যুক্তরাজ্য সরকারের হুঁশিয়ারি: নিম্ন মজুরী বন্ধের পদক্ষেপ বাতিল হতে পারে

যুক্তরাজ্য সরকার এই মর্মে সতর্ক করে দিয়েছে যে, ব্রিটেন আইনানুগভাবে সর্বনিম্ন মজুরী বৃদ্ধির মাধ্যমে নিম্ন মজুরী প্রদান বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা ত্যাগে বাধ্য হতে পারে। কোভিড-১৯ এর আর্থিক খরচের কারণে এটা হতে পারে। আইনানুগ মজুরী ফ্লোরসমূহের ব্যাপারে মন্ত্রীদের পরামর্শ প্রদানকারী স্বাধীন সংস্হা ‘লো পে কমিশন’ বলেছে, ২০২৪ সালের মধ্যে গড় আয়ের দুই তৃতীয়াংশ জাতীয় জীবিকা মজুরী বৃদ্ধির সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

গত নির্বাচনের আগে বরিস জনসনের সরকার যুক্তরাজ্যে নিম্ন মজুরী প্রদান বন্ধের একটি ‘ফ্ল্যাগশীপ প্লেজ’ বা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এতে জাতীয় জীবিকা মজুরী হিসেবে ঘন্টায় সাড়ে ১০ পাউন্ড নির্ধারনের ব্যবস্হা রাখা হয়। লো পে কমিশন – এর সভাপতি ব্রায়ান স্যান্ডারসন এই মর্মে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, যদি মহামারি দেশের অর্থনীতিকে যথেষ্টভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তবে লক্ষ্যমাত্রায় একটি ‘ইমার্জেন্সি ব্রেক’ অর্থ্যাৎ ‘জরুরী বিরতি’ গ্রহণ করার প্রয়োজন হতে পারে। এই বিরতিকে সক্রিয় করতে কমিশন সরকারকে তার লক্ষ্যমাত্রা কিংবা মেয়াদকাল পুনর্বিবেচনার পরামর্শ দিতে পারে। তিনি বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারি শ্রমিক ও নিয়োগদাতাদের জন্য একই ধরনের একটি অত্যন্ত চ্যালেন্জপূর্ণ পরিস্হিতি সৃষ্টি করেছে এবং সরকারকে আমাদের পরবর্তী পরামর্শ প্রদানের সময় আমাদেরকে ‘ইমার্জেন্সি ব্রেক’ অর্থ্যাৎ ‘জরুরী বিরতি’  বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার প্রয়োজন হতে পারে। এই পরামর্শ আমাদের গৃহীত অর্থনৈতিক ডাটা বা উপাত্তের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। গত বুধবারে ব্রিটেনের প্রায় ৩০ লাখ শ্রমিক যখন আইনানুগ সর্বনিম্ন মজুরী হিসেবে শতকরা ৬ ভাগ মজুরী বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছিলো তখনই এই হস্তক্ষেপ আরোপিত হয়। করোনাভাইরাস মহামারি বিস্তারের প্রেক্ষাপটে চাকুরি সুরক্ষার জন্য একটি বিলম্বের আহবান সত্বেও এই প্রতিবন্ধকতা আরোপিত হয়েছে।
এ ধরনের মজুরী বৃদ্ধি হলে, অব্যাহত চাকুরী হারানো ও মন্দায় দেশের নিমজ্জিত দশায় শ্রমিকদের মজুরী জাতীয় জীবিকা মজুরী হিসেবে ২৫ বছরের অধিক বয়সী শ্রমিকদের বেতন শতকরা ৬ দশমিক ২ ভাগ বৃদ্ধি পাবে অর্থাৎ ৮.২১ পাউন্ড থেকে ৮.৭২ পাউন্ডে উন্নীত হবে, যা আইনানুগ মজুরীর পর্যায়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড়ো নগদ বেতন বৃদ্ধি। তবে যুক্তরাজ্যের দু’টি শীর্ষস্হানীয় অর্থনৈতিক থিংকট্যাংক অর্থ্যাৎ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর ফিসক্যাল স্টাডিজ’এবং ‘রিজোলিউশন ফাউন্ডেশন ‘সরকারকে এ উদ্যোগ থেকে সরে আসার আহবান জানিয়ে বলেছে, মজুরী বৃদ্ধির স্হগিতকরণ পীড়িত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকদের ছাঁটাই (লে-অফ) থেকে বিরত রাখবে। সরকারের ওপর চাপ সত্বেও ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন টিইউসির সাধারণ সম্পাদক ফ্রান্সিস ও’ গ্র্যাডি বলেন, মহামারির বিস্তারে টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত নিম্ন মজুরী প্রাপ্ত লাখ লাখ শ্রমিককে সহায়তাদানে মজুরী বৃদ্ধি আবশ্যক। তিনি আরো বলেন, ব্রিটেন তার নিম্ন মজুরীর বীর সৈনিকদের নিকট ঝণী, যাদের মধ্যে পরিচর্যাকারী শ্রমিক ও সুপার মার্কেট স্টাফরাও অন্তর্ভুক্ত। তারা এ ধরনের প্রতিটি পেনি এবং ততোধিক মজুরী বৃদ্ধি লাভের অধিকারী।
লবিং প্রচেষ্টা ও চাকুরী হারানো বৃদ্ধির ব্যাপারে কোম্পানীর ব্যাপক হুমকি সত্বেও সরকারের অর্থমন্ত্রনালয় এই মর্মে নিশ্চিত করেছে যে, মজুরী বৃদ্ধি করা হবে। সূত্র জানায়, বিলম্বের জন্য আইনের পরিবর্তন আবশ্যক হবে যা ইতোমধ্যে প্রনয়ণ করা হয়েছে এবং এ সময়ে এটা রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিকর, যখন অনেকে আর্থিক দুর্ভোগের মুখোমুখি।
ব্যবসায় সূত্রগুলোও জানিয়েছে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান সমূহ পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে ইতোমধ্যে পে-রোল পদ্ধতির পরিবর্তন সাধন করছে,যা বাস্তবায়ন করা না হলে প্রশাসনিকভাবে ব্যয়বহুল হবে।
এক সময় করোনা ভাইরাস সংকট কেটে গেলে, সরকার তার লক্ষ্যসমূহ নমনীয় করতে বৃহত্তর চাপের মুখে পড়বে। ব্যবসায় নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব ডিরেক্টরস’ -এর প্রধান তেজ পারিখ বলেন, নির্বাহীরা নিম্ন বেতনের লোকজনকে সহায়তাকারী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যকে সমর্থন করেন।
তবে আইনানুগ মজুরীর স্তর বা পর্যায়কে অবশ্যই অর্থনৈতিক পরিস্হিতির সাথে সংগতিপূর্ণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, যদি অর্থনীতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্হায় ফিরে আসার মতো পরিস্হিতি সৃষ্টি হয়, তবে অব্যাহত উচ্চাভিলাষি বৃদ্ধি বাতিল করা আমাদের উচিত হবে না। তবে এই মুহূর্তে এটা একটি বড়ো ‘যদি’-র মধ্যে রয়েছে। যদি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে সংগ্রাম করতে অর্থাৎ দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তবে বর্তমান ধারায় অন্য কোন পন্হার দিকে আলোকপাত করতে হতে পারে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button