সোশ্যাল মিডিয়াকে যুক্তরাজ্যের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়াগুলোকে এক ধরনের হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। প্রয়োজনে কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। ক্ষতিকর কনটেন্ট বা অডিও-ভিজুয়াল বার্তাগুলো যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নেয়া না হয় তাহলে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।

বিভিন্ন বস্তু যেগুলো দিয়ে একজন ব্যক্তি আত্মহনন করতে পারে বা নিজেকে আঘাত করতে পারে সেসব বস্তুর বিজ্ঞাপন তীব্রভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাই সেই বিষয়ক পোস্টগুলোকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে সরিয়ে নিতে জোর দেয়া হয়েছে।

একজন কিশোরীর আত্মহত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিকারক এসব বস্তু নিয়ে মন্ত্রীর এই কঠোর হুঁশিয়ারি এলো। আত্মহত্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো বিষয়বস্তুর কারণে বা কোন ‘অস্বস্তিদায়ক কনটেন্ট’ দেখে ২০১৭ সালে আত্মহত্যা করেন মলি রাসেল নামে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী।

মলি ২০১৭ সাল আত্মহত্যা করলেও তার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ কোনো সমস্যা ছিল না। তার মৃত্যুর পরে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে যে, মলি সোশাল মিডিয়াতে উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, আত্মপীড়ন ও আত্মহনন নিয়ে বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখছিল। কন্যার মৃত্যুর পর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মলির বাবা বলেন, মেয়ের মৃত্যুর পেছনে ইন্সটাগ্র্যামের একটা বড় ভূমিকা আছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। এছাড়া, অনলাইন স্ক্র্যাপবুক পিন্টারেস্টকেও দায়ী মনে করছেন তিনি। সানডে টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পিন্টারেস্টের সাথে তার মেয়ের আত্মহত্যার সংযোগের বিষয়ে তিনি তুলে ধরেন।

ইন্সটাগ্র্যাম এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে, তাদের একটি বিশেষজ্ঞ দল রয়েছে যারা মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মপীড়নের মতন ‘জটিল ও সূক্ষ্ম’ বিষয়ে পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি, ইন্সট্যাগ্রাম আরও বলেছে, তাদের বিশেষজ্ঞ দল মনে করে যে, অনেক ক্ষেত্রেই অন্যের সাথে যোগাযোগ ও আলাপচারিতার ফলে অনেকেই আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে পারে। কিন্তু এরপরও ইন্সট্যাগ্র্যাম তার নীতিমালা পুনরায় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পিন্টারেস্টের মুখপাত্র জানিয়েছে, ক্ষতিকর কন্টেন্ট ঠেকানোর জন্য তাদের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, এরপরও আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে। তাই গত কয়েকমাস ধরে পিন্টারেস্ট তাদের নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সবচেয়ে বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক থেকে দু:খ প্রকাশ করা হয়েছে।

ফেসবুক বলেছে, আত্মপীড়ন ও আত্মহত্যা নিয়ে ইন্টারনেটে যেসব গ্রাফিক ও সংবেদনশীল বিষয়বস্তু আছে সেগুলো ফেসবুকে নেই। তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা ঠেকাতে বহুদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে জনহিতৈষীমূলক সংস্থা প্যাপিরাস। প্যাপিরাস জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির সাথে প্রায় ৩০টি পরিবার যোগাযোগ করেছে এবং তারা মনে করে যে, তাদের সন্তানদের আত্মহত্যার পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ভূমিকা রয়েছে।

টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, পিন্টারেস্ট, এপল, গুগোল ও ফেসবুকের কাছে এক চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। যে সব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই আত্মপীড়ন ও আত্মহত্যা ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, সেই চিঠিতে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে, এই বিষয়ে যে আরো অনেক কিছু করার আছে সে বিষয়েও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হ্যানকক বলেছেন, “সোশাল মিডিয়ার এই যুগে অনেক অভিভাবক অসহায় বোধ করেন। কিন্তু আমরা আসলে দুর্বল নই। সরকার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু দায়-দায়িত্ব রয়েছে।”

পাশাপাশি মন্ত্রী এটিও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি চান তার দেশ যুক্তরাজ্য আরো নিরাপদ দেশ হোক। মলির মা-বাবা যে কষ্টের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছে সেরকমটা যেনও অন্য আর কারো ক্ষেত্রে না ঘটুক।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button