ট্যাংকার জব্দ নিয়ে ইরান-ব্রিটেন উত্তেজনা

ব্রিটেন দাবি করেছে, উপসাগরীয় এলাকায় হরমুজ প্রণালি থেকে শুক্রবার ইরান তাদের দুটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে। তারা তেহরানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আটককৃত ট্যাংকারগুলো ফেরত দিতে হবে, নইলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে ইরানকে। তবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বলেছে, তারা ব্রিটিশ পতাকাবাহী স্টেনা ইমপেরো ট্যাংকার আটক করেছে। দুই সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ নেভি জিব্রাল্টারে একটি ইরানি ট্যাংকার আটক করেছিল।

ইরানের তাসনিম নিউজ এজেন্সি বলছে, দ্বিতীয় ট্যাংকার, ব্রিটিশ পরিচালিত মেসদারকে জব্দ করা হয়নি। নিরাপত্তা ও পরিবেশগত ইস্যু নিয়ে সতর্ক করে দেয়ার পর সেটিকে ছেড়ে দেয়া হয়। ট্যাংকারটি পরে নির্দিষ্ট যাত্রাপথে ফিরেছে এবং এর ক্রুরা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছে মেসদারের ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান নরবাক।

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকালের দিকে হরমুজ প্রণালি দিয়ে পারস্য উপসাগরে প্রবেশের কিছু সময় পর ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের নৌযান ও হেলিকপ্টার স্টেনা ইমপেরোওকে গতিপথ বদলাতে বাধ্য করে। কিছুক্ষণ পর মেসদারকেও আটক করা হয়।

তাসনিম নিউজ এজেন্সির তথ্যানুসারে, ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকার স্টেনা ইমপেরো সমস্যা করছিল বলে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের হাতে তথ্য ছিল। ট্যাংকারটি তিনটি নিয়ম ভেঙেছিল, জিপিএস বন্ধ করে রেখেছিল, প্রবেশমুখের দিকে না গিয়ে হরমুজ প্রণালির দিকে যাচ্ছিল ও সতর্কবার্তা অমান্য করছিল। এ কারণে ট্যাংকারটিকে জব্দ করা হয়। স্টেনা ইমপেরোর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন মেরিন ম্যানেজমেন্ট জানিয়েছে, যানটিতে ২৩ জন ক্রু রয়েছেন। তারা ট্যাংকারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। ক্রুদের মধ্যে ক্যাপ্টেনসহ ১৮ জন ভারতীয় বলে গালফ নিউজ জানিয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেন, এটি একেবারে অগ্রহণযোগ্য। ওই অঞ্চলে সব জাহাজকে নিরাপদে ও মুক্তভাবে চলাচল করতে দিতে হবে। এরপর স্কাই নিউজকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, যদি ওই জাহাজগুলোর নিয়ন্ত্রণ ইরান ফিরিয়ে না দেয়, তবে এর ফলাফল দেশটিকে ভুগতে হবে। তবে তিনি আরো জানান, তারা আপাতত সামরিক অভিযানের বিষয়টি এখন বিবেচনা করছেন না। আপাতত কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানের কথাই ভাবা হচ্ছে। তবে এটা স্পষ্ট করতে চাই যে এর সমাধান করতেই হবে। তেহরানে আমাদের রাষ্ট্রদূত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কাজ করছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এ বিষয় নিয়ে তিনি ব্রিটেনের সঙ্গে কথা বলবেন।

ব্রিটিশ ট্যাংকার আটকের ঘটনায় উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়ল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সঙ্গেও ইরানের উত্তেজনা বিরাজ করছে।

৪ জুলাই ব্রিটিশ নেভি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে সন্দেহে ইরানের গ্রেস-১ ট্যাংকার জব্দ করে। অবৈধভাবে সিরিয়ার জন্য তেল বহন করছে সন্দেহে স্পেনের দক্ষিণ উপকূলে জিব্রাল্টারের কাছে এ ট্যাংকারকে জব্দ করা হয়। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু। ৯ জুলাই উপসাগরীয় এলাকায় ইরানের জলসীমায় যুক্তরাজ্যের নৌযানগুলোর হুমকি রয়েছে বলে মন্তব্য করে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে, এ দাবির একদিন পর ওই অঞ্চলে একটি ব্রিটিশ তেলবাহী ট্যাংকারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল ইরানের জাহাজগুলো। তবে ইরান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button