বর্ণবাদের কারণে যুক্তরাজ্যে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বিদেশি চিকিৎসকরা
বৃটেনের চিকিৎসা পেশার এক শীর্ষ নেতা সম্প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, বর্ণবাদ ও অভিবাসনবিরোধী বক্তব্যের কারণে যুক্তরাজ্যে আসতে তে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বিদেশি চিকিসকরা। ব্রিটেনের মেডিকেল নেতাদের সংগঠন ‘একাডেমী অফ মেডিকেল রয়াল কলেজেস’–এর চেয়ার জ্যানেট ডিকসন বলেন, ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) থেকে বিদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা ক্রমশ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক ভাষ্য এবং বাড়তে থাকা বর্ণবাদ, যা একটি “শত্রুভাবাপন্ন পরিবেশ” তৈরি করেছে। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিদেশি স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন যুক্তরাজ্যকে একটি “অস্বাগত ও বর্ণবাদী” দেশ হিসেবে দেখছেন, যা এনএইচএস-এর ভবিষ্যৎকে গুরুতর ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
তার মতে, বিদেশী বংশোদ্ভূত কর্মীদের ছাড়া এনএইচএস “খুব সহজেই ভেঙে পড়তে পারে” এবং শিগগিরই এমন অবস্থা হতে পারে, যেখানে নিরাপদভাবে স্বাস্থ্যসেবা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীই আর থাকবে না।
এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন নতুন কর্মীসংক্রান্ত তথ্য বলছে, রেকর্ড সংখ্যক বিদেশি চিকিৎসক এনএইচএস ছেড়ে যাচ্ছেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে বিদেশ থেকে নিয়োগ প্রায় থেমে গেছে এবং নার্স ও ধাত্রীদের নতুন যোগদানের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল–এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে কর্মরত চিকিৎসকদের ৪২ শতাংশই বিদেশে যোগ্যতা অর্জন করেছেন, যা আন্তর্জাতিক কর্মীদের ওপর এনএইচএস-এর বাড়তে থাকা নির্ভরশীলতা স্পষ্ট করে।
ডিকসন বলেন, অভিবাসন নিয়ে শত্রুতামূলক রাজনৈতিক বক্তব্য, গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রচার ও সহকর্মীদের বর্ণবাদী আচরণ এবং রোগীদের আক্রমণাত্মক মনোভাব, সব মিলিয়ে বিদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, “আমার মনে হয় আমরা এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করছি যেখানে বার্তাটা হচ্ছে—‘বিদেশি মানেই খারাপ’। যেখানে মানুষ বলে, ‘আমাদের তোমাদের দরকার নেই, আমরা তোমাদের চাই না’, সেখানে কেউ কেনো যেতে চাইবে? এতে ব্রিটেনকে তাদের কাছে অস্বাগত ও বর্ণবাদী মনে হওয়া স্বাভাবিক।” তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কিছু বিদেশী বংশোদ্ভূত এনএইচএস কর্মী তাদের দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে অনিরাপদ মনে করছেন।
লন্ডনের হুইটিঙটন হেলথ্ এনএইচএস ট্রাস্ট-এর প্রধান নির্বাহী সেলিনা ডগলাসও বলেন, কর্মীরা ক্রমবর্ধমান বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত বিদেশি নার্সদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই কর্মীদের আমাদের হাসপাতালেই বর্ণবাদী গালাগালির শিকার হতে হচ্ছে। এমনকি টিউব স্টেশনে হাঁটতে গিয়ে আমার কর্মীদের ওপর থুতু ছিটানোর ঘটনাও ঘটেছে।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং রোগীদের সতর্ক করে বলেছেন, “এই দেশে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার আপনাকে কোনোভাবেই আমাদের কর্মীদের অপমান বা নির্যাতনের স্বাধীনতা দেয় না—কোনো কারণেই না।”
ডিকসন সরকারের সেই পরিকল্পনারও সমালোচনা করেন, যেখানে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ পদের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তার মতে, বৈশ্বিক পর্যায়ে চিকিৎসকের সংকটের সময় এমন সিদ্ধান্ত বিদেশি চিকিৎসকদের আরও নিরুৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, “যদি একটি দেশ আর স্বাগত মনে না হয়, মানুষ নিজেকে নিরাপদ না মনে করে আর একই সময়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড যদি তাদের দরজা আরও খুলে দেয়—তাহলে মানুষ চলে যাবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।” -আইসু বাইসার



