৪১তম বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল

১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ৪১ বছরে পা দেবে বিএনপি। ১৯৭৮ সালের এই দিনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। যে দলের অনুসারীরা হবেন বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, ধর্মীয় মূল্যবোধের ধারক ও বাহক। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত সৎ ব্যক্তিত্ব ও বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণায় অনুপ্রাণিত। তিনি নিজেও এসব গুণের অধিকারী ছিলেন। জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে শুরু হয় উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। রাজনীতিতে আসার আগেও এই মহান নেতার একটি ঘটনাবহুল জীবন রয়েছে। সৈনিক জীবন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সব ক্ষেত্রেই তার একটি সমুজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। যা জাতি কোন দিন ভুলতে পারবে না।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। তখন দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত হয়। ঠিক সেই মুহূর্তে এ দেশের সিপাহী জনতা একই বছরের ৭ নবেম্বর জিয়াউর রহমানকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসায়। এভাবেই একজন কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব। তিনিই প্রথম দেশে আওয়ামী লীগের গড়া একদলীয় বাকশালের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি পালনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও মিডিয়া ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের পাশাপাশি এনে দেন আমাদের জাতিসত্তার পরিচয়, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের। জিয়াউর রহমানের উন্নয়ন, উৎপাদন ও গণতান্ত্রিক আদর্শ লালন করেই বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ পাঁচবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বরণের পর দলের বর্তমান চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও এক যুগসন্ধিক্ষণে দলের দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারী এরশাদের আমলে তিনি আন্দোলন করে আপসহীন নেত্রী উপাধি পান। তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বিএনপি আজ তাদের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে।

বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বিএনপির দাবি সেই সময়কার সেনা সমর্থিত সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাবে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দল প্রায় দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতাদের দাবি, দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়েছে।

বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছে, বর্তমান আ’লীগ সরকারও বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাই জিয়া ও খালেদা জিয়ার নামে নামকরণকৃত সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে তার ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে জোর করে এক কাপড়ে বের করে দিয়েছে। এমনকি কথিত দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ৩৬টি মামলা রয়েছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। মূল মামলায় জামিন পেলেও অন্যান্য মামিলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে দীর্ঘ ৬ মাসেরও অধিক সময় বেগম জিয়াকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি খুবই অসুস্থ। কিন্তু সরকার তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করছে না বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। একইভাবে বেগম জিয়ার দুই ছেলের বিরুদ্ধেও একের পর এক মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আরাফাত রহমান কোকো। বর্তমানে তারেক রহমানকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাকেও সাজা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে যে বিএনপির প্রচেষ্টা দীর্ঘ ৩৯ বছর পরও সে লক্ষ্য অর্জনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। তাদের দাবি দেশের অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারী উন্নয়ন, কৃষি, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব সাফল্য বিএনপি সরকারের আমলেই হয়েছে। জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজনসহ ইসলামী মূল্যবোধকে জাগ্রত করেছেন।

মহাসচিবের বাণী: বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বাণীতে তিনি বলেন, আজ থেকে ৪০ বছর আগে দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে একদলীয় দুঃশাসনের অন্ধকার গুহায় আবারো যেন বাংলাদেশের মানুষ বন্দী না হয় সেজন্য মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, বিশ্বনন্দিত নেতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি দেশ, দেশের মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ ও বন্ধুত্বপূর্ণ স¤পর্ক স্থাপনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি’র ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে আমি দলকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করতে মনেপ্রাণে কাজ করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আহবান জানাচ্ছি। বর্তমান দু:সময়ে জনগণকে সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। দেশ আজ দু:শাসন কবলিত। মানুষ ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গুম-খুনের আতঙ্ক মানুষ দিশেহারা। অসহায় মানুষদের শেষ আশ্রয় আদালত সেখানেও সরকার প্রভাব বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেআইনী কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে সমাজে দেখা দিয়েছে বিপজ্জনক বিশৃঙ্খলা। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারে অভিনব পন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। সুতরাং জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্যই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বারবার অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে যিনি মুক্ত করেছেন সেই অবিসংবাদিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। এই সকল প্রতিহিংসামূলক জুলুমের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্ত করে আনতে হবে আমাদের প্রিয়নেত্রী বেগম জিয়াকে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমি দেশবাসীকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য উদাত্ত আহবান জানাই।

কর্মসূচি: দলের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহু দলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক, আগামী বাংলাদেশের রুপকার সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বেলা ২টায় জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানস্থ চেয়ারপার্সনের কার্যালয়সহ দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে সকাল ৬টায় দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া কাল রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে রাজধানীর বাইরেও দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button