সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি রুশনারা আলী এমপির অনুরোধ

করোনায় টক অব দ্যা কান্ট্রি: ব্রিটেনে কি অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া হবে?

একটি বিশেষ শ্রেণীর লোক সভ্য সমাজের আড়ালে এই বিপদগ্রস্থ লোকদের অবস্থার অপব্যবহার করছে

এমএফএ জামান: করোনা ভাইরাস যেন অনেক ঘুমন্ত বিষয়গুলোকে জাগিয়ে তুলেছে বিলেতের মাটিতে। যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্রিটেনে বৈধকাগজপত্রহীনদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবী। বিশ্ব মানচিত্রে অভিবাসন নীতির কারণে ইংল্যান্ডের অবস্থান বরাবরই এগিয়ে। বিগত দশকগুলোতে যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষে কিংবা বিভিন্ন দুর্যোগে লোকজন দেশ-ঘর হারিয়ে বিলেতের মাটিতে যখন পা দিয়েছিলো, তখন এই দেশ এবং জনগণ তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, একজন মানুষ হিসেবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সহ সব নাগরিক অধিকার প্রদান করে ‍শুধু বাচঁতে সাহায্য করেনি বরং জীবনের মোড়টাকে পারিবর্তন করে দিয়েছে। কিন্তু ২০১০ সালে ডেভিড ক্যামেরুনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই চিত্রটা অনেক পাল্টে গেছে। অনেক অভিবাসী আজ শুধুমাত্র বৈধকাগজপত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আজ তারা বিলেতে না থাকতে পারছেন একজন মানুষ হিসেবে, না পারছেন জন্মভূমিতে ফিরে যেতে।

গত ৩ সপ্তাহ পূর্বে করোনা ভাইরাস সক্রমণ প্রতিরোধে জরুরী প্রজ্ঞাপণ জারীর পর বিলেতে বসবাসরত বৈধকাগজপত্রহীন ব্যক্তি কিংবা পরিবারের জীবনটা যেন আরো কষ্টের এবং ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। তাদের এই যাযাবর জীবন কাহিনী হয়তো টিভির নাটক অথবা চলচিত্রকেও হার মানাবে। কারণ এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি শুধু বাস্তব জীবনেই সম্ভব; টিভি কিংবা চলচিত্রে নয়।
এই লকডাউনে অনেক ব্যক্তি এবং পরিবার যাদের ভিসা সংক্রান্ত বিভিন্ন্ জটিলতা রয়েছে; তারা আজ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যার মধ্যে একটি বিশেষ অংশ, যাদের ভিসার আবেদন কিংবা এসাইলাম আবেদন বছরের পর বছর হোম অফিস ঝুলিয়ে রেখেছে। এরফলে এইসব ব্যক্তি কিংবা পরিবার এবং তাদের সন্তানদের জন্য স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের আর্থিক কিংবা সামাজিক সুবিধা পাচ্ছেন না। তবে সাময়িক সময়ের জন্য তাদেরকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
ইংল্যান্ডে এই মুহুর্তে এক মিলিয়নেরও অধিক ব্যক্তি এবং পরিবার অবস্থান করছেন যাদের বসবাস কিংবা কাজের কোনো বৈধ অনুমতি বা ভিসা নেই। তাদের বেশিরভাগই এদেশে বৈধ ভিসা নিয়ে এসেছিলেন কিন্তু হোম অফিসের নিয়মিত আইন পরিবর্তন আর গ্যাড়াকলে পড়ে আজ হয়তো তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, নয়তো ভিসা অফিসের কোনো এক জায়গায় তাদের আবেদনপত্রটি ধুলোমাখা অবস্থায় পড়ে আছে। এদের মধ্যে কেউ বৈধপথে এসেছেন কাজ, পড়ালেখার জন্য। আর কিছু সংখ্যক এসেছেন অবৈধ পথে অন্য দেশ থেকে শুধুমাত্র তার জীবনকে বাচাঁনোর জন্য। কিন্তু সবাইকে হোম অফিসের দ্বারস্থ হতে হয় ভিসা নবায়ন অথবা নাগরিকত্ব ভিসা অর্জনের জন্য। আর তখন থেকেই যেন হোম অফিস আর ভিসা প্রার্থীর মধ্যকার চোর-পুলিশ খেলা শুরু। কে, কখন ধরা পড়বে আর কে জিতবে এসব যেন একমাত্র খোদাই ভালো জানেন। কিন্তু এরই মধ্যে জীবনের স্বপ্নকে যেন নিরবে কবর দেয়ার চিন্তা মাথায় আসে তাদের কিন্ত একটু আশা হয়তো অপেক্ষার প্রহরকে আরো দীর্ঘায়িত করে। তখন যেন জীবনে একটি ছাদেঁর নিচে খেয়ে বেচেঁ থাকার অলিখিত যুদ্ধ শুরু হয়। যেখানে তিনি শুধু নিজেই বিশাল সাগরের মাঝে নৌকা নিয়ে চলতে থাকেন কিনারা পাবার আশাঁয়। যাত্রা পথে কেউ হয়তো সাহায্য করে অথবা কেউ তাদের বিপদের সুযোগটা নেয়। আবার কেউ মানষিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন যা সত্যিই বেদনাদায়ক।

