রাজকীয় সাক্ষাৎকারে বোমা ফাটালেন মেগান

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ‘বোমা ফাটিয়েছেন’ ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছোট পুত্রবধূ মেগান মার্কেল। তিনি বলেছেন, তার সন্তানের শরীরের ত্বক ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। একইসঙ্গে দেখতে কালো হওয়ায় তার সন্তানকে ‘প্রিন্স’ বা ‘রাজপুত্র’ উপাধি দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। স্থানীয় সময় রোববার (৭ মার্চ) রাতে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস-এ তার এই সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়।

সাক্ষাৎকারে মেগান মার্কেল বলেন, ‘তার সন্তান আর্চি জন্ম নেওয়ার আগেই তার গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। আর তাদের এই ‘দুঃশ্চিন্তাই’ স্পষ্ট করে দেয় যে, তার ছেলেকে কেন প্রিন্স উপাধি দেওয়া হয়নি।’ মেগানের মা কৃষ্ণাঙ্গ এবং বাবা ছিলেন শেতাঙ্গ। ২০১৮ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারে বিয়ের আগপর্যন্ত তিনি খুবই সাধারণ এবং সাদাসিধে মানুষ ছিলেন জানিয়ে মেগান বলেন, বিয়ের পর (রাজপরিবারের) কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহযোগিতা না পেয়ে নিজের ক্ষতি করার, এমনকি আত্মহত্যা করার কথাও চিন্তা করতে শুরু করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, ‘(আমার গর্ভে সন্তান আসার পর) তারা কেউই তাকে প্রিন্স বা প্রিন্সেস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছিলেন না। এমনকি ছেলে হবে না মেয়ে; রাজপরিবারের কেউ এটাও জানতেন না। অর্থাৎ এটা প্রটোকলের বাইরে এবং বুঝতে পারি- জন্মের পর আমার সন্তান (প্রটোকল অনুযায়ী) নিরাপত্তা পেতে যাচ্ছে না।’
‘‘আমার প্রেগন্যান্সির সবগুলো মাসজুড়ে এই একই পরিস্থিতি চলছিল। অনাগত সন্তানের বিষয়ে ভেতরে ভেতরে কী কী কথাবার্তা চলছে সেগুলোও আমরা শুনতে পারছিলাম- ‘তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হবে না, রাজপুত্র বা রাজকুমারী উপাধিও দেওয়া হবে না’। এমনকি আমার সন্তানের গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে- সে বিষয়েও আমাদের পেছনে তাদেরকে আলোচনা করতে শুনতে পেতাম।’’ অবশ্য এধরনের কথাবার্তা কারা বলেছে বা সন্তানের গায়ের রং নিয়ে উদ্বেগ কারা প্রকাশ করেছে- সে বিষয়টি প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান মেগান।
এর আগে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেল। ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্য অনেক আগেই রাজকোষ থেকে ভাতা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে হ্যারি-মেগান দম্পতি ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব আর না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্বাধীন জীবনযাপন করতে তারা রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমানে এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।
সাক্ষাৎকারে মেগান মার্কেলের স্বামী এবং ব্রিটিশ রাজপুত্র প্রিন্স হ্যারি বলেন, (পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে) বোঝাপড়ার অভাবের কারণেই রাজপরিবার ছেড়েছেন তিনি। এছাড়া ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নিয়েও দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। আর এটাও রাজপরিবার ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলতে ১৯৯৭ সালে তার মা ডায়ানার মৃত্যুর বিষয়ে ইঙ্গিত করেন প্রিন্স হ্যারি। তিনি বলেন, তিনি তার দাদি অর্থাৎ বর্তমান ব্রিটিশ রানিকে দোষারোপ করতে চান না। কারণ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে তিনি অনেক সম্মান করেন। যদিও তার বাবা প্রিন্স চার্লস তার (হ্যারি) ফোন রিসিভ করা বন্ধ করে দিয়েছেন।
হ্যারি বলেন, ‘আমার দাদি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে তিনবার কথা বলেছি আমি। আর বাবা ফোন রিসিভ বন্ধ করার আগে দুইবার কথা বলেছি। তখন তিনি (প্রিন্স চার্লস) এসব কিছুই আমার কাছে লিখিত আকারে চেয়েছিলেন।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে এই যুগল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর ২০১৯ সালের মে মাসে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন মেগান। পরে তার নাম রাখা হয় আর্চি। বর্তমানে তার বয়স ১৯ মাস। সম্প্রতি গর্ভে দ্বিতীয় সন্তান ধারণের ঘোষণা দেন মেগান মার্কেল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button