ইউরোপের অর্থনীতি বাঁচাতে ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনা

EU zoneসাইদুল ইসলাম: বিনিয়োগ বাড়িয়ে বেকারত্ব কমানোর জন্য ইউরোপের দেশগুলো দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালিয়ে আসলেও এখনো তারা সফল হয়নি। বরং দু-একটি দেশ ছাড়া বাকি দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। নানা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বাঁচাতে উদ্ধার পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা খুব কমই ফলদায়ক হয়েছে। অবশেষে ইউরোপের দেশগুলোকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বন্ড বিক্রি করে এক দশমিক এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহ করবে। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা আগামী মার্চ মাস থেকে এ বন্ড বিক্রি শুরু করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চললে আগামী বছরের শেষনাগাদ ইউরোপের অর্থনীতির মন্দাবস্থা কেটে যাবে। বিনিয়োগ বাড়বে, সাথে সাথে বাড়বে কর্মসংস্থানও।
বন্ড বিক্রি করে অর্থনীতি উদ্ধার করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকে চললেও বিভিন্ন দেশের আপত্তির মুখে তা সম্ভব হয়নি। অবশেষে যখন এ সিদ্ধান্ত এলো তখন মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরোর রেকর্ড দরপতন হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও ডলারের বিপরীতে ইউরোর মান দুই শতাংশ পড়ে গেছে-যা ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়েও সেখানকার বিনিয়োগ বাড়াতে পারেনি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইউরো জোনের ১৯টি দেশের ব্যাংকের সুদের হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মারিও দ্রাগি বন্ড বিক্রির পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেছেন, সুদের হার কমিয়েও বিনিয়োগ বাড়ানো যায়নি। প্রত্যেকে তাদের মানিব্যাগে তালা দিয়ে রেখেছিল। এখন মনে করা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদের বন্ডে বিনিয়োগ করবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, বিপুল অংকের বন্ড বিক্রি তাদের জন্য তেমন অসুবিধা হবে না। কারণ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের বন্ডের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্য এবং জাপানও কিছু বন্ড কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এত বিশাল অংকের বন্ড ছাড়ার সমালোচনাও করছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে এর ফল নেতিবাচকও হতে পারে। বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সভাপতি মারিও দ্রাগি মনে করছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বন্ড ছাড়ার পরিকল্পনা ওই জোনের প্রায় সব দেশ মেনে নিলেও জার্মানী এর বিরোধিতা করেছে। তবে শেষদিকে এসে তারাও এটি মেনে নিয়েছে। তবে অন্যান্য দেশ এ পরিকল্পনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী পিয়ের কার্লো পাদোয়ান বলেছেন, এটি উচ্চাভিলাষী হলেও ইউরোপের জন্য তা ভালো ফল বয়ে আনবে। ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কথা বাদ দিন। আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনুন।
এদিকে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা যুক্তরাজ্যই নয়, ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেও বিভিন্ন বন্ড কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ব্যক্তির নামে ইস্যু করা ঋণও কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব বেশি হলে ২০ শতাংশ বন্ড কিনতে পারবে। বাকি বন্ডগুলো যদি বিক্রি না হয় তাহলে পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে।
অপরদিকে বন্ড ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তা আবার নিজেরাই কেনার পরিকল্পনার মধ্যে আরো শংকা দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বন্ড বিক্রির টাকা কাজে না দিলে দেশগুলো নিজেরাই খেলাপি হয়ে যাবে-যা এক দীর্ঘমেয়াদী সংকটের সৃষ্টি করবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button