নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ

Play২০১০ সালের পর আবারো বাংলাওয়াশের শঙ্কায় কিউইরা। বৃহস্পতিবার ৩ ম্যাচের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪০ রানের জয়ে ২-০ এগিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। এই নিয়ে টানা দুইবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। সিরিজ নিশ্চিত হওয়ায় এখন লাল-সবুজদের সামনে একমাত্র লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করা।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারায় ৪০ রানের ব্যবধানে। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড ৪-০ তে সিরিজ হেরে বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ তথা বাংলাওয়াশ হয়েছিলো। এবার আবার তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে সেটা প্রায় নিশ্চিত! কেননা নিউজিল্যান্ড যেভাবে খেলছে এতে করে বাংলাদেশের টাইগারদের হারনো অসম্ভব।
বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং নেয়। মুশফিকের সিদ্ধান্তে ক্রিকেট  বোদ্ধারা কিছুটা দিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। শুরুটা ভালো করেও শেষ পর্যন্ত খুব বড় স্কোর হয়নি টাইগারদের। নিউজিল্যান্ডের সামনে লক্ষ্য নির্ধারণ হয় ২৪৮ রানের।
লক্ষ্যের বিপরীতে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড নিয়মিত বিরতীতে উইকেট হারাতে থাকে। রস টেলর-ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ও কোরি অ্যান্ডারসন-রস টেলরের দুটি ছোট জুটিকে বড় হতে দেননি মমিনুল-মাশরাফি। রস টেলর-ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম জুটির ম্যাককুলামকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সাজ ঘরে ফেরান মমিনুল হক। অধিনায়ক মুশফিকুর বল তুলে দিলে প্রথম ওভারে তেমন কিছু না করতে পারলেও তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে এ উইকেট শিকার করেন তিনি।
অবশ্য সবচেয়ে বড় কাজটি করেন মাশরাফি। ভয়ংঙ্কর হয়ে উঠা  কোরি অ্যান্ডারসনকে আউট করে স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরান প্রায় দশ মাস পর দলে ফেরা মাশরাফি। তবে মাশরাফির এ উইকেটটির পেছনের মূল কারিগর মুশফিক। দূদান্ত এক ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন কোরি অ্যান্ডারসন।
টেলর আউট হওয়ার পর পরই কিউই দুই ব্যটসম্যানের ভুল বোঝ-বুঝিতে রান আউটের শিকার হন টম লাথান। টম লাথান কোন রান সংগ্রহ করতে পারেনি।
টম লাথামকে আউট করে যেনো হঠাৎ বিধ্বংসী রূপে আর্বিভূত হলেন  সোহাগ গাজী। প্রথমে জেমশ নিশানকে নাঈম ইসলামের ক্যাচ বানিয়ে সাজ ঘরে ফেরান। আউট হওয়ার আগে নিশান ৮ রান সংগ্রহ করেন। কিউদের ছোট দুটি গুরুত্বপূর্ণ জটিতে অবদান রাখা রস টেলরকে ফেরান টেস্ট ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা এ স্পিনার।
৮২ বল খেলে রস টেলর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নিলে জয় বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়ে যায়।
তবে ৪৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলো মাশরাফি-রাজ্জাক-গাজীরা। মাশরাফির করা দ্বিতীয় ওভারেরই ফিরে যান ওপেনার হামিশ রাদারফোর্ড। এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অ্যান্টন ভেভচিচ ও গ্র্যান্ট ইলয়েন্ট দুজন মিলে ছোট ৪০ রানের জুটি গড়লেও চাপ থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। এবার আঘাত হানেন সোহাগ গাজী। অ্যান্টন ভেভচিচকে রিটার্ন ক্যাচে ফিরিয়ে দেন তিনি।
সাজঘরে ফেরার আগে ৪৪ বল খেলে করেন ১৯ রান। ঠিক তার পরের ওভারে আবার আঘাত আনেন আরেক স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। গ্র্যান্ট ইলিয়েন্টকে ১৪ রানের মাথায় আউট করেন এ স্পিনার।
বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নেন মাশরাফি ও  সোহাগ গাজী ৩টি। মমিনুল হক ২টি এবং আব্দুর রাজ্জাক একটি উইকেট নেন।
এর আগে বাংলাদেশ ৪৯ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান সংগ্রহ করে অতিথিরা। ওপেনার তামিম ইকবাল ও অভিষিক্ত শামসুর রহমানের মিলে প্রথম উইকেট জুটিতে ৬৩ রান সংগ্রহ করলে ও শেষ পর্যন্ত ভালো স্কোর দাড় করানো সম্ভব হয়নি লাল-সবুজদের।
ওপেনার এনামুল হকের ব্যাটিং ব্যর্থতার দলে সুযোগ পান শামসুর রহমান। ১০৮তম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেক হচ্ছে শামসুর রহমানের। কিন্তু ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেনি এ ক্রিকেটার। ওয়ানডে ম্যাচে টেস্ট আমেজে ব্যাটিং করা শামসুর আউট হন মাত্র ২৫ রানে। এই রান করতে তিনি খেলেন ৫৪ বল। শামসুর আউট হলে তামিম-মমিনুল মিলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন।
প্রথম ওয়ানডেতে রান আউটের শিকার মমিনুল দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো শুরু করেও শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল শর্ট সিলেকশনে আউট হন। কোরি আন্ডারসনের বলে নাথান ম্যাককুলামকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ছোট-খাটো গড়নের এ ক্রিকেটার। মমিনুল আউট হওয়ার পর তামিম-মুশফিক মিলে রানের চাকা কিছুটা সচল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের ২৫তম অর্ধশতক পেয়ে দলের প্রযোজনে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই করতে পারেনি তামিম। ৮৬ বল খেলে ৫৮ রান করেন তিনি ৫ চার ও ১ ছয়ে।
মুশফিক-নাঈম-নাসিরের দ্রুত আউটে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। শেষ দিকে রিয়াদ-গাজীর জুটিতে ২৪৭ রানের সাদামাটা সংগ্রহ দাড় করান। সোহাগ গাজী ২৪ বলে ২৬ এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৬ বলে ২১ রান করেন।
জেমস নিশামের বলে বিশাল ছক্কা হাকিয়ে তার পরের বলেই উইকেটরক্ষক টম লাথামকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত ২ ছয় এবং ১ চারে করেন ৩১ রান।
মুশফিক আউট হওয়ার পর পরই একই পথ ধরেন প্রথম ওয়ানডেতে ভালো খেলা নাঈম ইসলাম। কাইল মিলসের বলে উইকেট কিপারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত করেন ১৬ রান।
নাসির হোসেন ৩ রান করে জেমস নিশামের বলে মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাককুলামকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছে জেমস নিশাম ও কোরি অ্যান্ডরসন ৪টি করে উইকেট নেন। এছাড়া কাইল মিলস ও নাথান ম্যাককুলাম একটি করে উইকেট নেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button