পারিবারিক সম্পদ বেড়েছে ৯০ হাজার কোটি পাউন্ড

মহামারীতে বেশির ভাগ ব্রিটিশের সম্পদ বেড়েছে

সরকারি প্রণোদনা ও মজুরি ভর্তুকির কারণে আয়েও খুব বেশি প্রভাব পড়েনি

কভিড-১৯ মহামারীতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় চলাচলে। ব্যাহত হয় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কমে যায় পরিবারের আনুষঙ্গিক ব্যয়। এদিকে সরকারি প্রণোদনা ও মজুরি ভর্তুকির কারণে ব্রিটিশদের আয়েও খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। উল্টো বেড়ে গেছে বাড়ির দামও। ফলে মহামারীতে বেশির ভাগ ব্রিটিশের সম্পদ বেড়েছে। নতুন একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রিটেনে পারিবারিক সম্পদ বেড়েছে ৯০ হাজার কোটি পাউন্ড। যদিও এ সম্পদের বেশির ভাগই গেছে ধনী পরিবারগুলোর হাতে।

ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, মহামারীতে তিন শতাধিক বছরের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকোচনের পরও পারিবারিক সম্পদের ক্ষেত্রে এমন বৃদ্ধি দেখল যুক্তরাজ্য। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্রেডিট কার্ড বাদ দিয়ে ব্রিটিশদের পারিবারিক ঋণ প্রায় ১ হাজার কোটি পাউন্ড কমে গেছে। এ সময়ে গড়ে বাড়ির দাম ৮ শতাংশ বেড়েছে। আর মহামারীতে ব্যয় কমে যাওয়ায় ব্রিটিশদের মোট সঞ্চয় বেড়েছে ২০ হাজার কোটি পাউন্ড।
স্ট্যান্ডার্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের অংশীদারিত্বে প্রকাশিত রেজল্যুশন ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মহামারীতে যুক্তরাজ্যের মোট সম্পদের পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি পাউন্ড বেড়ে প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি পাউন্ডে পৌঁছেছে।
ফাউন্ডেশনের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ জ্যাক লেসলি বলেন, লকডাউনের সময় ব্যয় করার সুযোগ না থাকায় অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে অর্থ সঞ্চয় করে। তাছাড়া বিধিনিষেধে কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ার পরও বাড়ির দাম বেড়েছে।
লেসলি একে ‘সম্ভাব্য সম্পদের তুমুল বৃদ্ধি’ বলেছেন। যুক্তরাজ্যের সম্পদের মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হয় সম্পত্তির দাম। যেখানে আগের চারটি মন্দা চলাকালে বাড়ির দাম গড়ে ২২ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান বেড়েছে। বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত ও অতিধনী পরিবারগুলো বেশি সঞ্চয় করতে পেরেছে। তবে স্বল্প সম্পদ কিংবা সম্পদ না থাকা ব্রিটিশ পরিবারগুলো মহামারীতে টিকে থাকার লড়াই করেছে।
মধ্যম মানের সম্পদ থাকা পরিবারগুলোর প্রাপ্তবয়স্কদের গড়ে মোট সম্পদ ৯ শতাংশ কিংবা ৭ হাজার ৮০০ পাউন্ড বেড়ে ৮০ হাজার ৫০০ পাউন্ডে পৌঁছেছে। আর ধনী ১০ শতাংশ পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৫০ হাজার পাউন্ডেরও বেশি বেড়েছে। অনদিকে মহামারীতে দরিদ্রতম ৩০ শতাংশ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে গড়ে সম্পদ বেড়েছে মাত্র ৮৬ পাউন্ড।
রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন বলেছে, সংকট চলাকালীন গড় পারিবারিক সম্পদ ও ধনী ১০ শতাংশ পরিবারের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান বেড়ে ৪৪ হাজার পাউন্ডে পৌঁছেছে। অন্যদিকে গড় ও দরিদ্রতম ১০ শতাংশ পরিবারের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান বেড়ে ৭ হাজার পাউন্ডে পৌঁছেছে।
লেসলি বলেন, সম্পদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সব পরিবার উপকৃত হয়নি। বর্তমানে নীতিনির্ধারকরা অনেক কঠোর সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হচ্ছেন। দাবি উঠেছে, বেকারত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দেয়া থেকে শুরু করে সামাজিক যত্নের একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলা। একবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের ধনসম্পদ যে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করছে তা উপেক্ষা করার সামর্থ্য নেই নীতিনির্ধারকদের।
ফাউন্ডেশন বলেছে, সামাজিক যত্নের জন্য টেকসই মডেল বিবেচনার করার ক্ষেত্রে সম্পদ কর বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সমীক্ষায় মতামত জরিপে উঠে আসা বিষয়গুলো অর্থনীতিতে ঝুঁকিও বাড়িয়েছে। মহামারীতে সঞ্চয় করা কেবল ১৪ শতাংশ ব্রিটিশ পরিবার জানিয়েছে, তারা খুব সম্ভবত সঞ্চয়কৃত অর্থ ব্যয় করবে। অন্যদিকে ৩৫ শতাংশ পরিবার মহামারীর পরও অতিরিক্ত সঞ্চয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কারণ এমন সঞ্চয়ে তারা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। তবে এমনটি হলে অর্থনীতিতে নগদ অর্থের ঘাটতি তৈরি হবে। ফলে দীর্ঘায়িত হবে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button