঙ্গলের বিরল জাতের ৮২ লাখ গাছ কেটে ফেলা হবে। টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বিরোধী অ্যাকশন কমিটি গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আর এ ধরণের পরিস্থিতিতে গাছ কেটে ফেলার কাজটি নির্বিঘ্নে করতে দু’টি রাজ্য সরকারের সাথে চলতি মাসেই আলোচনায় বসছে কেন্দ্রীয় সরকার।
শনিবার ভারতের গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। খবরে বলা হয়, বিরল জাতের গাছ কাটা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দু’টি রাজ্যেই। ভারতে নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণ নতুন ঘটনা নয়। অন্যত্র নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণে বনাঞ্চলে হাত দিতে হয়েছে। তবে সেসব বিদ্যুত্ কেন্দ্রের জন্য বনাঞ্চল যতটা ধ্বংস করতে হয়েছে টিপাইমুখ বাঁধের ক্ষেত্রে তা শতভাগ ছাড়িয়ে যাবে। দু’টি রাজ্যের পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি হবে তা চিন্তা করে বিশাল বনাঞ্চল উজাড় করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে অ্যাকশন কমিটি।
মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের জঙ্গলে চেনা ও অচেনা অনেক প্রজাতির পশু-পাখি রয়েছে। মণিপুরের জঙ্গলের ৮২ লাখ বিরল জাতের গাছ কাটার পাশাপাশি মিজোরাম রাজ্যের এক হাজার ৫৫২ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাবে। দু’টি রাজ্যের জঙ্গলে বাস করছে বাঘ, চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘ, কালো চিতাবাঘ, উল্লুক, স্লো লরিস, পিগ টেল্ড ম্যাকাক, ভাল্লুক, মালয় ভাল্লুক, প্যাঙ্গোলিন, অজগর, হিমালয়ান হলুদ গলার মারটেন, ঘড়িয়াল, ধনেশ পাখিসহ বিলুপ্তপ্রায় অনেক প্রাণী।
এদিকে পশু-পাখি ছাড়াও রাজ্য দু’টির বিশাল জঙ্গলে রয়েছে অনেক বিরল জাতের গাছপালা। সাধারণত রাস্তা কিংবা রেললাইনের দু’পাশে কিংবা অন্য কোথায় এসব বিরল জাতের গাছ দেখা যায় না। এছাড়া রয়েছে বাঁশের বিশাল এক ভান্ডার। নিম্ন আয়ের লোকদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে জঙ্গলের বিশাল এলাকাজুড়ে থাকা বাঁশ। জঙ্গল কেটে ফেলা হলে উজাড় হয়ে যাবে বাঁশের ভান্ডার। নিম্ন আয়ের লোকদের পথে বসতে হবে।
টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প বিরোধী অ্যাকশন কমিটি ভারতের গণমাধ্যমকে বলেছে, বরাক নদীর উপর জলবিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্যের সবুজতাকে বিদায় জানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দু’টি রাজ্যের বিশাল জঙ্গল কেটে পরিস্কার করার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। আর যদি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে এ কাজটি করা হয় তাহলে গোটা মণিপুর রাজ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা থেকে কোনভাবেই উত্তরণ করা সম্ভব হবে না।
রাজ্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের ছাড়পত্র দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। এ ব্যাপারে চলতি মাসেই দিল্লির কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় রাজ্য দু’টির সরকারের সাথে আলোচনায় বসবে। আর সে আলোচনার প্রধান এজেন্ডাই হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের জন্য জঙ্গল কেটে পরিস্কার করা। টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করা সম্ভব হবে। আর এ লক্ষ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ২০১১ সালে মণিপুর রাজ্য সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button