আমার চেয়ে ভালো কে ইসলামের হেফাজত করবে : প্রধানমন্ত্রী

PMপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াত ধর্মের নামে জনগণকে বিভ্রান্ত করে পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে ভোট নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে যে, বিএনপি ও জামায়াত তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। বরিশাল বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ও জামায়াত অপপ্রচার চালাতে দক্ষ যা পাঁচ সিটি কর্পোরেশনে আমাদের পরাজয়ের প্রধান কারণ। জনগণ এখন বুঝতে পেরেছে যে, তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। তাই তারা তাদের মনোভাব পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের কয়েক হাজার কর্মী নিহত হয়েছিল বলে বিএনপি মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে। তারা হাইতিতে ভূমিকম্পে নিহত এবং যুক্তরাষ্ট্রের জোনস টাউনে গণআত্মহত্যার ঘটনার ছবি দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নতি হয়। তিনি বলেন, ‘জনগণ কিছু পায় এবং তারা সুখে ও শান্তিতে বসবাস করে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়।’ অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জনগণ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়। বিএনপি দুর্নীতি, জনগণের সম্পদ লুট ও হত্যাকান্ডে লিপ্ত থাকে বলে বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই নিজের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় আসে না। এই দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই জনগণের কল্যাণের কথা মনে রেখে আওয়ামী লীগ সব সময় কাজ করে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশব্যাপী নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ এখনো এসব নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার কথা ভুলে যায়নি। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সাংবাদিকরা বিএনপির আমলে তাদের বাড়িতে থাকতে পারতো না। বিএনপির গুন্ডামি ও সন্ত্রাসের কারণে বরিশালের লোকজনকে কোটালিপাড়ায় আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, মাথাপিছু আয় ১০৪৪ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে এবং সার্বিক দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে। সরকার দেশের শস্যভান্ডার হিসাবে দক্ষিণাঞ্চলের সুনাম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বিগত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালে সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিল এবং একই কাজ করার জন্য তারা আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত আবার ক্ষমতায় এলে সব উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ হয়ে যাবে এবং দেশ আবারও অন্ধকারে নিপতিত হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস এমপি এবং সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন সভাপতি কে বি এস আহমেদ কবীর ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম কবীর বাদল। প্রধানমন্ত্রী বরিশাল বার এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত নেতাদের অভিনন্দন জানান।
বার এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব এবং তার নেতৃত্বে দেশের ব্যাপক সাফল্যের প্রশংসা করেন। তারা বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানান। জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা পবিত্র কোরআন শরীফের হাজার হাজার কপি পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজ আদায় ও কোরআন শরীফ পড়ার মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করি। অন্যদিকে, তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করছে। আমার চেয়ে ভাল কারা ইসলামের হেফাজত করবে।’ গত রোববার এক জনসভায় বিরোধী দলীয় নেত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেছেন, পুলিশ শাপলা চত্বরে দেড় লাখ গুলি বর্ষণ করেছে। মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে কিভাবে এত গুলিবর্ষণ সম্ভব হল। তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে প্রশ্ন রেখে বলেন, হাজার হাজার মৃতদেহ এবং আহতদের সরিয়ে নিতে কত সংখ্যক লোকের প্রয়োজন হতো? এছাড়াও তারা গুজব ছড়িয়েছে যে, ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কিন্তু ঘটনার পরও মুসলমানরা রমজান মাসে তাদের সকল ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেছে। অন্যান্য নামাজের পাশাপাশি সকল মসজিদে তারাবী নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পূর্বের স্টাইলে একই রকম প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে সকল মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে। কিন্তু মুসলমানরা যখন সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠান উৎসবমূখর ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন করেছে- তখন বিএনপি-জামায়াতের প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারা দাবি করেছিল, বাংলাদেশ ভারতের অংশে পরিণত হবে, কিন্তু তাও মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
পরে, ভিসি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ খানের নেতৃত্বে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কর্মকা- নিয়ে আলোচনা করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেম্বার হারুন অর রশিদ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাভার দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক চেক হস্তান্তর বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অষ্টম পর্যায়ের আর্থিক সহায়তার চেক আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) হস্তান্তর করবেন। তিনি কাল সকাল সাড়ে ১০টায় তার তেজগাঁও কার্যালয়ে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ একথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সাভারে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ৭৭৭ জনের পরিবারের ১০১৬ জনকে এ পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ওই তহবিল থেকে আহত ৩০ জনকে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেয়া হয়েছে।
সরকারি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা এবং নিহতদের পরিবার ও আহত কর্মীদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ৭ ধাপে এ পর্যন্ত ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ পর্যন্ত ২২টি হাসপাতালে আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত উদ্ধারকর্মী কায়কোবাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে ৩৫ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। তিনি নিহত গার্মেন্টস কর্মীদের ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরিকে ৫০ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের অবশিষ্ট পরিবারগুলোকেও পর্যায়ক্রমে আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে। চেক হস্তান্তরের পর প্রধানমন্ত্রী সাভার ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করবেন। -বাসস

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button