ব্রেক্সিট চুক্তিতে অগ্রগতি নেই

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে’র নিরলস পরিশ্রমের পরও ইইউ’র সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তিতে কার্যত কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। দিনের পর দিন দরকষাকষি করেও কোনোভাবেই দু’পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারছে না। এ অবস্থায় নভেম্বরে যে বিশেষ সম্মেলনে ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল, তার পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন ইউরোপের নেতারা। এমন অবস্থায় এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরো এক বছর সময় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তেরেসা মে’। এর ফলে তার ক্ষমতাসীন কনজার্ভেটিভ দলের এমপিদের মধ্যেই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, তিনি এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যে এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন তাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ব্রিটেনের কয়েক শত কোটি পাউন্ড ফি বেশি দিতে হবে। এ জন্য তেরেসা মে’কে তার পরিকল্পনা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন তার দলেরই কয়েকজন এমপি। ব্রিটেনের বিজনেস ইনসাইডারে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, তারা তেরেসা মে’কে পদত্যাগ করতেও বলতে পারেন।

খবরে বলা হয়, বুধবার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। সেখানে ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটেনের বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। কিন্তু ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের প্রধান অ্যান্তোনিও তাজানি বলেন, তেরেসা মে’র উপস্থাপনায় নতুন কিছু ছিল না। বৃটেন পূর্বের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। ব্রিটিশ সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করলে ইইউ কোনো চুক্তিতে যাবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তবে ইইউ নেতারা এখনো সমঝোতার সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছেন। তাজানি বলেন, বিরাট কোনো পরিবর্তন ঘটলে এখনো নভেম্বরে ব্রেক্সিট চুক্তি স্বাক্ষরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইইউ’র সঙ্গে ব্রেক্সিট চুক্তি করার জন্য ব্রিটেনের হাতে থাকা সময় ক্রমেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মে সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্রিটিশ রাজনীতিবিদদের সমর্থন লাভ করতে পারেননি। ইইউ’র সঙ্গে আরো কঠোর বিচ্ছেদ চায় এমন ব্রেক্সিটপন্থিদের দাবি, তেরেসা মে ইইউর প্রতি তুলনামূলক বেশি নমনীয়। আবার কিছু মানুষ চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের ভয়ে চেকার্সের ব্রেক্সিট পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন না। এমন অনিশ্চিত জনসমর্থন নিয়েই বুধবার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ইউরোপের নেতাদের সামনে বক্তৃতা করেন। যাতে তিনি সম্প্রীতির বার্তা দেন। মে বলেন, আমরা দেখিয়েছি যে, আমরা একসঙ্গে গঠনমূলক চুক্তি করতে পারি। আমি এখনো ভালো কিছুর প্রত্যাশা করি। কিন্তু অ্যান্তোনিও তাজানির দাবি, মে’র বক্তৃতায় বিষয়বস্তুর ঘাটতি রয়েছে। তাজানি বলেন, ব্রেক্সিটের অন্তর্বর্তীকালীন সময় ২১ মাস থেকে বাড়িয়ে ৩৩ মাস করার বিষয়ে কথা বলেছেন উভয় পক্ষ। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে তাজানি বলেন, আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রধান ইস্যু হলো আয়ারল্যান্ড। আমরা আইরিশ রিপাবলিককে সুরক্ষা দিতে চাই। আমাদের কাছে এটা অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আশাবাদী। চুক্তি করা সহজ না, কিন্তু এটা করা সম্ভব।’

সম্মেলন শেষে তেরেসা মে চলে যাওয়ার পর ইউরোপের নেতারা নিজেদের মধ্যে ব্রেক্সিট ইস্যুতে আলোচনা করেন। ইইউ’র প্রধান মধ্যস্থতাকারী মাইকেল বার্নার ব্রেক্সিট চুক্তির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের ব্রিফ করেন। আর ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জ্যা ক্লদ জাঙ্কার চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেন। একটি সূত্র বলছে, বৈঠকে ইউরোপের নেতারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মাইকেল বার্নারের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে নভেম্বরে কোনো বিশেষ ব্রেক্সিট সামিট আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেন তারা। কেননা তারা মনে করছেন, উভয়পক্ষের সমঝোতায় বিশেষ কোনো অগ্রগতি হয়নি।

বিজনেস ইনসাইডার লিখেছে, নিজের দলের সব শাখা থেকে বড় ধরনের বিরোধের শিকার হচ্ছেন। তিনি বুধবার রাতে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের উদ্দেশে এক নৈশভোজে নিজের পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। তাতে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে বৃটেনের আরো এক বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২১ সালের শেষের দিকে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে সক্ষম হবেন। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, এমন সময় বর্ধিত করার প্রয়োজন না-ও হতে পারে। তবে সময় কয়েক মাস বাড়ানোর প্রয়োজন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button