হিথ্রোর বায়ূদূষণ সেন্ট্রাল লন্ডনে ছড়িয়ে পড়ছে

গবেষকরা বলেছেন, আমরা জানি যে, বিমানবন্দরগুলো যদিও নগরীর উপকন্ঠে অবস্থিত তবুও এগুলো থেকে নির্গত ধোঁয়া ইত্যাদি যথেষ্ট দূরের শহুরে এলাকাসমূহের মানুষের নিকট গিয়ে পৌঁছতে পারে। নতুন এক নজিরবিহীন সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিথ্রো বিমান বন্দরের বায়ূদূষণ ১১ মাইলেরও বেশী দূরে অবস্থিত সেন্ট্রাল লন্ডনে গিয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকরা এই প্রথম বারের মতো ইউরোপের চারটি নগরীতে আল্ট্রা-ফাইন পার্টিকলস (অতিসুক্ষ কণিকা) পরিমাপ করেছেন। এতে তারা দেখতে পেয়েছেন, বিমান বন্দরগুলো বায়ূদূষণকারী অতিসুক্ষ কণিকার একটি অন্যতম উৎস। যদিও যানবাহনের দূষণ বায়ূ দূষণের সবচেয়ে বড়ো উৎস তা সত্বেও ‘এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্যান্য নগরীর তুলনায় লন্ডনে অতি সুক্ষ পদার্থের উপস্থিতি সর্বোচ্চ, বিশেষভাবে যখন এয়ারপোর্ট থেকে নগরীর কেন্দ্রস্থলের দিকে বায়ূ প্রবাহিত হয়।

লন্ডনের চারদিকে বিমান বন্দর। ব্যস্ততম হিথ্রোতে ২০১৮ সালে ৪ লাখ ৮০ হাজার বিমান ওঠা-নামা করে। সমীক্ষার জন্য বেছে নেয়া এই বিমান বন্দরটি নর্থ কেনসিংটনের বায়ূ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১১ মাইলেরও বেশী দূরে অবস্থিত। দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রটি মেরিলবোন রোডে অবস্থিত।

সমীক্ষার রিসার্চ ফেলো ও লেখক ড: লোর রিভাস বলেন, আমরা ভেবেছিলাম যানবাহনের নির্গমণ নগরীগুলোর অতিসুক্ষ পদার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হবে কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এয়ারপোর্টের নির্গমণ এর চেয়ে অনেক বেশী, যদিও তা নগরী উপকন্ঠসমূহে অবস্থিত। এগুলো অনেক দূর পর্যন্ত চলে আসে, বিমানবন্দর থেকে অনেক দূরের জনবসতিপূর্ণ শহরে এলাকাসমূহে।

অধিকাংশ বায়ূদূষণ পরীক্ষায় দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত বড়ো কণিকাগুলো আড়াই মাইক্রোমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্রাকৃতির কিন্তু সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, সবচেয়ে ক্ষুদ্র অতিসুক্ষ কণিকা বা পদার্থগুলো ০.১ মাইক্রোমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র। ক্ষুদ্রতম পদার্থগুলো অতি সহজেই ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করতে পারে এব অতি সুক্ষ কণিকা মস্তিষ্ক ক্যান্সারের সাথে সংশ্লিষ্ট। গবেষণাটি ২০০৭ ও ২০১৭ সালের মধ্যে লন্ডন, বার্সেলোনা, হেলসিংকি এবং জুরিখে পরিচালনা করা হয়। চারটি নগরীতে নবচেয়ে বেশী বায়ূ দূষণ ঘটায় কারগুলো। এটা ৭১ থেকে ৯৪ শতাংশ।

বায়ূ দূষণ পরিমাপের সিনিয়র লেকচারার ড: গ্যারি ফুলার বলেন, ইউরোপের নগরীগুলোতে যানবাহন থেকে নির্গত বায়ূবাহিত পদার্থ হ্রাসের যে পলিসি রয়েছে তা মানবদেহে অতিসুক্ষ পদার্থের উপস্থিতি হ্রাসেরও ব্যবহৃত হওয়া উচিত। কিন্তু বিমান থেকে নির্গত পদার্থসমূহের বিষয়টি একইভাবে নিরসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। গবেষণা দলটি এখন মৃত্যু ও হাসপাতালে ভর্তির ওপর অতি সুস্থ্য পদার্থের বিভিন্ন উৎসবের প্রভাব নিয়ে সমীক্ষার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

ইতোমধ্যে বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ-এর গবেষকগণ মানবদেহে লোয়ার বোন মাস লেভেলসমূহের সাথে বায়ূদূষণের সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। দক্ষিণ ভারতের হায়দ্রাবাদ নগরীর বাইরে ২৮টি গ্রামের ৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশী লোকের ওপর এই সমীক্ষাটি চালানো হয়, যা মানুষের হাঁড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি গবেষণা। এতে এক ধরনের রেডিওগ্রাফি ব্যবহার করে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে পরীক্ষা করা হয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বোন মাস অর্থ্যাৎ হাঁড়ের পদার্থ স্বল্পতার জন্য বায়ূদূষণ দায়ী। দূষিত পদার্থ বা কণিকা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণের ফলে তা বোন মাস স্বল্পতা সৃষ্টি করে। বায়ূদূষণ থেকে সৃষ্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের ফলে এটা সংঘটিত হয়।

সমীক্ষার সমন্বয়ক ক্যাথরিন টন বলেন, আমার গবেষণায় প্রাপ্ত বিষয়সমূহে একটি ক্রমবর্ধমান পদার্থের উপস্থিতি যুক্ত হয়েছে, যা এই ইংগিত দিচ্ছে যে, পার্টিকুলেট বায়ূদূষণ একটি ব্যাপক বায়ূদূষণ লেভেলে হাঁড়ের স্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত বা প্রাসঙ্গিক। এতে উচ্চ আয় এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোও অন্তর্ভুক্ত। -ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডট কো ডট ইউকে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button