আপনার ব্রিটেনের ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকলে, শীঘ্রই স্থানীয় এমপি/সংসদ সদস্যের সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়া একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবির সাথে আপনার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করুন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সাধারণ ক্ষমা বিষয়টি আলোচনার জন্য আপনারা এই্ পিটিশনটি সাক্ষর করুন: https://petition.parliament.uk/petitions/301696

বিলেতে এসব ইমিগ্র্যান্ট ব্যক্তি ও পরিবারের অবস্থা খুবই মানবেতর। তাদের বেশির ভাগেরই কাজের আইনগত অধিকার নেই। তাই সুহৃদ ব্যক্তি কিংবা বন্ধুদের আর্থিক সাহায্যের মা্ধ্যমে তারা প্রতিদিনের জীবনটাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসটুকু জোগাড় করতে তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এরমধ্যে অনেকেরেই স্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা নেই। আজ এখানে তো কাল সেখানে। আর যাদের ছেলেমেয়ে রয়েছে, তাদের দুঃখের তো আর শেষ নেই। ছোট ছেলে-মেয়ের অবদারটুকু পিতামাতা হিসেবে পূরণ করতে না পারার কান্নাটুকু কাউকে শুনাতে পারেন না। তারা হয়তো কোনো পরিবারের সাথে একটি বাসায় একটি ছোট কক্ষে গাদাগাদি করে থাকছেন কারণ তাদের বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষমতাটুকু নেই। দ্যা গার্ডিয়ানের সূত্রমতে, গ্রেটার লন্ডন অথরিটি তাদের এক রিপোর্টে বলেছে, ব্রিটেনে প্রায় ৩৩২,০০০ শিশু ও তরুণ (১৮-২৫ বছর) রয়েছে যাদের এখন পযন্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র হয়নি যার মধ্যে ১৩৩,০০০ শুধুমাত্র লন্ডন শহরে অস্থায়ী আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করছে। এদের সমাজে কোনো স্থায়ীভাবে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে সঠিক চিকিৎসা আর পুষ্টিকর খাবারের অভাবে।
অনেক এসাইলাম আবেদনকারীদের আবেদন বছরেরর পর বছর পড়ে আছে হোম অফিসে। আবেদন বাতিল কিংবা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন না হবার ভয়ে, তারা হোম অফিসকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকেন। তাদের কেউ হয়তো সরকারী ঘরগুলোতে থাকার সুযোগ পেলেও এই সুবিধা খুবই সীমিত। প্রতি ১ বা ২ সপ্তাহে হোম অফিসের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। আর সেখানেও হেনস্থার শিকার হতে হয়।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক রোহিঙা শরণার্থী বলেন, আজ ১৫-১৬ বছর ধরে আমি বিলেতে হোম অফিসের সাথে লড়াই করছি ‍শুধুমাত্র একজন মানুষ হিসেবে বেচেঁ থাকার জন্য। বার্মা কিংবা বাংলাদেশ সরকার কেউ আমাকে গ্রহণ করছেনা। আবার ব্রিটেনও আমাকে এদেশ থেকে যেতে বলছেনা কিন্তু বসবাস, কাজের সুযোগও প্রদান করছে না। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমার ভিসার আবেদন বাতিল করছে। আমি যা বলি, তারা এটাকে মিথ্যা বলে বিবেচিত করে। আমার মনে হয় হোম অফিসের লোকজন হয়তো আজ অবধি আমার বক্তব্য পড়ে দেখেনি। আমি আজ সত্যিই অনেক কষ্টে আছি। আমি মানুষের মতো বাচঁতে চাই।
