আর্থিক রাজধানীর মুকুট হাতছাড়া

প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্রেক্সিটের

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে দীর্ঘদিনের জোটবদ্ধ সম্পর্ক ছিন্ন করার খেসারত দিতে শুরু করেছে এ অঞ্চলের আর্থিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত লন্ডন। ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার পর এখন লন্ডনের ওপর এটির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও ব্রিটেনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প সময়ের জন্য লন্ডনকে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হলেও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক থেকে লাভবান হওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে তারা।

দীর্ঘ ৪৮ বছরের সম্পর্ক থেকে ব্রিটেনের চূড়ান্তভাবে বেরিয়ে আসার এক মাস পেরিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ব্রিটেন আরো স্পষ্ট করে বললে লন্ডনের ওপর যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, সেটিকে হার্ড ব্রেক্সিট বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এটির ফলে এখন ইইউর অনেক প্রতিষ্ঠান লন্ডন থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য অফিস নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে এতদিন ধরে লন্ডন যেভাবে আর্থিক রাজধানীর মুকুট নিজেদের দখলে রেখেছিল, এখন সেটি হাতছাড়া হতে শুরু করেছে।
যদিও আমেরিকান-ব্রিটিশ তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিটের গবেষকরা এখনই হার্ড ব্রেক্সিটের প্রভাবের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে তারা এটিও মনে করেন, আর্থিক রাজধানীর মুকুট হারানোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার ব্রাসেলসকে বোঝাতে সক্ষম হয়নি। ফলে একটি নীতিমালার মধ্যে থেকে এ শহরকেন্দ্রিক যে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার সুযোগ ছিল, সেটি কাজে লাগাতে পারেনি লন্ডন।
সিটি অব লন্ডন করপোরেশনের পলিসি চেয়ার ক্যাথেরিন ম্যাকগুইননেস মনে করেন, এখন পর্যন্ত ডেরিভেটিস এবং বৈদেশিক লেনদেনের মতো বিষয়গুলোতে দৈনিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ইউরোপের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় লন্ডন এগিয়ে রয়েছে। লন্ডন থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের সবার কাছে জানা ছিল যে, ব্রেক্সিট নিয়ে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক না কেন, এ চুক্তির ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ইউরোপের কেন্দ্রীয় এ বাণিজ্যিক এলাকা থেকে তাদের ব্যবসা সরিয়ে নেবে। তবে ব্যবসা সরিয়ে নিলেও সেটি লন্ডনের ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, ব্রেক্সিটের ফলে যেভাবে লন্ডন ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে বরং কম প্রতিষ্ঠান এখান থেকে সরে যাচ্ছে। ফলে আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতেও লন্ডন তার আগের মতো শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হবে। উপরন্তু লন্ডন দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।
বিষয়টি স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বলেন, কারণ এটিকে কেন্দ্র করে এখন প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও আর্থিক-প্রযুক্তির (ফিনটেক) বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। এছাড়া সবুজ অর্থায়নের পরিমাণও বাড়ছে। একই ধরনের কথা বলেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্ররু বেইলি। তিনি বলেন, গত মাসে ৭ হাজারের মতো চাকরি আমস্টারডাম, প্যারিস ও ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। কারণ এ সময়ে ৫০ হাজারের মতো চাকরি স্থানান্তরিত হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তবে লন্ডনকে ঘিরে প্রাক্কলন ও সম্ভাবনার যত কথাই বলা হোক না কেন, পরিসংখ্যানিক চিত্রে অন্য তথ্য উঠে আসছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত জানুয়ারিতে ইউরোনেক্সট আমস্টারডামসহ অন্য দুটি ডাচ শেয়ার মার্কেটে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ আগের মাসের অর্থাৎ ডিসেম্বরের তুলনায় চার গুণ বেড়েছে। এ মাসে এখানে দৈনিক গড়ে ৯২০ কোটি ইউরোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে লন্ডনে এ সময়ে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮৬০ কোটি ইউরোর মতো। তবে এটি আশ্চর্য হওয়ার মতো কোনো তথ্য নয় বলে মনে করেন ডাচ ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটস অথরিটির একজন মুখপাত্র। তিনি বলেন, ইউরোনেক্সট আমস্টারডামের সঙ্গে আমাদের এরই মধ্যে লেনদেনের একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলে লেনদেনের এ চিত্র আমাদের কাছে এখন যৌক্তিক মনে হচ্ছে।
ইইউর সঙ্গে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন সম্পর্কের মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর চ‚ড়ান্তভাবে ব্রেক্সিট কার্যকর হয়। এর ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি আর্থিক সেবার ওপর তার প্রভাব পড়তে শুরু করে। ১ জানুয়ারি ব্রাসেলসের সঙ্গে চূড়ান্ত এ বিচ্ছেদের প্রভাব পড়ে ইইউর পাসপোর্ট হারানোর মধ্য দিয়ে। এটির ফলে ইইউর একক বাজারে প্রবেশাধিকারের ওপর কড়াকড়ির মুখোমুখি হতে হয় ব্রিটেনকে। একই সঙ্গে ইইউর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের দিক থেকেও আগের সুযোগ-সুবিধা হারাতে হয়েছে তাদের।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button