সংক্রমিত ৯৮ শতাংশই সমকামী বা উভকামী

মাঙ্কিপক্স নিয়ে ডব্লিউএইচও’র সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি সতর্কতা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গতকাল শনিবার ডব্লিউএইচওর জরুরি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন সংস্থাটির প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস।
মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের পেছনে রয়েছে মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৭৫ দেশে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচওর প্রধান। তিনি বলেন, ‘মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্যসতর্কতা হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি সারা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের।’
বৈশ্বিক স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি সতর্কতা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বোচ্চ সতর্কতা। এই মুহূর্তে করোনা ও পোলিও নির্মূল করার চলমান প্রচেষ্টার ক্ষেত্রেও সংস্থাটির একই সতর্কতা জারি রয়েছে।
উল্লেখ্য, এই ভাইরাসটি কিভাবে একে-অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে ত নিয়েও রয়েছে নানা মত। তবে বিশ্বে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে হওয়া সবচেয়ে বড় গবেষণা অনুসারে, মাঙ্কিপক্সের ৯৫ শতাংশ সংক্রমণ ছড়িয়েছে যৌন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে। এতে যৌনাঙ্গে একক ক্ষতের মতো নতুন ক্লিনিকাল লক্ষণগুলোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। মূলত মাঙ্কিপক্স নিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই গবেষণাটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা এই প্রাদুর্ভাবেকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করবেন কি না তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ে এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬টি দেশের ৫২৮ জন মাঙ্কিপক্স রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণার প্রথম লেখক জন থর্নহিল একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এটি জোর দিয়ে বলা গুরুত্বপূর্ণ যে, ঐতিহ্যগত অর্থে মাঙ্কিপক্স এমন কোনো যৌন সংক্রামক রোগ নয় যেটি যেকোনো ধরনের ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে, আমাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের বেশিরভাগ সংক্রমণ যৌন ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পর্কিত ছিল। প্রধানত যেসব পুরুষ অন্য পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছেন।’ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত ৯৮ শতাংশই সমকামী বা উভকামী পুরুষ। আক্রান্তদের ৪১ শতাংশের এইচআইভি ছিল এবং গড় বয়স ৩৮ বছর। মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত এসব মানুষের আগের তিন মাসে তাদের যৌন সঙ্গীর গড় সংখ্যা ছিল পাঁচ জন। এছাড়া ভাইরাসে সংক্রমিতদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার আগের মাসের মধ্যে সেক্স পার্টি বা সানাসের মতো সেক্স-অন-সাইট ভেন্যুতে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার পেছেনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন কার্যকলাপকে দায়ী করা হলেও গবেষকরা এক বিবৃতিতে জোর বলছেন, সংক্রামক এই ভাইরাসটি যেকোনো ঘনিষ্ঠ শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমেও, যেমন শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা এবং সম্ভাব্য পোশাক ও অন্যান্য পৃষ্ঠের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button