একজন আফগান শরণার্থী বলেন, আমি আফগানিস্তান থেকে ইংল্যান্ডে হেটেঁ এসেছি শুধু আমার প্রাণটা সাথে নিয়ে আর কিছু নয়। যুদ্ধের কারণে আমি পরিবার, ঘর সবকিছু হারিয়ে নিঃস। বিশ্বের সবাই জানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে কিন্তু কয়েক বছর অপেক্ষার পর হোম অফিস আমার এসাইলাম আবেদন নাকচ করে এই মর্মে যে, আমার কাহিনী কতটুকু সত্য তা নিয়ে তারা সন্দিহান এবং আফগানিস্তান বসবাসের জন্য একটি নিরাপদ দেশ। আফগান যুদ্ধ আর হোম অফিস যুদ্ধের সাথে লড়াই করতে করতে আমি মানষিকভাবে সত্যিই বিপর্যস্ত। হোম অফিসের অমানবিক আচরণ আমাকে নিঃশেষ করে ফেলছে।

বিগত এক দশক যাবৎ ব্রিটেনে কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অনেক ব্যক্তি এবং পরিবারের উপর বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। হোম সেক্রেটারীর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেরেসা মে নেট মাইগ্রেন্টদের সংখ্যা ১০০ হাজারের নিচে নিয়ে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার এই ফাঁদে পড়ে অনেক ব্যক্তিকে কাজ-ব্যবসা ছেড়ে এদেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ২-৩ বছর পর ভিসার সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়াকালে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তাদের ভিসা বাতিল করা হয়। এমনকি অনেক আবেদনের ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগটি সীমিত করে দেয়া ।
পরবর্তীতে তাদের জীবনকে আরও কঠিন করার লক্ষ্যে ভোক্তভোগীদের চিকিৎসা, কাজ সহ বিভিন্ন সুবিধাগুলো হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া অনেক নির্দোশ বিদেশী ছাত্রদের কোর্স চলাকালীন সময়ে ভূয়া কলেজের কারণে ভিসা বাতিল করে দেয়া হয়। সেই সাথে ইউকেবি এর অভিযান দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলতে থেকে বৈধকাগজপত্রহীন লোকদেরকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে। তাদের জীবনকে আরো কঠিনতর করার জন্য ভিসা ছাড়া কাউকে বাড়িভাড়া দিলে জরিমানার বিধান কার্যকর করা হয়। অনেক ব্যক্তিকে জোরপূর্বকভাবে এই দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। সেই সময় ইউকে বর্ডার এজেন্সির বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ এবং মানসিক, শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা সত্যিই দুঃখজনক। আমি বৈধভাবে ইংল্যান্ডে এসেছি। তারপর থেকে পড়ালেখা, কাজ করছি। আমি আমার বেতনের টাকা থেকে নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করেছি। যখন আমার ভিসা বাড়ানোর সময় আসে তখনই সমস্যার সৃষ্টি হয়। ভিসার আবেদনপত্রে আমার আয়ের হিসাবে গাণিতিক ক্রটি ধরা পড়ে কিন্তু এটি একাউনটেন্ট এর ভুল ছিলো, যা পরবর্তীতে সঠিক করে পাঠানো হয়। দুর্ভাগ্য এই কারণে আমার ভিসার আবেদন নাকচ হয়। পরবর্তীতের আমি আপীল করে জেতার পরও হোম অফিস কোনো কারণ ছাড়াই আমার ভিসা আবেদনকে অনেক দিন ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে।
ব্রিটেনে বৈধকাগজপত্রহীন এশিয়ান বিশেষত বাঙালীর সংখ্যাটা অনেক বিশাল। এদের প্রায় সবারই কাজের অনুমতি অথবা থাকার কোনো জায়গা নেই। অনেকের ভিসার আবেদন ঝুলন্ত আছে তাই এই আশায় তারা বুক বেধেঁ আছেন। কিন্তু ক্ষুদার রাজ্যে পেট তো আর এসব কিছু বুঝতে চায়না। একটু খাবার আর মাথা গোজাঁর আশায় অন্যের কাছে দ্বারস্থ হতে হয়। তবে একটি বিশেষ শ্রেণীর লোক সভ্য সমাজের আড়ালে এই বিপদগ্রস্থ লোকদের অবস্থার অপব্যবহার করছে। তাদেরকে মানষিক-শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে কারণ তারা ভিসা জটিলতার ভয়ে কারো কাছে অভিযোগ করতে পারছে না। আবার অনেকে জানেই না কিভাবে, কোথায় অভিযোগ করতে হয়। আধুনিকযুগে এই অবৈধ দাসপ্রথাকে রোধ করতে হোম অফিসের মর্ডান ডে স্লেভারী (Modern Day Salvery) ইউনিট কাজ করলেও সত্যিকার অর্থে খুব কম ভোক্তভোগীই এর সুবিধা ভোগ করছেন। এর মূল কারণ তাদের ধীরগতির কাজ আর অপর্যাপ্ত প্রমাণের অভাব। কারণ ঐই পরিস্থিতিতে ভোক্তভোগীর পক্ষে প্রমাণ রাখা অসম্ভব। এছাড়া আবেদনের পর নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়।
