ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা, ট্রাক থেকে ৬৪ বাংলাদেশি আটক

করোনার মধ্যে সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বন্ধ নেই অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত দেশ নর্থ মেসিডোনিয়ায় গ্রিস সীমান্তবর্তী একটি হাইওয়ে থেকে ৬৪ অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
নর্থ মেসিডোনিয়ার পুলিশের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার নিয়মিত টহলের সময় ৬৪ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়। তাদের সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। গ্রিসের সঙ্গে দেশটির সীমান্তের কাছাকাছি একটি মহাসড়ক থেকে তাদের আটক করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জুন) এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় নর্থ মেসিডোনিয়ার পুলিশ। তবে আটক হওয়া অভিবাসীদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি। জানানো হয় আটক অভিবাসীদের সীমান্তের কাছে গেভগেলিজা নামক একটি শহরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের গ্রিসে ফেরত পাঠানো হবে।

পুলিশ জানায়, তথাকথিত বলকান মাইগ্রেশন রুটটি ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, মেসিডোনিয়ার সঙ্গে গ্রিসের বর্ডার এ বছরের জানুয়ারি থেকে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। তারপরও সীমান্ত এলাকার পাচারের নেটওয়ার্কগুলি চালু রয়েছে। নর্থ মেসিডোনিয়া পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আটক অভিবাসীদের সীমান্তের কাছে গেভেগেলিজা নামে একটি শহরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে তাদের বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
২০১৮ সালের জুন মাসে প্রতিবেশি গ্রিসের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধের মীমাংসা হওয়ার পর মেসিডোনিয়া ও গ্রিসের মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তির মাধ্যমে মেসিডোনিয়ার নতুন নাম হয় ‘রিপাবলিক অব নর্থ মেসিডোনিয়া’। নাম পরিবর্তনের ফলে নর্থ মেসিডোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে এবং নেটো জোটে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়।
তার আগে পর্যন্ত গ্রিসের আপত্তির কারণে তারা ইইউ বা নেটোর সদস্য হতে পারছিল না। সাবেক ইয়োগোশ্লাভিয়া ভেঙে যখন মেসিডোনিয়া আলাদা রাষ্ট্র হয়, তখন থেকেই নাম নিয়ে তাদের সঙ্গে গ্রিসের তীব্র বিরোধ চলছে।
গ্রিস এ কারণে মেসিডোনিয়া নামের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিল যে তাদের উত্তরাঞ্চলীয় একটি রাজ্যের নামও মেসিডোনিয়া। একই নামের কারণে সেখানে সীমানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা ছিল।
প্রতিবছরই বহু মানুষ উন্নত জীবনের আশায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই অবৈধ পথে পাড়ি জমাচ্ছেন ইউরোপীয় দেশগুলোতে। মাত্র মাসখানেক আগেই অবৈধভাবে ইউরোপ যাওয়ার পথে লিবিয়ায় পাচারকারীদের হাতে প্রাণ হারান ২৬ বাংলাদেশি।
ভয়ঙ্কর সেই ঘটনার বর্ণনায় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে কাজের সন্ধানে ত্রিপলি শহরে আসার পথে তিনিসহ প্রায় অর্ধশত অভিবাসী মিজদা শহরে মুক্তিপণের জন্য দুষ্কৃতিকারীদের হাতে জিম্মি হন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন বাংলাদেশি, বাকিরা আফ্রিকান। জিম্মি অবস্থায় তাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন করার পাশাপাশি অতিরিক্ত টাকা দাবি করা হয়।
এ নিয়ে ঝামেলা হলে আফ্রিকানের মধ্যে একজন ওই পাচারকারীদের নেতাকে মেরে ফেলে। তার প্রতিশোধ নিতে নিহত পাচারকারীর পরিবার এবং বাকি পাচারকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে এক রুমের মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে ৩০ জন মারা যায়, যাদের ২৬ জনই বাংলাদেশি। বাকি চারজন আফ্রিকান। এছাড়া, আরও ১১ জন বাংলাদেশি আহত হন। এ ঘটনার পর বিশ্বে আবারও আলোচনায় উঠে আসে অবৈধ অভিবাসন সমস্যাটি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button