কাশ্মীরে মসজিদে বিএসএফ-এর হামলায় মুসলিমদের রোজা পালনে ব্যাঘাত

ভারত শাসিত জম্মু কাশ্মীরের রামবান জেলার একটি মসজিদে গত বুধবার রাতে তারাবিহ্্র নামাজের সময় নিরাপত্তা  রক্ষীদের হামলার জের ধরে সৃষ্ট সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছে।
আহত হয়েছে আরো কয়েকডজন মুসল্লী। তাদের অভিযোগ মসজিদে ঢুকে নিরাপত্তা রক্ষীরা পবিত্র কুরআনের অবমাননা এবং ইমামসহ মুসল্লীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জের কারণে মুসল্লীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
পদস্থ একজন পুলিশ কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা আইএএনএসকে বলেন, প্রতিবাদকারী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যকার সংঘর্ষে ২৪ জন আহত হয়েছে।
হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন আহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ জন গুলীবিদ্ধ রয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি গত বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে যখন রামবান জেলার গুল শহরে অবস্থিত সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) একটি ক্যাম্প লক্ষ্য করে প্রতিবাদকারীরা ভাঙচুর চালায়।
কিন্তু প্রতিবাদকারীদের দাবি গত বুধবার রাতে তারাবিহর নামাজ চলাকালে বিএসএফ সদস্যরা মসজিদে হামলা চালায় এবং ইমামসহ মুসল্লিদের ব্যাপক মারধর করে, পবিত্র কুরআনকে অপবিত্র ও অবমাননা করে। পুলিশ জানিয়েছে বিএসএফ ক্যাম্পের রক্ষীরা গুলী চালালে তাতে ৪ জন প্রতিবাদকারী নিহত হয়।
ঐ সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিবাদকারীরা কৌশলগত জম্মু শ্রীনগরের জাতীয় মহাসড়কের বেশ ক’টি স্থানে অবরোধ সৃষ্টি করে। শ্রীনগরের স্বাধীনতাকামী ও ধর্মীয় নেতারা এর প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয়। বর্তমানে রামবানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে ৭৬ ব্যাটালিয়ান বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে। যারা নির্মাণাধীন রেললাইনের নিরাপত্তার বিষয়টির দিকে নজর রাখছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক লোক জানান, বিএসএফ সদস্যরা কিছু লোকজন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যারা মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসে। কিন্তু গত রাত থেকে তারা মসজিদে আসছে না।
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর লোকজন অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মসজিদের ইমামের ভাই আব্দুল লতিফ যদিও নিকটবর্তী অব্যবহৃত একটি সেতুর ওপর সালাত আদায়ের জন্য জামায়াতে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি এ তথ্য জানান। বিএসএফ কর্মকর্তাদের সাতে আব্দুল লতিফের বেশ কথা কাটাকাটি হয়। যারা তাকে প্রহার করে।
ইতোমধ্যে জম্মুকাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের  জেকেএলএফ) চেয়ারম্যান ইয়াসিন মালিককে তার অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে আটক করেছে পুলিশ।মুসল্লীদের ওপর হামলা ও হত্যাকা-ের প্রতিবাদে মাইসুমা এলাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করার অপরাধে তাদের আটক করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশিল কুমার সিন্ধে কাশ্মিরী মুসলমানদের শান্তি থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং হত্যার বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সিন্ধে বলেন, “কোন সময় ক্ষেপণ না করে আমি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ গুলী চালিয়েছে।
ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে লোকদের প্রতি শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
মি. সিন্ধে।
তিনি বলেন, জীবন হানির এই ঘটনা সত্যিকার অর্থেই বোদনাদায়ক আমি শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমাবেদনা প্রকাশ করছি।
আমি এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্য অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনগণের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা শান্তিশৃংখলা বজায় রাখুন এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনুন। কাশ্মীর বর্তমানে দু’টিভাগে বিভক্ত যার এক অংশ পাকিস্তান এবং অপর অংশ ভারত শাসিত। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তারের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ঐ অঞ্চল নিয়ে দুইদেশের মধ্যে ৩টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
পাকিস্তান এবহং জাতিসংঘ কাশ্মিরী জনগণের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। কিন্তু নয়াদিল্লী এর বিপক্ষে।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীর নিয়ে তাদের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। দুই পক্ষই কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button