তৌহিদী জনতার দানাবাঁধা ক্ষোভ প্রশমনের সুযোগ এখনো সরকারের হাতে রয়েছে : আল্লামা শাহ আহমদ শফী

Shofiউলামা-মাশায়েখ, ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে সকল মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করে সংসদের চলতি অধিবেশনেই সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা পূণস্থাপন এবং আল্লাহ-রাসূলের অবমাননা ও ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন পাশের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর এবং এশিয়ার বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক, দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গতকাল ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার হেফাজতে ইসলামের ২৫ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলে উপস্থিত উলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসা শিক্ষক, ইসলামী নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের সামনে সরকারের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
হেফাজতে ইসলাম ছাগলনাইয়া উপজেলা সভাপতি আবু তাহের মজুমদারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন, সহ-সভাপতি মুফতী মাহবুবুর রহমান কাসেমী, মাওলানা শহিদুল্লাহ, আলহাজ্ব আলিমুল্লাহ, মাওলানা আবু বকর পাটোয়ারী, সেক্রেটারী মুফতী শোয়াইব, হাফেজ আহমদ মাসুদ, মাওলানা আব্দুল হালিম কাসেমী, মাওলানা নূরুন্নবী, মাওলানা ইউসুফ, মাওলানা আইয়ুব, মাওলানা শহীদুল্লাহ, মাওলানা জাফর, মাওলানা নূরুল আলম প্রমুখ।
সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ঈমান-আক্বীদা ভিত্তিক ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের মাধ্যমে তৌহিদী জনতার দানাবাঁধা ক্ষোভ প্রশমনের সুযোগ এখনো সরকারের হাতে রয়েছে। বর্তমানে সংসদের অধিবেশন চলছে। ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-মুরতাদদের আস্ফালন ও ইসলাম বিরোধী সকল অপতৎপরতা বন্ধ এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে সংসদের চলতি অধিবেশনেই আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের ধারা পূণস্থাপন এবং আল্লাহ-রাসূলের অবমাননা ও ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে জড়িত নাস্তিক-মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে খুব সহজেই আইন পাশ করা যায়।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কোন কোন মন্ত্রী এমপি ও কর্তাব্যক্তিদেরকে প্রায়ই ওলামা-মাশায়েখ, ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষককে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস ও কথিত জঙ্গিবাদের সাথে জড়িয়ে নানা মিথ্যা অপবাদ দিতে শোনা যায়। সরাসরি জনগণের সম্পৃক্ততায় পরিচালিত কুরআন-হাদীসের জ্ঞানঅর্জনের শিক্ষাকেন্দ্র ক্বওমী মাদ্রসার বিরুদ্ধেও নানা বিষোদ্গার করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এসব অপবাদ ও মিথ্যা প্রচার এখন জনগণ বিশ্বাস করে না। বিগত ৫ মে শাপলা চত্বরের এত বড় জুলুম-অত্যাচার ও হতাহতের শিকার হওয়ার পরও ওলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রতিশোধমূলক কোনরূপ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে কী পরিমাণ ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছে, তা বিশ্ববাসী দেখেছে। হেফাজতের চলমান অরাজনৈতিক আন্দোলনেও ক্বওমী আলেমরা কতটা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছেন, তাও দেশবাসী জানে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, বিগত ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা চালানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম ও এর আশপাশের এলাকায় শত শত কুরআন পোড়ানোসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, সড়কের শত শত গাছ কাটা হয়েছে, ৬ মে নারায়ণগঞ্জ, হাটহাজারীসহ দেশের আরো বিভিন্ন স্থানে আলেম ও নীরিহ তৌহিদী জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। এত ভয়াবহ ঘটনার নিরপেক্ষ বিচারবিভাগী তদন্ত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে বার বার দাবী জানিয়ে আসছি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনায় দোষীদের শাস্তির কথা বলেছিলেন। অথচ সরকার এই ন্যায্য দাবীর ব্যাপারে কোনরূপ পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টা উলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে জেল-জুলুম, মিথ্যা মামলাসহ দমন-পীড়ন ও মিথ্যাচার চালানো হচ্ছে। মুফতী ওয়াক্কাসসহ দেশ বরেণ্য অনেক আলেমকে হয়রানীর শিকার করা হলেও আল্লাহ-রাসূল অবমাননাকারী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। একটা মুসলিম অধ্যুষিত দেশে এটা চরম দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহৎ লংমার্চ ও ঢাকা অবরোধ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, এদেশের মানুষ কখনো ইসলাম বিদ্বেষী মতবাদ পোষণকারী ও নাস্তিক্যবাদের সহায়কদেরকে কখনো মেনে নেবে না।
