লেবার পার্টি হারল কেন ?

Labourঅভাবনীয় অভিঘাতে ধসে পড়ল যুক্তরাজ্যের লেবার শিবির। সব জরিপ ও ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণিত করে শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টিকেই ক্ষমতায় বহাল রাখল ব্রিটিশরা। ২০১০ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েও যে কয়টি আসন ধরে রেখেছিল, এবার সেই শক্তিও হাতে থাকল না। কিন্তু কেন এমনটি হল? শেষ মুহূর্তে ভোটাররা কেন রক্ষণশীলতায় আস্থা রাখল? ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক বিশ্লেষণে ভুল নেতার ভুল কর্মসূচিতে লেবার পার্টির ভরাডুবি ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ড্যান হজেসের লেখা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে লেবার পার্টি জেতার কোনো চেষ্টা করেনি। তারা স্বপ্ন দেখেছে, কিন্তু বাস্তবায়নের কঠিন সংগ্রামমুখর পথে হাঁটেনি। নিজেদের উৎসর্গ করার মতো দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে পারেনি। ২০১০ সাল থেকেই দলটি ধারাবাহিকভাবে ভুল পথে হাঁটছে। লেবার পার্টির কেউ কেউ দলকে শ্রমসাধ্য পথে পরিচালিত করতে চেয়েছেন। সেই পথই ছিল দেশের নেতৃত্বের ভার গ্রহণের পথ। কিন্তু অধিকাংশই সেই দুর্গম পথের পরিবর্তে সহজতর রাস্তা খুঁজেছেন। যেসব আসনে বার বার যাওয়া হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় সেসব এলাকায় সফর হয়েছে হয়েছে বেশি।
গতবারের কথাই ধরা যাক। লেবার পার্টির দুই নেতার মধ্যে ব্রিটিশ জনগণের মতামত জরিপে যাকে জনপ্রিয় হিসেবে পাওয়া গেছে, তাকে নেতা বানানো হয়নি। ট্রেড ইউনিয়নের পছন্দের লোককে সামনে দাঁড় করানো হয়েছে। বলা হয়েছিল নেতাকে পেশাদার ও দক্ষ উপদেষ্টাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতে। কিন্তু তিনি পরামর্শ নিয়েছেন ব্যক্তিগত পছন্দনীয় ও আদর্শিক বন্ধুদের থেকে। এড মিলিব্যান্ডকে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, পূর্ববর্তী লেবার সরকারের ভুলগুলো স্বীকার করে বিশেষ করে তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বিরোধিতা করতে। কিন্তু তিনি সেসব ভুল নীতির উল্টো সাফাই গাইতে থাকলেন। অর্থনৈতিক ঘাটতি কমানোর সুস্পষ্ট প্রতিশ্র“তি দেয়ার পরামর্শ না মেনে এটাকে এমন বিমূর্ত করে উপস্থাপন করলেন যা জনসাধারণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিষয় মনে হয়েছে। সরকার পরিচালনার নির্দিষ্ট কর্মসূচি পেশ না করে মিলিব্যান্ড ধারাবাহিক স্লোগান আওড়াতে লাগলেন। ‘এক জাতি’, ‘উত্তম ব্রিটেন’, ‘নতুন প্রজন্ম’ ইত্যাদি অর্থহীন বাগাড়ম্বরে ভরে ছিল তার প্রচারণা। তিনি দলকে রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে নেয়ার কষ্ট না করে যেখানে যেভাবে সুবিধা পেয়েছেন সেভাবেই চালিয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক বৃহৎ জোট গঠনের একটা পথ খোলা রাখার দরকার ছিল। কিন্তু তিনি ৩৫ শতাংশ ভোটেই খুশি হতে চেয়েছিলেন।
এখন হয়ত মিলিব্যান্ড লেবার নেতা হিসেবে পদত্যাগ করছেন। কিন্তু ব্যর্থতার সমস্ত দায়ভার কি নিজের কাঁধে নিচ্ছেন? নাকি দলকেই দোষী করে যাচ্ছেন? এবার কি লেবার পার্টির বোধোদয় হবে ?

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button