এনএইচএস ওয়ার্ডসমূহে নবজাত শিশু মৃত্যুর হার বিস্ময়কর

যুক্তরাজ্যের কিছু এলাকায় অসুস্থ নবজাতকেরা অন্যান্য এলাকার মারত্মকভাবে অসুস্থ শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ হারে মৃত্যুবরণ করছে। এসব তথ্য থেকে কিছু নিওন্যাটাল ইউনিটে সেবার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ ধরনের মারাত্মক ব্যবধান মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। দেশব্যাপী নবজাতক সংক্রান্ত ইউনিটগুলোতে অন্তত: ৬শ’ নার্সের ঘাটতি রয়েছে, এটা প্রতি ৫ জনে ১জন। যার ফলে বিশেষজ্ঞ নার্সদের নিরাপদ সেবাদান পর্যায়ে স্টাফরা ব্যর্থ হচ্ছেন।

স্টাফোর্ডশয়ার, শ্রোপশায়ার এবং ব্লাক কান্ট্রি এলাকায় নবজাত শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশী অর্থাৎ ১০ শতাংশ, যেখানে ১০৭টি নবজাত শিশু মারা গেছে। এর সাথে লন্ডনের উত্তর মধ্যভাগ ও উত্তরপূর্ব লন্ডনের তুলনা করলে দেখা যায়, এসব এলাকার নবজাতকের মৃত্যুর হার ৫ শতাংশ। শ্রোপশায়ার অঞ্চলের মধ্যে শ্রুবেরি এবং টেলফোর্ড হসপিটালস ট্রাস্ট অন্তর্ভুক্ত, যা এনএইচএস-এর ইতিহাসে সর্ববৃহৎ মাতৃসম্মন্ধীয় কেলেংকারীর কেন্দ্রবিন্দু। এখানে দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার শতাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এনএইচএস এর রয়াল কলেজ অব পেইডিয়াট্রিক্স এন্ড চাইল্ড হেলথ্ কর্তৃক পরিচালিত ন্যাশনাল নিওন্যাটাল অডিট প্রোগ্রাম অনুসারে, ৫৩টি নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১১টিতে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন নার্স রয়েছেন। সামগ্রিকভাবে ৭০ শতাংশ নার্সিং স্টাফের নিওন্যাটাল অর্থ্যাৎ নবজাতক সেবায় পর্যাপ্ত যোগ্যতা নেই। যখন শিফট্সমূহের এক তৃতীয়াংশেরও বেশী শিফটে এনএইচএস ইংল্যান্ড এর দিক নির্দেশনা পালনে যথেষ্ট সংখ্যক সাধারন নার্সের অভাব রয়েছে।

স্ট্যাফোর্ডশায়ার, শ্রোপশায়ার ও ব্লাক কান্ট্রি এলাকাসমূহসহ বিভিন্ন অঞ্চলে স্টাফ স্বল্পতা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী, এখানে শিফটসমূহে ঘাটতির পরিমান ৫৭ শতাংশ। অপরদিকে আইল অব ম্যান-এ শিফটগুলো ৮১ শতাংশ নার্সে পরিপূর্ন।

ব্রাডফোর্ড টিচিং হসপিটালস্ এর একজন কনসালট্যান্ট নিওন্যাটোলজিস্ট, যিনি রয়াল কলেজ অব পেইডিয়াট্রিক্স এন্ড চাইল্ড হেলথ্ এর পরিচালক, ডা: স্যাম ওড্ডি বলেন যে, ইউনিটসমূহের মধ্যে বিদ্যমান মৃত্যুহারের ভিন্নতায় তিনি আশ্চর্য ও হতাশ। তিনি বলেন, নবজাতক মৃত্যুহারের ভিন্নতা অত্যন্ত বিস্ময়কর। কোন কোন ইউনিটে মৃত্যুহার কোন কোন ইউনিটের দ্বিগুণ। এতে মৃত্যুহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে নিওন্যাটাল নেটওয়ার্কের পদক্ষেপ গ্রহনের ওপরই গুরুত্বারোপ করে। ডা: ওড্ডি আরো বলেন, এই সংখ্যা দুর্বল সেবার প্রমাণ হিসেবে দোষারোপের বিষয় নয় এবং এটা কিছু নেটওয়ার্কের কাঠামোগত, অর্থায়ন বিষয়ক ও ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণের দিক নির্দেশনা প্রদান করে।

যুক্তরাজ্যে জন্ম নেয়া প্রতি ৭টি শিশুর মধ্যে ১টির জন্ম পরবর্তী সেবার প্রয়োজন রয়েছে। এ সংখ্যা ১লাখ শিশুর সমান। ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডব্যাপী ১৮১ টি নবজাতক সংক্রান্ত সার্ভিস বিদ্যমান, যেগুলো আঞ্চলিক নেটওয়ার্কে সংগঠিত, যার সাথে সবচেয়ে অসুস্থ শিশুদের নিওন্যাটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে বদলীর বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

সকল নিওন্যাটাল ও নবজাতক সেবা ইউনিটসমূহে নিরাপদ স্টাফিং গাইড লাইন থাকা আবশ্যক যাতে সবচেয়ে অসুস্থ শিশুদের জন্য ওয়ান-টু-ওয়ান নার্সিং সেবা থাকা দরকার।

তিনি বলেন, ওয়ার্ডগুলোতে ৭৯ হাজারেরও বেশী সমতূল্য শিফটে অর্থাৎ ৬০৭ জন নার্সের ঘাটতি রয়েছে। এটা আবার অত্যন্ত রক্ষণশীল হিসাব।

ডা: ওড্ডি আরো বলেন, একটি নিওন্যাটাল ওয়ার্ড আসলে কখনো বন্ধ থাকতে পারে না। স্টাফের ঘাটতির অর্থ হচ্ছে নার্সেরা তাদের যে সংখ্যক শিশুর যত্ন নেয়া উচিত, তার চেয়ে বেশী সংখ্যক শিশুর দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে তারা একটি নবজাত শিশুর জন্য যে সময় ও যত্ন প্রদান করা দরকার, তা দিতে পারছেন না।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button