আজ স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী

Mujibআজ জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালোদিবসে সূর্য ওঠার আগে ধানমন্ডির বাসভবনে সপরিবারে তাকে স্বাধীনতা-বিরোধী চক্র নির্মমভাবে হত্যা করে।
ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, একে একে নির্মমভাবে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এক বাণীতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন ‘জাতীয় শোক দিবসে আসুন, আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করি।’ তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হবে দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে বলেন, ‘ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তিতীক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ বাঙালি জাতির অন্তরে প্রোথিত হয়ে আছে।’ তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করি।’
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিক কর্মসূচি পালন করবে।
১৫ আগস্টকে সামনে রেখে এ মাসের প্রথম দিন থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সরকারিভাবে পালিত হচ্ছে দিবসটির বিভিন্ন কর্মসূচি। দিবসটিতে ইতোমধ্যেই সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এ ছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।
এদিন সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে অনুষ্ঠিত হবে মোনাজাত ও কুরআন তেলওয়াত।
এছাড়াও ১৫ আগস্টে শাহাদাতবরণকারী জাতির জনকের পরিবারের সদস্য ও অন্যান্য শহীদের কবরে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফাতেহা পাঠ করবেন।
এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ, প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক অর্পণ ও সশস্ত্র বাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদানসহ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং সংবাপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
এছাড়াও জাতীয় জাদুঘর শোক দিবস উপলক্ষে তাদের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে আগামী ১৫ আগস্ট ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী করবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন।
সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে টুঙ্গিপাড়ায় সকাল ১০টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত থাকবে।
এ উপলক্ষে ১৬ আগস্ট শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন শোক দিবস উপলক্ষে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও ১৫ আগস্ট বাদ আসর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল ও ইফতার এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আগামী ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button