হেফাজত আমীর নাস্তিক্যবাদের সহায়ক বিশেষ একটি মহল থেকে হেফাজতে ইসলামকে নারী বিদ্বেষী বলে চিহ্ণিত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে বলেন, এর চেয়ে জঘন্য মিথ্যাচার কিছুই হতে পারে না। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর চতুর্থ দফা নারীদের মর্যাদা ও অধিকারের সুরক্ষার জন্যই রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নারী জাতির সার্বিক উন্নতির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে তাদের নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মস্থল, সম্মানজনক জীবিকা এবং কর্মজীবি নারীদের ন্যায্য পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরে-বাইরে ও কর্মস্থলে নারীদের ইজ্জত-আব্রু ও যৌন হয়রানী থেকে বেঁচে থাকার সহায়ক হিসেবে পোষাক ও বেশভূষায় শালীনতা প্রকাশ ও হিজাব পালনে উদ্বুব্ধকরণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এবং একই লক্ষ্যে নারী-পুরুষের সকল প্রকার বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে অবাধ ও অশালীন মেলামেশা, নারী-নির্যাতন, যৌন হয়রানী, নারীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রকার সহিংসতা, যৌতুকপ্রথাসহ যাবতীয় নারী নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা কঠোর হাতে দমন করতে হবে”। সুতরাং হেফাজতে ইসলাম নারী বিদ্বেষী বলে যারাই অপপ্রচার করছেন, তারা যে কতটা মিথ্যাচারে লিপ্ত, তা যে কেউ সহজেই ধরে নিতে পারবেন।
হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফী উপস্থিত ফেনী ছাগলনাইয়ার হেফাজত নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ সুদৃঢ় অবস্থানের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ওলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার সুদৃঢ় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অক্ষুণœ রাখতে পারলে আল্লাহ-রাসূল, ইসলাম, উলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে কোন অপতৎপরতা চালাতে ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি কোন অপশক্তিই সাহস করবে না। সুতরাং সর্বাবস্থায় আমাদের অরাজনৈতিক ভূমিকাকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদি শক্তি হেফাজতে ইসলামের বৃহৎ ঐক্য ও অগ্রযাত্রায় ভীত হয়ে উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য নানা চক্রান্ত ও অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি সকলকে এ ধরণের বিভ্রান্তিকর সংবাদ ও অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে ও বিদেশে ইসলাম বিরোধী ও নাস্তিক্যবাদি শক্তি দিন দিন তাদের অবস্থান জোরদার করছে। সুতরাং এদের মোকাবেলায় ঈমান-আক্বীদা ও দ্বীন-ইসলামের সুরক্ষায় উলামা-মাশায়েখ ও তৌহিদী জনতার ঐক্যকে সুদৃঢ় রাখতে আমাদেরকে আরো বেশী সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী আরো বলেন, চলমান নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলন ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচীসহ অসংখ্য বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। বিগত ৬ এপ্রিল সারা দেশ থেকে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ ও স্মরণকালের বৃহৎ মহাসমাবেশ করেছে। একই দিনে দেশের একাধিক জেলায় মহাসমাবেশ করেছে। কিন্তু কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, মারদাঙ্গা হয়নি। দেশবাসী হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তিনি বলেন, ওলামায়ে কেরাম ও ক্বওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা সহিংস রাজনীতির সাথে মোটেও পরিচিত নয়। তারা প্রচলিত রাজনীতির কূটচাল ও মারপ্যাচ সম্পর্কেও সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। এই নীরিহ মানুষদেরকেই বিগত ৫ মে শিকারে পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ ও ৬ মে’র গণহত্যায় জড়িত ও হুকুমদাতারা আল্লাহর বিচারের হাত থেকে কখনো রেহাই পাবে না। কাকে কীভাবে পাকড়াও করা হবে, তা একমাত্র তিনিই ভাল জানেন। দেশের লাখ লাখ ওলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র ও তৌহিদী জনতা এর বিচারের দায়িত্ব আল্লাহর উপর সোপর্দ করেছেন। আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউ বাঁচতে পারবেন না।
হেফাজত আমীরের প্রেস সচিব মাওলানা মুনির আহমদ জানান, প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে ছাগলনাইয়া ও ফেনী জেলায় হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মতৎপরতা সম্পর্কে অবহিত করেন। তারা হেফাজত আমীরকে দৃঢ়ভাবে জানান যে, ভবিষ্যতে দেশ ও মুসলিম জাতির যে কোন প্রয়োজনে হেফাজত আমীর যখনই আহ্বান জানাবেন, তারা যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে তা বাস্তবায়ন করতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ফেনী জেলার তৌহিদী জনতা হেফাজত আমীরের পেছনে বর্তমানে জোরালো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান করছেন। হেফাজত আমীর প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং ফেনী জেলায় হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে তাদের দৃঢ় অবস্থানে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রতিনিধি দলটি হেফাজত আমীরের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আল্লামা হাফজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরীর সাথেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত করেন।
সবশেষে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি ও কামিয়াবীর জন্য আল্লামা শাহ আহমদ শফী বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button