প্রতিযোগিতা এখন এগিয়ে যাওয়ার নয়

টিকে থাকার লড়াইয়ে এয়ারবাস-বোয়িং

উড়োজাহাজ নির্মাণ শিল্পে ইউরোপীয় কোম্পানি এয়ারবাস ও মার্কিন কোম্পানি বোয়িংয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা কয়েক দশকের। কে সবচেয়ে বড় জাম্বো জেট তৈরি করতে পারে কিংবা প্রতি বছর বিক্রির দিক থেকে কে কাকে টেক্কা দিতে পারে, এতদিন প্রতিযোগিতার মূল বিষয় ছিল এগুলোই। কিন্তু বিশ্বের প্রভাবশালী দুই উড়োজাহাজ নির্মাতার মধ্যকার প্রতিযোগিতা আজ ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। আর তা হলো, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তার ধাক্কা সামাল দিয়ে কে কত ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক ভ্রমণ খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। আকাশপথে যাত্রী চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে আকাশসেবা সংস্থাগুলো। নতুন উড়োজাহাজ কেনার পয়সা নেই তাদের কাছে। এতে উড়োজাহাজ নির্মাতাদের আয়েও ধস নেমেছে।

নতুন উড়োজাহাজের চাহিদা নেই। তাই নতুন কার্যাদেশ আসাও বন্ধ। এ অবস্থায় উড়োজাহাজ নির্মাতারা দুটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রথমত, আয় কমে যাওয়ায় এখন তাদের ব্যয়ের লাগামও টেনে ধরতে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, করোনা সংকটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো চালিয়ে যাওয়া এবং সংকট কেটে গেলে দৃঢ়ভাবে ফিরে আসার জন্য নগদ অর্থের সুরক্ষাও নিশ্চিত করতে হচ্ছে তাদের।
এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের মতো কোম্পানির জন্য এ দুটি বিষয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা বেশ কঠিন। প্রথমে আসা যাক ব্যয়সংকোচনের প্রসঙ্গে। দুই কোম্পানি মিলিয়ে কাজ করেন প্রায় তিন লাখ কর্মী। এত বিশাল কর্মী বাহিনী থাকলে ব্যয় কমানোটা একটু কঠিনই। আরেকটি বিষয়, কোম্পানি দুটি যে ধরনের উড়োজাহাজ বিক্রি করে, সেগুলো তৈরি হতে সাধারণত বছরখানেক লেগে যায়। ফলে সারা বছর উড়োজাহাজ নির্মাণে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করার পর সেগুলো অবিক্রীত থেকে গেলে তা কোম্পানির জন্য পীড়াদায়ক বৈকি।
বোয়িং এরই মধ্যে উড়োজাহাজ নির্মাণে প্রায় ৫৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে, যেগুলো বর্তমানে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এয়ারবাসের ক্ষেত্রে অংকটি ৫২০ কোটি ডলার। যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতি তত খারাপ হচ্ছে। কারণ নতুন করে করোনা সংক্রমণের জোয়ার তৈরি হওয়ায় বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
সংকট মোকাবেলায় এয়ারবাস ও বোয়িং উভয়েই পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারা উৎপাদন ব্যাপক পরিমাণে কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ব্যয়সংকোচনের জন্য কর্মী ছাঁটাই ও গবেষণা ব্যয় কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া তারা ক্রেতাদের সঙ্গে ডেলিভারি শিডিউল পিছিয়ে দেয়া, প্রতিশ্রুত কার্যাদেশ প্রত্যাহার না করার মতো জটিল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
উভয় কোম্পানিই তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। কেবল এয়ারবাসই উৎপাদন ৪০ শতাংশ কমিয়েছে। তার পরও দুটি কোম্পানিই আশঙ্কায় রয়েছে, সামনের দিনগুলোয় তারা যেসব জেট বিমান তৈরি করবে, সেগুলো কেনার সক্ষমতা আকাশসেবা সংস্থাগুলোর থাকবে কিনা। কারণ মহামারী কবে পুরোপুরি নির্মূল হবে আর কবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে আকাশসেবা কোম্পানিগুলোর পূর্ণ কার্যক্রমে ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
বিশেষ করে দূরপাল্লায় যাত্রী পরিবহন কবে নাগাদ চালু করা যাবে, সে বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। আর দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন চালু না হওয়া পর্যন্ত জাম্বো জেটের মতো বড় উড়োজাহাজগুলোর চাহিদায়ও গতি আসবে না। বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই বোয়িং ও এয়ারবাসের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button