বরিসের সামনে তিন বড় চ্যালেঞ্জ

কনজারভেটিভ পার্টি ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে সুস্পষ্ট বিজয় অর্জন করেছে এবং দলটির নেতা বরিস জনসনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ ভোটাররা। আগামী পাঁচ বছর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ম্যান্ডেট পেতে যাচ্ছেন এ টোরি নেতা। কনজারভেটিভরা এ বিজয় উদযাপন করলেও জনসনের সামনে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। বড় প্রশ্ন, তিনি কি ভোটারদের এ নিরঙ্কুশ সমর্থনের সম্মান করতে পারবেন?

একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ফলে জনসন এখন পরিকল্পনামাফিক অনেক কিছুই করতে পারবেন। তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন, বাজেট পাস করতে পারবেন এবং দীর্ঘমেয়াদি অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার আগামী ৩১ জানুয়ারি নিরাপদে ৫০ পেনির মুদ্রা চালু করতে পারবেন। তার মানে এই নয় যে সরকার বড় কিছু আর্থিক সংকট থেকে দ্রুতই উঠে দাঁড়াতে পারবে। বর্তমানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হাজির হয়েছে। ১. ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে। ২. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে বাণিজ্য হবে ও ৩. নতুন ভোটারদের তিনি সন্তুষ্ট রাখতে পারবেন কিনা।

১. ইইউর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক
আগামী মাসে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের প্রস্থানের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরিস জনসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারটির সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ধারণ করা। জনমনের আকাঙ্ক্ষা, এটা হয়তো কানাডার সঙ্গে যে রকম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে, সে রকম কিছু একটা হবে। ইইউ নীতিনির্ধারক ও মান নিয়ন্ত্রকদের প্রভাব কিছুটা কম হবে। তবে ইংলিশ চ্যানেলের উভয় প্রান্তে পণ্য চেক ইস্যুতে বাণিজ্য সংঘর্ষ এড়ানো যাবে না, এমনকি যুক্তরাজ্যের আইরিশ সমুদ্রজুড়েও এ সংকট থাকবে।

শ্রমিক অধিকার, পরিবেশ, শুল্ক ইত্যাদি ইস্যুতে যুক্তরাজ্য যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ডে না এসে চুক্তি স্বাক্ষর করে, তাহলে বাণিজ্য শুল্ক, সীমান্তে বেশকিছু অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বাণিজ্য ও সাপ্লাই চেইনে বাধাহীন কার্যক্রম অগ্রসর ম্যানুফ্যাকচারারদের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এটা সুস্পষ্ট প্রতিবন্ধক হিসেবে আবির্ভূত হবে।

২. যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক কেমন হবে
নির্বাচনী প্রচারণার সময় জনসন বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইইউর চেয়েও বড় চুক্তিতে যাচ্ছে ব্রিটেন। কিন্তু ইইউর সঙ্গে কাছাকাছি মানের একটি চুক্তি কয়েক দফা প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে কী তাড়াহুড়ো করছেন জনসন? যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি অত্যন্ত লাভজনক হবে, অর্থনৈতিক মডেলটি তা বলছে না। কিন্তু ওই মডেল বাদ দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সমর্থন রয়েছে জনসনের।

তবে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বড় চুক্তিতে আসা জনসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে আগামী বছরে নির্বাচনে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হয়তো একটি সফল চুক্তি প্রত্যাশা করছেন। ব্রিটেনের বাণিজ্য অবস্থান পরিবর্তন একটি প্রক্রিয়া, যাতে দেশটিতে নতুন বিজয়ী ও পরাজিত তৈরি হবে।

৩. জনসনের অর্থনৈতিক নীতি কি নতুন ভোটারদের সন্তুষ্ট রাখবে?
এবার নতুন অনেক ভোটারের সমর্থন পেয়েছেন জনসন। তারা যে আশায় কনজারভেটিভ পার্টিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপহার দিয়েছে, অর্থনৈতিক নীতিতে কি তাদের সমর্থনের প্রতিফলন ঘটবে। দলটির রাজনৈতিক সমর্থনের পাটাতন পরিবর্তন হয়েছে। এখন তাদের সমর্থনের ভিত্তি সাবেক মাইনিং শহরগুলো, ম্যানুফ্যাকচারিং সেন্টার ও অশিল্পায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলো।

শুধু ব্রেক্সিট প্রতিশ্রুতিতেই ভোট বাড়েনি; বরং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ, অবকাঠামো ও অন্যান্য খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতিতেই নতুন অনেক ভোট পেয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। এখন সেসব প্রতিশ্রুতি কার্যকরও করতে হবে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button