যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেল অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেই আগামী সপ্তাহের সোমবার থেকে দেশটিতে এ ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) এ ভ্যাকসিন দেশটিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আগেই বলেছেন, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদন পাওয়ার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টার্নিং পয়েন্ট’। কারণ, ফাইজার-বায়োএনটেকের তুলনায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রদান অনেক বেশি সহজ হবে। এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচির ব্যাপক সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হল, যার লক্ষ্য হবে মানুষের জীবনকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, ফাইজার এবং অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দিয়ে দেশের সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তিনি এই পরিস্থিতিকে ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে ডিসেম্বরের শুরুতে যুক্তরাজ্যে ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার পর সেখানে ইতোমধ্যে ছয় লাখ মানুষকে সেই টিকা দেয়া হয়েছে। তবে তাদের ভ্যাকসিন মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই সংরক্ষণ করা যাব। ফাইজারের মতো অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনেরও দুটি করে ডোজ নিতে হবে। ফাইজারের ক্ষেত্রে দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান তিন সপ্তাহ। অক্সফোর্ডের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান চার সপ্তাহ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। যুক্তরাজ্য সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজের আগাম অর্ডার করে রেখেছে। যা দিয়ে ৫ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।
শিম্পাঞ্জিদের সংক্রমিত করতে পারে এমন একটি সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের ভাইরাসের মধ্যে জিনগত পরির্তন এনে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে এটি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে এবং এর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের মূল নকশার একটি অংশ, যা কিনা ‘স্পাইক প্রোটিন’ নামে পরিচিত। যখনি এই মূল নকশাটিকে শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখনি সেটি মানবদেহে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে শুরু করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন এটিকে একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে যখন ঐ ব্যক্তি আসল ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, তখন তার শরীর আগে থেকে জানবে যে কীভাবে এই ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা যায়।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, ভারতে এই ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক সংস্থা সেরাম ইন্সটিটিউটকে ছাড়পত্র দিতে ড্রাগ কন্ট্রোলার অফ ভারতের সাবজেক্ট এক্সপার্ট গ্রুপ বৈঠকে বসছেন। দ্রুত ভারতেও এই প্রতিষেধককে ছাড়পত্র দেয়া হবে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় এই ভ্যাকসিনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত ঘটনা ঘটেনি। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ১৪ দিন পর্যন্ত কোনও স্বেচ্ছাসেবককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। বরং করোনা রুখতে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে এই ভ্যাকসিন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button