বর্তমান সময়ে ব্রিটেনে বিয়ের মাধ্যমে বৈধ হবার পদ্ধতিটি প্রায় রুদ্ধদ্বার দরজার মতো হয়ে গেছে। এখন বিয়ের আগে ইংলিশ ম্যারেজ রেজিস্ট্রির মাধ্যমে হোম অফিসের কাছে বর-কনের আনুসাঙ্গিক তথ্য জমা দেবার নতুন আইন করা হয়েছে। যখনই হোম অফিস সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দিবে, তখনই তারা বিয়ে করতে পারবেন। বিয়ের আসর থেকে বৈধকাগজপত্রহীন বর কিংবা কনেকে আটকের বেশ কয়েকটি ঘটনা ব্রিটিশ মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া এদেশে অভিবাসীদেরকে বিয়ে করাকে অনুৎসাহিত করার লক্ষ্যে হোম অফিস বিয়ে পরবর্তী সময়ে বর অথবা কনের নাগরিকত্ব অর্জনের প্রক্রিয়াকে বেশ জটিল করেছে। অনেক ব্যক্তি বিয়ে করেও এখানে বৈধতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারণ হোম অফিস কোনো ধরণের প্রমাণ কিংবা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তাদের বিয়ের সম্পর্ককে ভূয়া বিবেচিত করে ভিসা আবেদনকে বাতিল করে দেয় যা সত্যিই অমানবিক।
প্রায় এক দশক যাবৎ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্টাফ সংকটে ভুগছে। আর এই সংকটের প্রভাব দেশ ও জাতিকে কতটুকু ভোগাচ্ছে আমরা এই করেনা দুর্যোগে সবার কাছে প্রতিয়মান। অতীতে এনএইচএসের অনেক ডাক্তার, নার্স সরকারের কঠিন ভিসা নীতির গ্যাড়াকলে পড়ে ইংল্যান্ড ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু হোম অফিসের এই নীতি অব্যাহত থাকার ফলে আর নতুন কোনো অভিবাসী ডাক্তার, নার্স ইংল্যান্ডে আসতে অনীহ প্রকাশ করছেন। কারণ তাদেরকে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় না বরং কয়েক বছরের পর ভিসা বাড়ানোর সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় এবং কোনো সময় যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই এই দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে; যা সত্যিই দুঃখজনক।
এই অপ্রত্যাশিত এবং হতাশাজনক ঘটনাগুলো আজ জাতিকে বেশ সংকিত করে তুলেছে। তাই লেবার পার্টির শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারী ডেভিড ল্যামি এবং লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির এমপি ক্রিশ্চিয়ান জার্ডিনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬০ জন সাংসদগণ বর্তমানে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কর্মরত অভিবাসী ডাক্তার, নার্স এবং কর্মকর্তাদের ব্রিটিশ ভিসা দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন। তারা বলেন, আজ এই করোনা মহামারীতে দেশের হাসপাতারগুলো যখন জনগণের জীবন বাচাঁতে হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে এই অভিবাসী ডাক্তার, নার্সরা তাদের জীবন বাজি রেখে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তারা যেন যুদ্ধের ময়দানে বুক চিতিয়ে করোনা মোকাবেলায় লড়াই করে যাচ্ছেন যখন আমরা পরিবার নিয়ে ঘরে অবস্থান করছি। তাই কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে আমাদের উচিত তাদেরকে নাগরিকত্ব প্রদান করে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।
