অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার রায় সোমবার : জামায়াতের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

Gulam Azomএকাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে সোমবার। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।
১৭ এপ্রিল মামলার কার্যক্রম শেষে রায় অপেক্ষমমান রাখেন আদালত।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রিপ্লাই যুক্তিতর্কসহ মোট ১০ দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, সৈয়দ হায়দার আলী, ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ।
ওইদিন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন বলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, গোলাম আযমের সর্বোচ্চ সাজা হবে।
এর আগে আসামিপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন মোট ১৩ দিন।
গোলাম আযমের পক্ষে সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী।
আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় আমরা যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেছি।
তিনি বলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৬১টি অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগগুলোর প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের জন্য গোলাম আযমকে দায়ী করার পাশাপাশি ওই সময় যত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে জন্য তাকে মাস্টার মাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এর পক্ষে তারা কোনো ডকুমেন্ট দিতে পারেনি বলে মন্তব্য রাজ্জাকের।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, আমরা কোর্টে পরিষ্কারভাবে বলেছি প্রসিকিউশন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণাদি হাজির করতে পারেননি। তারা যেসব অভিযোগ এনেছে সে বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট দাখিল করতে পারেননি।
সুতরাং প্রসিকিউশনের এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে গোলাম আযমকে শাস্তি দেয়া ঠিক হবে না।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ অন্য প্রসিকিউটরা।
এদিকে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষীদের ১২ জনের মধ্যে মাত্র ১ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) মতিউর রহমানসহ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে জব্দ তালিকার ৭ সাক্ষীসহ মোট ১৭ সাক্ষী প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের সুনির্দিষ্ট ৬১টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে ২০১২ সালের ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত দুটি ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ৪টি মামলার রায় দিয়েছেন। এই ৪টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে রায় ঘোষণার জন্য গড়ে এক মাস করে সময় লেগেছে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য (রুকন) পলাতক আবুল কালাম আযাদের মৃত্যুদ-ের ওই রায় দিতে ট্রাইব্যুনালের সময় লাগে ২৬ দিন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছিল।
দ্বিতীয় রায়ও আসে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল থেকে। ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন ট্রাইব্যুনাল। ১৭ জানুয়ারি কার্যক্রম শেষ হওয়া ওই মামলার রায় হয় ১৮ দিন পর।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় রায় ও ট্রাইব্যুনাল-১-এর প্রথম রায় আসে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়। এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছিল ঠিক এক মাস আগে, ২৯ জানুয়ারি। সর্বশেষ রায় আসে ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে, যাতে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। ১৬ এপ্রিল এই মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ২৩ দিন পর ৯ মে রায় ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়ের তারিখ ঘোষণা করায় এই হরতালের ডাক দেয়া হয়। রবিবার দুপুরে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই হরতালের ডাক দেয় জামায়াত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button