সিরাতে আয়েশা (রা:): একটি অসাধারণ বই

শাহ্ আব্দুল হান্নান: উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা:-এর জীবনীর ওপর সাইয়েদ সুলাইমান নদভী (রহ:) রচিত ‘সিরাতে আয়েশা’ গ্রন্থটি পড়লাম।
সাইয়্যেদ সুলাইমান নদভী গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন ছিলেন। তিনি বইটি উর্দুতে লিখেছিলেন এবং তার অনেক সংস্করণ ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন মাওলানা মাহাম্মদ রাফিকুল ইসলাম এবং প্রকাশ করেছে রাহনুমা প্রকাশনী, ইসলামী টাওয়ার, ৩৮, বাংলা বাজার, ঢাকা। পাঁচ শত পৃষ্ঠার বইটি পড়লে বুঝা যায়, হজরত আয়েশা রা:-এর বিবাহিত জীবন, বিভিন্ন খলিফার সময়ে তার সামাজিক, শিক্ষাগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা এবং কুরআনের জ্ঞানে তার অবস্থান সম্পর্কে। হাদিস রেওয়ায়েত এবং হাদিস ব্যাখ্যায় তার স্থান, ফিকাহ্, ফতোয়া ও ইজতিহাদের ক্ষেত্রে তার স্থান, তার শিক্ষালয় ও ছাত্রছাত্রীরা ইত্যাদি বিষয়ও অবগত হওয়া যায়।

কুরআন মজিদের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। হজরত আয়েশা রা:-এর নিজস্ব কুরআনের মাসহাফ (কপি) ছিল, যা তিনি নিজে বলতেন এবং আবু ইউসুফ নামে একজন কর্মচারী তার কথা শুনে লিখতেন (পৃষ্ঠা ২৫৫, সিরাতে আয়েশা)।

আয়েশা রা: কুরআনের শ্রেষ্ঠ তাফসিরকারদের একজন ছিলেন। তিনি অনেক আয়াতের তাফসির করেছেন। এর কিছু সিরাতে আয়েশা রা:-এর ২৫৭-২৬৬ পৃষ্ঠায় দেখা যায়।
হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও হজরত আয়েশা রা: প্রধান সাতজন সাহাবির মধ্যে একজন, যারা দুই হাজারের বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। বিশেষত, হাদিসের বুঝের ক্ষেত্রে তার অবস্থান ছিল অসামান্য। তার বর্ণিত হাদিসকে অন্যদের বর্ণনার ওপর প্রাধান্য দেয়া হতো। তিনি হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলেন এবং অন্য সাহাবাদের হাদিস বর্ণনায় ভুল হলে তা তিনি সংশোধন করে দিতেন (পৃষ্ঠা ২৭৭-২৯৬)।

হজরত আয়েশা রা: ফিকাহের ক্ষেত্রে খুবই গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তার ইজতিহাদের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে (পৃষ্ঠা ২৯৮-৩১২)। অন্যান্য সাহাবা থেকে তিনি ফিকাহ ক্ষেত্রে যেসব মতভেদ করেছেন, তার কিছু উদাহরণ এই পৃষ্ঠাগুলোতে দেয়া হয়েছে। তার কাছে খলিফাদের, শ্রেষ্ঠ সাহাবাদের এবং সারা মুসলিম জাহান থেকে ফতোয়া চাওয়া হতো।

হজরত আয়েশা মদিনায় তার শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেন। সেটি ছিল মসজিদে নববীর পাশের একটি ছাউনি। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন অনেক সাহাবি; যেমন আবু মুসা আশয়ারী, হজরত আবু হুরাইরা, ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস। সাইয়েদ সুলাইমান নদভী হজরত আয়েশা রা:-এর পুরুষ ও নারী শিষ্যদের তালিকা দিয়েছেন (পৃষ্ঠা ৩৬৮-৩৭৬)।

নারীদের মধ্যে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সাহাবিদের মধ্যে হজরত আয়েশা রা:-এর স্থান কী ছিল, সে সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজাম বলেছেন, ‘শুধু নারীদের মধ্যে নয়, সব সাহাবির মধ্যেও রাসূল সা:- এর পর তার স্থান ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। ইবনে তাইমিয়াহ বলেছেন, ‘যদি জ্ঞান প্রজ্ঞার পূর্ণতা, ব্যাপক পরিসরে ধর্মীয় কার্যক্রম এবং রাসূল সা:-এর রেখে যাওয়া শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবনাদর্শের প্রচার-প্রসারের দিকটি সামনে আনা হয়, তা হলে হয়তো আয়েশা রা:-এর সমকক্ষ কেউ হতে পারেন না। সিরাতে আয়েশা (পৃষ্ঠা ৪১৬-৪১৭)।

রাসূল সা:-এর সাথে বিবাহের সময় হজরত আয়েশা রা:-এর বয়স কত ছিল? এ ব্যাপারে সুলাইমান নদভী সাধারণভাবে বর্ণিত মতই গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ, তখন তার বয়স ছিল ৯-১০ বছর। তবে তিনি মাওলানা মোহাম্মদ আলীর দেয়া এ মর্মে ভিন্নমত যে, তখন আয়েশা রা:-এর বয়স ছিল অন্তত ১৬, সে মত ও তার যুক্তিও দিয়েছেন। এরপর গত ৬০-৭০ বছর ধরে যে রিসার্চ হয়েছে এ বিষয়ে, তাতে এখন প্রায় সর্বসম্মত মত হচ্ছে যে, বিবাহের সময় হয়তো আয়েশা রা:-এর বয়স ছিল ১৬ বা তার বেশি।

আমি আশা করব, সবাই এই বইটি পড়বেন।

-লেখক: সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button