তাই আজ হয়তো সময় এসেছে আবারও একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার। কারণ ব্রিটেনের ব্রেক্সিট ঘোষণার পর কাজের বাজারে দক্ষ লোকের অভাব দেখা দিয়েছে। যদিও ভারতীয় বংশদ্ভোত বর্তমান ব্রিটিশ হোম মিনিষ্টার প্রীতি প্যাটেল পয়েন্ট পদ্ধতির ভিত্তিতে নতুন ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছেন কিন্তু এই করোনা মহামারীর কারণে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে হয়তো অনেক বিধি বিধান চালু হবে; তখন কি হবে এই বিষয়টি পরিষ্কার নয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ ক্ষমা দেয়া হলেও ২০০৭ সালের পর আর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। লেবার পার্টি ক্ষমতাশীন থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন সরাসরি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা না করে শুধু লিগেসীর আওতায় ২০০৭ সালের আগ ‍পর্যন্ত যারা স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যককে ব্রিটেনে বৈধভাবে বসবাস এবং কাজের অনুমতি দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চ মাসে লেবার পার্টির বেথনালগ্রীণ এন্ড বো আসনের এমপি রোশনারা আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে করোনা ভাইরাসের মোকাবেলার প্রস্তুতি বিষয়ক বক্তব্যে ইংল্যান্ডে অবস্থানরত বৈধকাগজপত্রহীন ব্যক্তি এবং পরিবারকে মানবিক কারণে এই দেশে বসবাসের অনুমতি প্রদানের জন্য সরকার এবং হোম মিনিষ্টারকে অনুরোধ করেছেন। রোশনারা আলী এমপি বলেন, এই করোনা ভাইরাস মহামারীতে আমরা সবাই ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবন নিয়ে শংকিত। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশে ১ মিলিয়নের অধিক লোক বৈধকাগজ পত্রের অভাবে আজ মানবিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কাজ করার আইনগত বৈধতা নেই। নেই সাধারণ চিকিৎসার পাওয়ার অধিকার। কিন্তু এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এটি আমাদের সবার সুস্থ জীবনকে ঝুকিঁর মধ্যে ফেলে দিবে। আমার পূর্বেও পার্লামেন্টে তাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোনো সূরাহা হয়নি আজ পর্যন্ত। তাই আজ সময় এসেছে ব্রিটিশ সরকারের মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার। এরফলে ঐসব লোক সুন্দর-সুস্থ জীবন-যাপনের সুযোগ পাবে এবং বৈধভাবে কাজ করবে যা আমাদের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করবে।
আশ্চর্য হলেও বর্তমান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন লন্ডনের মেয়র (২০০৮-২০১৬) থাকাকালীন সময়ে এ দেশে বৈধকাগজপত্রহীন ব্যক্তিদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্য জোর ক্যাম্পেইন চালিয়েছিলেন। এমনকি তিনি ২০১৬ পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্বাচিত হন তখনও তিনি পার্লামেন্টে বৈধকাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে‘র কাছে দাবী জানান। বরিস এদের বৈধতার পেছনে তার মূল যুক্তিখন্ডনে বলছিলেন, যারা ইংল্যান্ডে ১০ বছর যাবৎ অবস্থান করছে কিন্তু কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই এবং অপরাধ ক্রিয়াকলাপে জড়িত নয়; তাদেরকে এদেশের ভিসা দেয়া উচিত। ইতিমধ্যে আমরা উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালটি খুবই জটিলতার মুখোমুখি যার এখন পর্যন্ত সঠিক সুরাহা করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। যদি আমরা এই বৈধকাগজপত্রহীন অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমা দেই; তাহলে হোম অফিসের উপর থেকে অনেক চাপ কমবে এবং এদেরকে অন্য দেশে পাঠানোর যে বিশাল খরচ এটি সাশ্রয় হবে। বরং, এসব লোক যদি কাজ করার আইনী অধিকার পায় তবে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। এই সব লোক বৈধভাবে বসবাস করলে সমাজে ভারসাম্য আসবে, কেউ তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে পারবে না।
