বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যমকে নজরদারির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র

newspaperজনগণের অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারিতে গাণিতিক পদ্ধতি ব্যবহার নিয়ে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বেশ আলোচনা হচ্ছে ওয়াশিংটনে। ফেসবুকের মাধ্যমে কয়েক কোটি ব্যবহারকারীর গোপন তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু যখন সংবাদ শিরোনামগুলো আলোকপাত করছে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ ও তার প্রতিষ্ঠান আমাদের সম্পর্কে ঠিক কতটুকু জানে তার ওপর, তখন আরেকটি স্বল্পপরিচিত নজরদারির কাহিনী আরো বেশি হুমকি হয়ে উঠতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে নিশ্চিত করা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য।
গত ৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় নিজেরাই অনলাইনে নজরদারি করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তবে তাদের এই নজরদারি শুধু ব্যক্তি, পরিবার কিংবা সম্প্রদায়ের ওপর হবে না, এর আওতায় থাকবে বিশ্বের কয়েক লাখ সংবাদমাধ্যম। সংখ্যাটি হতে পারে দুই লাখ ৯০ হাজার।
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় এখন এমন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুঁজছে যারা সার্বক্ষণিক ‘মিডিয়া মনিটরিং’ পদ্ধতিটি তৈরি করবে, যেটির মাধ্যমে পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত যেকোনো ওয়েবসাইট, রিপোর্টার, সম্পাদক, প্রতিনিধি, সামাজিক যোগাাযোগমাধ্যম কর্মী, ব্লগারসহ মিডিয়ায় প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করবে। এর মাধ্যমে ওইসব মিডিয়ায় প্রকাশিত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় কিংবা সুনির্দিষ্ট যেকোনো ঘটনার বিষয়ে সব সংবাদ তাদের কাছে পৌঁছবে।
যেকোনো ব্যবসায় বা সহায়ক কোনো বাণিজ্যিক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে মিডিয়া কাভারেজের তথ্য পেতে এই ডাটাবেজটি ব্যবহার করতে পারবে। তবে সংবাদমাধ্যমের সাথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব থেকে অনেক সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার আশঙ্কা করছেন, এই ডাটাবেজটি আরো খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই ডাটাবেজ তৈরির কাজে ঠিকাদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সংবাদটির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য এবং সেই সাথে বিষয়টির সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করার দক্ষতা থাকতে হবে।
এই খবরে অনেকের স্মৃতিতে ফিরে আসছে সাবেক এফবিআই প্রধান জে এডগার হুভারের সময়ের রিপোর্টারদের টেলিফোন ট্যাপ করার ঘটনা। হুভার তার সময়ে এফবিআইয়ের সংগৃহীত তথ্যগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। যেসব সাংবাদিকের ওপর তিনি গোয়েন্দাগিরি করতেন তার মধ্যে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী রিপোর্টার ডেভিড হেলবারস্টামও ছিলেন।
তবে এবার যেটি হচ্ছে তার পরিধি অনেক ব্যাপক, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও এর আওতায় থাকবে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও মিডিয়া পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে হুভারের চেয়ে আরো বেশি সাবধান হতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা যদি টাকার বিনিময়ে কারো ব্যক্তিগত তথ্য সরকারকে দিতে পারে, সরকার তখন তার ও তার অনলাইন কর্মকাণ্ডের ওপর নজরদারি করতে পারবে। সাংবাদিকেরা সহজেই মার্কিন সরকারের আওতায় চলে আসবে। আর শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সংবাদমাধ্যমের বিরোধিতার কারণে বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা আরো বেড়েছে। ট্রাম্প প্রায়ই সংবাদমাধ্যমকে ‘ফেক নিউজ মিডিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button