‘চ্যানেল টানেল’: যে সুড়ঙ্গে বদলে গেল ইউরোপ

‘চ্যানেল টানেল’ একটি পাতাল রেল সুড়ঙ্গ যা সাগরের তলদেশ দিয়ে বিস্তৃত। ৫০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সুড়ঙ্গটি যুক্তরাজ্যের ফোকস্টোনকে ফ্রান্সের কোকুয়েলেসের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইংলিশ চ্যানেলের উপসাগরের মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে সুড়ঙ্গটি। আজকের এই দিনে ১৯৯৪ সালের ৬ মে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে রেল সুড়ঙ্গটির উদ্বোধন করেন। যদিও এই সুড়ঙ্গ দিয়ে ‘ইউরোস্টার’ নামের রেল পরিষেবা চালু হয় ঐ বছরের নভেম্বর থেকে।

৫০ কিলোমিটারের এই সুড়ঙ্গ পার হতে মাত্র ৩৫ মিনিট সময় লাগে। সময় সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি চালু হওয়ার অল্প দিনের মধ্যেই ফেরির বদলে মানুষ সুড়ঙ্গ দিয়ে চলাচল শুরু করে। অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সুড়ঙ্গটি। এমনকি অনেকে বিমান যাত্রার বদলে নদীর তলদেশে গড়ে ওঠা বিশ্বের বৃহত্তর এই সুড়ঙ্গ দিয়ে চলা ট্রেনকেই অগ্রাধিকার দেয়।

সুড়ঙ্গের দুই পাশে রয়েছে দুইটি রেল স্টেশন যার একটি যুক্তরাজ্যে, অন্যটি ফ্রান্সে অবস্থিত। ব্রিটেন থেকে সরাসরি ব্রাসেলস কিংবা আমস্টারডাম পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে এই রেল সুড়ঙ্গ। ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ধারণা প্রথম উত্থাপিত হয় ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে। ব্রিটিশ রাজনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি কারণে বিলম্বিত হয় এর কাজ। অবশেষে ইউরোটানেল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। আর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। প্রাথমিকভাবে নির্মাণ ব্যয় ৪.৬৫০ বিলিয়ন পাউন্ড ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছিল ৭.২ বিলিয়ন পাউন্ড। প্রায় ১৩ হাজার শ্রমিক এর নির্মাণ কাজে অংশ নিয়েছিল। টানেলের ৫০.৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৩.৩ কিলোমিটার ফ্রান্স অংশে ভূ-পৃষ্ঠের নিচে, ৯.৩ কিলোমিটার ইংল্যান্ডের ভূ-পৃষ্ঠের নিচে এবং ৩৭.৯ কিলোমিটার সমুদ্রের নিচে অবস্থিত।

গত ২৫ বছরে এই সুড়ঙ্গ দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যের সম্পর্ককেও আরো গভীর করেছে। প্রতি বছর ৪৫ লাখ মানুষ চ্যানেল সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেন। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে ১৪০ বিলিয়ন ডলারের মালামাল পারাপার হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকায়ন হয়েছে ‘চ্যানেল টানেল’ সুড়ঙ্গের রেল ব্যবস্থা। সুড়ঙ্গ দিয়ে চলছে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ট্রেনও। তাই দিন দিন আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে এই সুড়ঙ্গ। বলতে গেলে ইউরোপের পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এই চ্যানেল সুড়ঙ্গ।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button