কিন্তু বরিস জনসন ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় এই সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে ছিলো। কিন্তু তিনি বিপুল ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এই বিষয়টি হাউস অব কমন্সে মন্ত্রী ও সদস্যের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু সাধারণ ক্ষমার বিপরীতে মাত্র ৩৫,৫০০ হাজার সাক্ষরের কারণে বরিস তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন।
হোম অফিসের ভুলের কারণে সৃষ্ট উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালটির আজ পর্যন্ত সমাধান ব্রিটিশ সরকার করতে পারেনি। এটি নিয়ে সংসদে অনেক উত্তাল আলোচনা-সমালোচনার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং হোম মিনিষ্টার অ্যাম্বার রোড জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন। কারণ হোম অফিস অনেক ব্রিটিশ নাগরিককে অবৈধভাবে তাদের জাতীয়তা বাতিল করে ওয়েষ্ট ইন্ডিজে পাঠিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভঙুর অর্থনীতিকে পুননির্মাণের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার ক্যারিবীয় কমনওয়েলথ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়েছিলো। তখন থেকেই তারা এদেশের নাগরিক হিসেবে পরিবার নিয়ে অর্ধ-দশকের বেশি সময় থেকে বসবাস করে আসছিলেন। তারা সরকারী হাসপাতাল, অফিস-আদালত সহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। কিন্তু থেরেসা মে হোম মিনিষ্টার থাকাকালীন সময়ে তার বৈরী অভিবাসন নীতির কারণে কমনওয়েলথ দেশের ব্রিটিশ নাগরিকদের হঠাৎ তাদের নাগরিত্ব প্রমাণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু উইন্ডরাশ প্রজন্মের বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার পাসপোর্টের সূত্রে এসেছিলেন তাই হয়তো যথাযথ কাগজের অভাব ছিলো। কিন্তু হোম অফিস উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেই সময়ে তাদের ল্যান্ডিং কার্ড এবং অন্যান্য রেকর্ড ধ্বংস করে দেয়; এর ফলে ভোক্তভোগীরা ইংল্যান্ডে থাকার অধিকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এর পর থেকে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে আবাসন, চিকিৎসা, কাজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ বিভিন্ন সুবিধাগুলো বন্ধ করে ইংল্যান্ড থেকে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আর এতে যেন তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কারণ ইংল্যান্ডে আসার পর কখনো তাদের পিতা-মাতার দেশে যাননি। অনেক আন্দোলন আর আইনী লড়াইয়ের পর সরকার হোম অফিসের এই ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হয়। অবশ্য এদেরকে পরবর্তীতে বিশাল অংকের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের আশ্বাস দেন থেরেসা মে। সারাহ ওকনর (৫৭), জুডি গ্রিফিৎ (৬৭) যারা শিশুবয়সে ইংল্যান্ডে আসেন কিন্ত উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালে গ্যাড়াকলে পড়ে তাদেরকে নাগরিকত্ব বাতিলসহ অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ইবকোন অলোয়া এবং এন্ড্রু বাইন যারা ব্রিটেনে বৈধভাবে বসবাস করলেও উইন্ডরাস স্ক্যান্ডাল অর্থাৎ হোম অফিসের ভুলের কারণে আজ তারা বৃটিশ নাগরিকত্ব হারিয়ে কখনোও রাস্তা, পার্ক কিংবা কারো সাথে থাকছেন।
