নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাব উত্থাপন করলেন থেরেসো

দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা নাকচ

বৃটিশ পার্লামেন্টে সোমবার নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাব (প্ল্যান বি) উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসো মে। তবে এই প্রস্তাবে গণভোটের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, দ্বিতীয় গণভোট হলে তা ব্রিটেনের ‘সামাজিক সংহতি’কে হুমকিতে ফেলবে। তিনি জানান, তার নতুন ব্রেক্সিট প্রস্তাবের কেন্দ্রবিন্দু হলো আইরিশ ব্যাকস্টপে পরিবর্তন আনা। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিতীয় গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। আগামী ২৯ জানুয়ারি নতুন প্রস্তাব নিয়ে পার্লামেন্ট ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী মার্চের ২৯ তারিখে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসা) সম্পন্ন হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। পরবর্তী সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে গত নভেম্বরে জোটটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। গত ১৫ জানুয়ারি সেই ব্রেক্সিট খসড়া পরিকল্পনা পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এখন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে খসড়া চুক্তি নিয়ে পরাজিত হলেও ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে কোনরকমে (মাত্র ১৯ ভোটে) টিকে যান থেরেসো মে। এতে ‘সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্রেক্সিট পরিকল্পনা’ নিয়ে ইউরোপকে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ আসে তার হাতে। সোমবার ‘প্ল্যান বি’ নামের সংশোধিত সে প্রস্তাব উত্থাপন করেন থেরেসো মে।

হাউস অব কমন্সে দেওয়া বক্তব্যে থেরেসো মে দাবি করেছেন, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর নতুন প্রস্তাবে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। থেরোসা জানান, আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা নিয়ে আরও আলোচনা করা হবে। প্রথম খসড়া প্রস্তাবে থাকা আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা নিয়ে অনেকের মধ্যে আপত্তি রয়েছে। নর্দান আয়ারল্যান্ড ও আইরিশ রিপাবলিকের মধ্যে দৃশ্যমান সীমান্ত ও কাস্টমস চেক না রাখতে আইরিশ ব্যাকস্টপ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মানে হলো ইইউ-এর একক বাজারের কিছু নীতিমালা মেনে চলবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। পাশাপাশি, যুক্তরাজ্য ও ইইউ-এর মধ্যে টেকসই কোনও বাণিজ্য চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরভাবে যুক্তরাজ্য শুল্ক সংঘে থাকবে। কনজারভেটিভ পার্টির অনেক আইনপ্রণেতা ও ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি ব্যাকস্টপের বিরোধিতা করছে। কারণ, তাদের আশঙ্কা এ নীতি স্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম জারি হতে পারে।
১৫ জানুয়ারি পার্লামেন্টে প্রথম ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বিভিন্ন দলের আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন থেরেসো মে। অনেকেই তাকে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট পরিস্থিতি এড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিতীয় গণভোটেরও দাবি জানিয়েছেন অনেকে। সোমবার থেরেসো মে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই দুই দাবি মানতে পারবেন না তিনি। দ্বিতীয় গণভোটের পরিণতি ভালো হবে না বলে সতর্ক করেছেন টেরিজা। তার দাবি, দ্বিতীয় গণভোট আয়োজিত হলে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস খর্ব হবে এবং এর মধ্য দিয়ে সামাজিক ঐক্যে ফাটল ধরবে।
থেরেসো মে’র সংশোধিত প্রস্তাবটি নিয়ে ২৯ জানুয়ারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে ভোটাভুটি হবে। তবে নতুন ব্রেক্সিট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে সংকট সমাধান করতে চাইলে তা নির্ধারিত ২৯ মার্চের মধ্যে সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আইন ‘আর্টিকেল ৫০’-এর সংযোজনী (এক্সটেনশন) এনে তা বিলম্বিত করতে হবে। বিলম্বিত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সফল করতে প্রথমত সময়সীমা বাড়ানোর জন্য ইইউ’র কাছে আবেদন জানাতে হবে। ইউরোপীয় কাউন্সিলে আয়োজিত ভোটাভুটিতে সবক’টি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের সমর্থন পেলেই কেবল ব্রেক্সিট বিলম্বিত করা যাবে। দ্বিতীয়ত, ইইউ উইথড্রয়াল অ্যাক্টে ‘বিচ্ছিন্ন হওয়ার দিন’-এর সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ তারিখ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভোটাভুটিতে অংশ নিতে পারবেন ব্রিটিশ এমপিরা। তবে নতুন আলোচনায় অংশ নিতে ইইউ এর সম্মতি আবশ্যক। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে এখন বিতর্ক করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। তারা নতুন আলোচনায় রাজি না হলে যুক্তরাজ্যকে বিকল্প পথ ভাবতে হবে। তবে তার আগেই পার্লামেন্টে টেরিজার বিকল্প প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে হাঁটতে হবে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের (নো ডিল ব্রেক্সিট) পথে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button