ব্রেক্সিট ইস্যুতে ফের ধাক্কা খেলেন থেরেসা মে

এবার বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ

ব্রেক্সিট ইস্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’কে চাপে ফেলে তার মন্ত্রিসভার আকেজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারী স্যাম গিমাহ ছিলেন থেরেসার মন্ত্রিসভার সদস্য বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। শুক্রবার তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগকে থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনাকে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর আগে পদত্যাগ করা মন্ত্রীদের মতো তার পদত্যাগের কারণও থেরেসার ব্রেক্সিট চুক্তিতে থাকা শর্তের বিরোধিতা। তিনি বলেছেন, থেরেসার প্রস্তাব অনুযায়ী ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন হয়ে গেলে যুক্তরাজ্য তার ‘দাবি আদায় ও প্রতিবাদের অধিকার হারাবে।’ থেরেসার উচিত ব্রেক্সিটের বিষয়ে দ্বিতীয় গণভোটের দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া।

২০১৬ সালে গণভোটের সময় স্যাম গিমাহ যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের থাকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এই এমপি থেরেসার মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পান।

ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র দৃঢ়তার প্রশংসা করলেও গিমাহ মনে করেন, ‘এটা ক্রমেই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, প্রস্তাবিত চুক্তিটি যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে যাবে না। এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে তা আমাদের ব্যার্থতাকেই নিশ্চিত করে তুলবে। আমরা যদি আমাদের জাতীয় স্বার্থের নিয়ন্ত্রণ না নেই, তাহলে তা আমাদেরই পরাজয়ের কারণ হবে।’

থেরেসা মে যে চুক্তি চ‚ড়ান্ত করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে দেশটি প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামোগত প্রয়োজনে ইইউয়ের গ্যালিলিও প্রকল্পের সেবা নেবে না। অথচ ইইউভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের’ (জিপিএস) সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেদের গ্যালিলিও প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল। গিমাহর মন্তব্য, ‘গ্যালিলিওর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্যের অবস্থা কী হবে।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে চাইছেন, তা নিয়ে মতবিরোধে এরই মধ্যে তার সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস, তার পরপর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। নভেম্বরের ৯ তারিখে পদত্যাগ করেন যুক্তরাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী জো জনসন। গত ১৫ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাব, স্টেট ফর ওয়াকর্ অ্যান্ড পেনসন মন্ত্রী এসথার ম্যাকভে, ব্রেক্সিট মন্ত্রণালয়ের আরেক মন্ত্রী সুয়েলা ব্রাভেরম্যান এবং নদার্নর্ আয়ারল্যান্ড বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শৈলেশ ভারা।

আপত্তির মূল বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে নর্দান আয়ারল্যান্ডের জন্য প্রযোজ্য শুল্কের বিধান। নর্দান আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হলেও থেরেসা মে’র সর্বশেষ ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় অঞ্চলটিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর রাখার কথা বলা হয়েছে। এবার আপত্তির তালিকায় যুক্ত হলো বিজ্ঞান বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রস্তাবিত অবস্থান।

ব্রিটিশদের মধ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে রয়েছে প্রবল ভিন্নমত। একদিকে জরিপে ব্রেক্সিট গণভোট পরবর্তী সময়ে দেশটির জনগণের মনোভাব পাল্টে যাওয়ার চিত্র দেখা গেছে জরিপে, তেমনি ব্রেক্সিটবিরোধীদের অনেকে দাবি তুলেছেন আরেকটি গণভোটের। ডিসেম্বরেই চুক্তিটি ব্রিটিশ পার্লােমেন্টে উঠবে ভোটাভুটির জন্য। সেখানে যদি ব্রেক্সিট চুক্তিটি হেরে যায়, তাহলে কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কাযর্করের দিকে যেতে হতে পারে, যাতে পরে শর্তগুলো চ‚ড়ান্ত করা যায়। আবার নতুন গণভোটের দাবিটিকেও বাস্তবায়িত হতে দেখা যেতে পারে। থেরেসা মে তার প্রস্তাবিত চুক্তিটি নিয়ে আশাবাদী হলেও প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কনজারভেটিভ পার্টির সংসদ সদস্য সারাহ ওলাস্টোন মন্তব্য করেছেন, ‘উজ্জ্বল নয়, সামনে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ।’

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button