ফারলো স্কীম

ব্রিটিশ সরকার ১ কোটি ৭ লাখ লোকের মজুরী পরিশোধ করছে

ব্রিটিশ সরকার বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারী ও আত্মকর্মসংস্হানকৃত লোকজনের মজুরী প্রদানের ক্ষেত্রে অবদান রাখছে ফারলো স্কীম হিসেবে পরিচিত সাপোর্ট স্কীমের মাধ্যমে। নতুন সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে এধরনের লোকের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশী। গতকাল বুধবার ট্রেজারী জানায়, ১০ লাখ প্রতিষ্ঠান মালিক অর্থাৎ নিয়োগদাতা তাদের ৮৪ লাখ শ্রমিকের বেতন ব্যয় নির্বাহের জন্য করোনাভাইরাস জব রিটেনশন স্কীম অর্থাৎ করোনাভাইরাস মহামারিকালীন চাকুরী রক্ষন পরিকল্পনার মাধ্যমে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড দাবি করেছেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত আরো ৪ লাখ শ্রমিক ফারলোতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

এছাড়া আত্মসংস্হানকৃত শ্রমিকদের জন্য অপর একটি আলাদা স্কীমের অধীনে ৬.৮ বিলিয়ন পাউন্ড দাবি করা হয়েছে, যা ২৩ লাখ লোককে সহায়তা প্রদান করেছে। অপরদিকে ব্যাংকসমূহ তিনটি আলাদা রাষ্ট্র-সমর্থিত ঋণদান স্কীমের আওতায় ২৭ বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ প্রদান করেছে। সব মিলিয়ে সরকার দেশের কর্মজীবীদের এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৭ লাখ শ্রমিক ও আত্মকর্মসংস্হানকৃত লোকজনের মজুরী প্রদান করছে।
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ব্রিটিশ চ্যান্সেলর এই মর্মে ঘোষনা প্রদান করতে যাচ্ছেন যে, সরকার আগামী মাসসমূহে নতুন আবেদনকারীদের জন্য তার অর্থনৈতিক কর্মসূচীগুলোর সমাপ্তি টানতে স্কীমটি বন্ধ করতে চাইছে।
মিঃ সুনাক চলতি মাসের শুরুতে বলেন যে, তিনি অক্টোবরের শেষভাগ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য ফারলো স্কীমের (কর্মহীন বসে থাকা শ্রমিকদের মজুরী সহায়তা স্কীম) মেয়াদ বর্ধিত করবেন, যাতে চাকুরীদাতা কর্তৃক মজুরী পরিশোধ এবং আগামী আগষ্টের শুরু থেকে খন্ডকালীন কাজে ফেরা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় সহায়তা প্রদান করা যায়। চ্যান্সেলর আগামীকাল শুক্রবার নাগাদ এই অবদান বা সহায়তা সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্যাখা প্রদানের কথা।
জানা গেছে, ট্রেজারীর পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে কোম্পানীগুলোতে আর কোন ফারলো কর্মচারী অন্তর্ভুক্তকরণ থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা থাকবে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে, যে সব শ্রমিক অন্যত্র পূর্নসময় দিচ্ছেন তাদেরকে ফারলো স্কীমে রাখা থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিরত রাখা এবং রাষ্ট্র কিছুটা মজুরী বিল নিচ্ছে এমন খন্ডকালীন কাজে তাদের ফিরিয়ে আনা।
মন্ত্রীরা আশা করেন যে, অর্থনীতি ক্রমশ: খুলে যাবে এবং কোম্পানীসমূহ সরকারী সহায়তা ছাড়াই টিকতে সক্ষম হবে। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এই মর্মে সতর্ক করেছেন যে, অর্থনীতি পূর্নভাবে ফিরে আসা ও চালু হওয়ার আগেই ফারলো স্কীম বন্ধ করা হলে বিপুল সংখ্যক চাকুরী হারানোর আশংকা বিদ্যমান। অতি-আবশ্যকীয় নয় এমন খুচরো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ১৫ জুন থেকে খুলতে পারে কিন্তু অনেক স্টোর তা করবে না, যখন কোম্পানীগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধিসমূহ পরীক্ষা করবে এবং ধীরে ধীরে সেগুলো খুলবে।
৩০ লাখেরও বেশী কর্মী-কর্মচারী সম্বলিত আতিথেয়তা খাতের বার, ক্লাব ও রেস্তোরাঁগুলোও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতার অনেক নিম্নে পরিচালিত হবে। বর্তমানে ফারলোভুক্ত লাখ লাখ লোক যদি বেকার হয়ে পড়ে তবে যুক্তরাজ্য আয় হারিয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ও গভীর মন্দায় নিপতিত হতে পারে।
‘রিজোলিউশন ফাউন্ডেশন’ -এর এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সংকট শুরুর পর থেকে কিছু কর্মহীনদের সহায়তা সুবিধা বৃদ্ধি সত্বেও ইউনিভার্সেল ক্রেডিট কাজ হারানো একজন একক ব্যক্তির গড় উপার্জনের মাত্র ৩০ শতাংশ এ পর্যন্ত প্রতিস্হাপন বা পূরণ করছে। দম্পত্তি ও পরিবারের জন্য ভাতাসমূহ বেশ ভালো, তা সত্বেও এটা আরো অনেক ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কম। চরম সংকটকালে নেয়া প্রচুর ঋন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট উত্তরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
ব্যাংকগুলো ৪৬৫০০০ ক্ষুদ্রতর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ১৮.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ‘বাউন্স ব্যাক লোন’ অর্থাৎ ‘ফেরতযোগ্য ঋন’ অনুমোদন করেছে। এই ঋনের ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত রাষ্ট্র কর্তৃক গ্যারান্টিকৃত এবং এটা অনুমোদনের ক্ষেত্রে খুব অল্প পরীক্ষাই করা হয়।
এছাড়া করোনাভাইরাস বিজনেস ইনটেরাপশন লোন স্কীমে’র (সিবিআইএলএস) অধীনে আরো ৪৩০৪৫টি কোম্পানীকে ৮.২ বিলিয়ন পাউন্ড ঋন প্রদান করা হচ্ছে। সিবিআইএলএস ঋন পরিশোধের ক্ষেত্রে এর শতকরা ৮০ ভাগ সরকার কর্তৃক গ্যারান্টিকৃত এবং ব্যাংককে শুধু ঋণগ্রহীতাকে পরীক্ষার কাজটি করতে হয়। বৃহত্তর ব্যবসাসমূহের জন্য একই ধরনের একটিস্কীম ১৫৪ টি কোম্পানীকে ৮২০ মিলিয়ন পাউন্ড ঋন প্রদান করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button