জনসন না করবিন – কে হবেন ব্রেক্সিটের কাণ্ডারি?

৩১শে অক্টোবর ব্রেক্সিট সম্ভব হলো না। এবার নির্বাচনের ময়দানে ভোটাররা আগামী সংসদ ও সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রধানমন্ত্রী জনসন ও বিরোধী নেতা করবিন জনসমর্থন আদায়ে আসরে নামছেন। ব্রিটিশ সংসদে ব্রেক্সিট নিয়ে তর্কবিতর্কের পালা শেষ। এবার ব্যালট বাক্সে সমর্থনের লড়াইয়ে নামছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও লেবার নেতা জেরেমি কর্বিন। কিন্তু দলমত নির্বিশেষে ব্রিটেনে ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে, তার ফলে দুই নেতার পক্ষে ঘর গুছিয়ে ভোটারদের মন জয় করা কঠিন হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার মারাত্মক প্রভাব নিয়েও হিসেব-নিকেশ চলছে।

১২ই ডিসেম্বর আগাম নির্বাচনে বরিস জনসন নিজের এক জোরালো ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান। তার মতে, নির্বাচনে বিপুল জয়ের মাধ্যমে একমাত্র তিনিই জানুয়ারি মাসে ব্রেক্সিটের প্রশ্নে জনগণের রায় কার্যকর করতে পারেন। যাবতীয় বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে নতুন ব্রেক্সিট চুক্তি আদায় করেছেন। ৩১শে অক্টোবর ব্রেক্সিট কার্যকর করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও সংসদে জেরেমি করবিনের বাধার কারণে ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করছেন জনসন। ফলে দেশের মানুষ ও ব্যবসা বাণিজ্য জগত আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে গেল। ব্রেক্সিট পর্ব সেরে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে মন দিতে হবে, বলেন জনসন।

অন্যদিকে লেবার নেতা করবিন টোরি দলের দীর্ঘ শাসনকালের পর ব্রিটেনে প্রকৃত পরিবর্তনের ডাক দিচ্ছেন। সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার আওতায় তিনি রেল, ডাক ও পানি সরবরাহ পরিষেবাকে আবার সরকারি মালিকানায় আনতে চান। করবিনের অভিযোগ, টোরি দল দীর্ঘদিন ধরে শুধু ধনীদের স্বার্থরক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারি ব্যয় কমিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষকে সেই নীতির কুফল ভোগ করতে হয়েছে। তার মতে, এক প্রজন্মের মধ্যে সমাজের এমন রূপান্তরের সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। জনসন নির্বাচনে জিতলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবা মার্কিন কোম্পানির হাতে চলে যাবে বলে করবিন সতর্ক করে দিয়েছেন।

বর্তমানে জনমত সমীক্ষায় নেতা হিসেবে জনসন ও দল হিসেবে টোরি এগিয়ে থাকলেও সেই হিসেব এলোমেলো হবার একাধিক সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, জনসন ব্রেক্সিট কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ায় নাইজেল ফারাজ-এর ব্রেক্সিট পার্টি ব্রেক্সিটপন্থি ভোটারদের আরও সমর্থন পেতে পারে। দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে ব্রেক্সিটপন্থিদের ভোটে বিভাজনের ফলে অন্য প্রার্থীরা লাভবান হবেন। টোরি ও লেবার দলের মধ্যে ‘বিদ্রোহী’-দের সংখ্যাও কম নয়। তাঁরা আদৌ প্রার্থী হতে পারবেন কিনা, তার উপর দলের ঐক্য নির্ভর করবে।

নেতা হিসেবে করবিন নিজের লেবার দলের মধ্যেও যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছেন না। ব্রেক্সিট সম্পর্কেও তার কোনো স্পষ্ট অবস্থান নেই। কখনো বলেছেন, তিনি আবার নতুন করে ইইউ-র সঙ্গে আলোচনা করে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে পরিবর্তন আনতে চান। দ্বিতীয় গণভোটের মাধ্যমে সে বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের কথাও বলেছেন তিনি। তাঁর ঘোষিত রাষ্ট্রীয়করণের নীতির ফলে ব্রিটেনের অর্থনীতির ক্ষতি হবে বলে টোরি দল সাবধান করে দিচ্ছে।

ইইউপন্থী ভোটাররা মূলত উদারপন্থী লিবডেম দলের প্রতি সমর্থন জানাতে পারবেন। স্কটল্যান্ডের এসএনপি দলও সেখানকার ইউরোপপন্থী ভোটারদের মন জয় করতে পারে। ইউরোপ-বিরোধী ও ইউরোপপন্থী ভোটারদের ঘিরে জনসমর্থনের প্রতিফলন দেখা দিলে ত্রিশঙ্কু সংসদের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে ডুবে যেতে পারে। -ডয়চে ভেলে

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button