ওয়েষ্ট উইন্ডিজ বংশদ্ভোত লেবার পার্টির টোটেনহাম আসনের এমপি এবং শ্যাডো জাস্টিস সেক্রেটারী ডেভিড ল্যামি বলেন, উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালের মাধ্যমে কনজারভেটিভ সরকারের বৈরী আভিবাসন নীতির চিত্র জনগণের কাছে পরিস্কার হয়ে উঠেছে। হোম অফিসের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। আমার পিতা-মাতা জাতীয়তা আইন ১৯৪৮ এর অধীনে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ইংল্যান্ডে আসেন। তাদের মতো কয়েক হাজার লোক এদেশে আসেন। কিন্তু থেরেসা মে‘র পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে, ১৯৫০-৬০ এর দশকে আসা লোকদেরকে আজ ইংল্যান্ডে বসবাসের আইনী অধিকার আছে কি না তার প্রমাণ দিতে হচ্ছে। এটি সত্যিই আমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য। জাতি হিসেবে এই বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই লজ্জার।
ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম কৃষাঙ্গ এমপি বিরোধী দল লেবার পার্টির ডায়ান এবোট বলেন, কনজারভেটিভ পার্টি আর থেরেসা মে‘র বৈরী অভিবাসন নীতির অধীনে উইন্ডরাশ প্রজন্ম এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের সাথে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার প্রভাব সত্যিই দুঃখজনক। তাদের এই উদ্দেশ্যমূলক হয়রানীর কারণে অনেক পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে যার প্রভাব আমাদের সমাজে আজ লক্ষ্যণীয়। এছাড়া কমনওয়েলথের বন্ধু দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্কে আজ ফাটল ধরেছে। উইন্ডরাশ স্ক্যান্ডালটি শেষ হয়নি কারণ ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার আর পুর্নবাসন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে একসাথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
ইউকে বর্ডার এজেন্সির সাবেক প্রধান রব হোয়াইটম্যান বেক্সিট পরবর্তী অভিবাসন নীতি সম্পর্কে পরামর্শ প্রদানকালে বলেন, যারা দীর্ঘদীন যাবৎ ব্রিটেনে বৈধকাগজপ্ত্র ছাড়া বসবাস করছে কিন্তু কোনো ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয় তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। ইতিমধ্যে হোম অফিসে ভিসা শাখায় হাজার হাজার ফাইল পড়ে আছে। এগুলো সমাধান করাটা প্রায় অসম্ভব। আমরা দেখেছি ইউরোপের অন্যান্য দেশ এই সমস্যা সমাধানে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলো। এছাড়া এদেরকে ফেরত পাঠানো অনেক ব্যয়বহুল। এতে শুধু জনগণের ট্যাক্সের টাকা আর মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। কারণ একজনকে ইংল্যান্ড থেকে অন্য দেশে পাঠাতে প্রায় ১১,০০০ হাজার পাউন্ড খরচ হয়। আর এই সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিশাল সংখ্যাকে দেশ থেকে বের করতে আমাদের প্রায় ৩০ বছর সময় লাগবে যার খরচ দাড়াঁবে গিয়ে কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড। আর ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর পরিস্থিতি হয়তো আরো খারাপ হতে পারে। তাই এদেরকে বৈধতা দেয়াটা দেশের জন্য মঙ্গল।
আমরা আশাবাদি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এমপি শীঘ্রই সেই সব ব্যক্তি এবং পরিবার যারা শুধুমাত্র একটি বৈধকাগজ অর্থাৎ ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে বসবাস এবং কাজ করে মানুষের মতো বাচাঁর জন্য লড়ছে; তাদের প্রতি সুহৃদ হবেন।
আপনার ব্রিটেনের ভিসা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা থাকলে, শীঘ্রই স্থানীয় এমপি/সংসদ সদস্যের সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়া একজন অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবির সাথে আপনার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে সঠিক পরামর্শ গ্রহণ করুন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সাধারণ ক্ষমা বিষয়টি আলোচনার জন্য আপনারা এই পিটিশনটি সাক্ষর করুন: https://petition.parliament.uk/petitions/301696

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button