লন্ডনে জনসমাবেশ প্রতিরোধে নতুন আইন: ৬ জনের বেশী লোক জমায়েত হতে পারবে না

লন্ডনে গণসমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নতুন আইন জারি করেছে ব্রিটিশ সরকার। এই নতুন আইনের বিধি অনুসারে ৬ জনের বেশী লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে এ আইন জারি করা হয়েছে। সরকারী ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, মারাত্মক শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গ করোনাভাইরাসের ঘটনা ও বিস্তারের ফলে গণস্বাস্থ্যের প্রতি সৃষ্ট ভয়াবহ ও আসন্ন হুমকি প্রতিরোধে নতুন আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, জরুরী অবস্থাকালে কোন ব্যক্তি কোন পাবলিক কিংবা প্রাইভেট জায়গায় অনুষ্ঠিত কোন সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। অর্থাৎ, আউটডোরে বা বাইরে ৬ জনের বেশী এবং ইনডোরে বা গৃহাভ্যন্তরে ২ বা এর অধিক সংখ্যক লোক জমায়েত হতে পারবেন না। এ ধরণের পদক্ষেপ ধারাবাহিক বিক্ষোভে বিক্ষুদ্ধ রাজধানী লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে সব ‘গুন্ডা’ ওয়ার মেমোরিয়ালসমূহে হামলা করছে, তাদের দমন ও পুলিশদের সুরক্ষা প্রদানসহ সকল পন্থা বিবেচনা করছে বলে সরকারের ঘোষণার পর এই নতুন আইন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রীতি প্যাটেল হাউস অব কমন্সে বলেন, তিনি ফার রাইট থাগস অর্থাৎ উগ্র ডানপন্থী গুন্ডাদের কর্মকান্ডে দুঃখিত ও পীড়িত ,যারা সপ্তাহান্তে মূর্তিগুলো রক্ষার ‘তথাকথিত মিশনে’ লন্ডনে এসেছিলো। দেশের ঐতিহ্য রক্ষা দূরের কথা শনিবারে ওয়েস্টমিনিস্টারের পাল্টা বিক্ষোভ সমাবেশে ‘মার্কামারা বর্ণবাদী’ ও গুন্ডারা উপস্থিত হয় এবং ঐসব মূল্যবোধকে ধ্বংস ও ক্ষুন্ন করার জন্য সম্ভব সব কিছু তারা করে। আমাদের সমাজে তাদের অসুস্থ আচরণ ও ঘৃণার কোন স্থান নেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘গুন্ডামী কেনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আমাদের ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকর্তাদের সমাজের ‘পাঞ্চ ব্যাগ’ অর্থাৎ ঘুষি অনুশীলনের ব্যাগ হতে দিতে পারি না। আমি বীরদের স্মৃতিসৌধে ভাঙ্গচুর ও অসম্মানকে মেনে নিতে পারি না।
তাই এই সরকার প্রস্তাবিত ‘যুদ্ধ স্মৃতিসৌধসমূহ অসম্মান’ সংক্রান্ত আইনসহ আমাদের জাতীয় ত্যাগ ও গর্বের এসব প্রতীকে হামলার চেষ্টাকারীদের প্রতিরোধে সকল পন্থা অবলম্বনের বিষয় বিবেচনা করছে।
ব্রিটিশ এমপিদের বলা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাজ্যব্যাপী ২ লাখ ১০ হাজারেরও বেশী বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং কম পক্ষে ১৬০টি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, অবশ্য অধিকাংশ বিক্ষোভই ছিলো শান্তিপূর্ণ। কিন্তু ওয়েস্টমিনিস্টারের সমবেত হওয়া ২ হাজার পাল্টা প্রতিবাদকারী সারাদিন ‘নোংরা’ ঘটনার জন্ম দেয় এবং ‘সহিংসতা উসকে’দেয়।
মিসেস প্রীতি প্যাটেল বলেন, ২৮০ জনকে গ্রেফতারের সময় সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ অফিসার আহত হয়েছেন, একইভাবে আহত হয়েছে ৩টি ঘোড়া ও একটি পুলিশ কুকুর। আজ আমার সহজ বার্তাটি হচ্ছে সকল কর্মকান্ডেরই পরিণতি আছে। আমি চাই, সহিংসতা ও অপরাধের জন্য ঐসব দুষ্ট ব্যক্তিরা জবাবদিহিতার আওতায় আসুক, যাতে তারা অপকর্মের জন্য নিজেদের আটক ও বিচারের সম্মুখীন হয়েছে দেখতে পাক। এ বিষয়ে লেবার পার্টির ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিক থমাস সাইমন্ডস বলেন, লেবার পার্টি সরকারের প্রস্তাবসমূহ পরীক্ষা করে দেখাবে।
তিনি আরো বলেন, এই সপ্তাহান্তে যারা সহিংসতার উদেশ্য নিয়ে আসে তাদের সাথে ‘ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার্স’ প্রচারকারীদের বৈধ দাবির তুলনার চেষ্টা করা উচিত নয়, যারা এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে, বর্ণবাদ ও অসমতা এখানে যুক্তরাজ্যে এবং বিশ্বজুড়ে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, এখন তো পদক্ষেপ গ্রহণের সময়।বরিস জনসনের আরেকটি পর্যালোচনার ঘোষনায় আবশ্যকীয় বিষয়ে মারাত্মক ঘাটতি লক্ষণীয়। তিনি কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী (বেইম) লোকজনের প্রতি ফৌজদারি বিচার পদ্ধতীতে আচরণের বিষয়ে ল্যামি রিভিউ-এর সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়ার এবং উইন্ডরাশ থেকে শিক্ষা গ্রহনের আহবান জানান।
মিসেস প্যাটেল বলেন, নতুন ঘোষিত কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে বিশেষভাবে ‘বেইম’ শ্রেণীর জনগণের বক্তব্য কার্যকরভাবে তুলে ধরা এবং ইতোমধ্যে সরকারের কাছে প্রদত্ত সুপারিশসমূহ গঠন করা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button