বাধ্যতামূলক বয়স যাচাইকরণের পদ্ধতি বিশ্বে এই প্রথম

পর্নোগ্রাফির ওপর ব্রিটেনে আসছে নতুন বিধিনিষেধ

আগামী জুলাই থেকে পর্নোগ্রাফির ওপর ব্রিটেনের নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। ১৫ই জুলাই থেকে কোনো ব্যক্তি পর্ন দেখতে চাইলে, তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার বয়স প্রকৃতপক্ষেই ১৮ বছরের উর্ধ্বে। অন্যথায়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নির্মিত কনটেন্ট তার জন্য ব্লক করা হবে। তবে সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে নাগরিকদের ডিজিটাল অধিকার রক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সংগঠন।

খবরে বলা হয়, নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, যেকোনো বাণিজ্যিক পর্ন ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাই করার শক্তিশালী ব্যবস্থা সংযুক্ত করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। বয়স ১৮ বছরের উর্ধ্বে, তা নিশ্চিত করতে এখন ব্যবহারকারীদেরকে নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে। অন্যথায়, নির্ধারিত এজেন্টদের কাছ থেকে পাস কিনে নিতে হবে। সরকার অবশ্য বলছে, বয়স প্রমাণ করার আরও অনেক পন্থা থাকবে। শুধুমাত্র বয়স ১৮ বছরের উর্ধ্বে বলে দিলেই হবে না। যদি কোনো পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট এই নিয়ম বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদেরকে যুক্তরাজ্যের ব্যবহারকারীদের জন্য কোনো পেমেন্ট সেবা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। সরকারের যুক্তি, ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট দেখে শিশুদের মনন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্যই এই নতুন বিধান প্রনয়ণ করা হয়েছে।

ব্রিটেনের ডিজিটাল মন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট এখন ইন্টারনেটে এত বেশি যে শিশুরা খুব সহজেই অনলাইনে সেগুলো পাচ্ছে। বাধ্যতামূলক বয়স যাচাইকরণের যেই পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি আমরা, সেটি বিশ্বে এই প্রথম। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্পর্কিত উদ্বেগ ও পর্নোগ্রাফির গ্রাস থেকে শিশুদের রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা- এই দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে আমরা যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছি। আমরা চাই যুক্তরাজ্য হবে শিশুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ। এই নতুন আইন আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।’

তবে ডিজিটাল অধিকার রক্ষা কর্মীরা এই নতুন বিধানের কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, নতুন আইনের ফলে ইন্টারনেটের ওপর বড় ধরণের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হলো। যারা এই নিয়ম মেনে নিজের বয়স প্রমাণ করতে যাবেন, তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।

ওপেন রাইটস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক জিম কিলক বলেছেন, ‘সরকারের উচিত মানুষের গোপনীয়তা যাতে সুরক্ষিত রাখা হয় সেজন্য কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করা। এসবকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে বিবেচনা করাটা বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সামিল।’
তিনি আরও বলেন, নতুন আইনের ফলে প্রতারকরা অনেক সুবিধা পাবে। কোনো কারণে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তা হবে বিপজ্জনক। এর জন্য দায়ী হবে কেবল সরকার। তার ভাষ্য, ‘সরকারকে অবশ্যই আগে মানুষের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টি সুরক্ষিত করতে হবে ও আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো পরে সরকারের এই নীতির কারণেই অনেক মানুষের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যেতে পারে, ক্যারিয়ার বিনষ্ট হবে, এমনকি অনেকে আত্মহত্যাও প্ররোচিত হতে পারে।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button