নাস্তিক ও ইসলাম বিদ্বেষীরা দিশেহারা হয়ে আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে

হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নামে ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে কিছু চিহ্ণিত মিডিয়া ও ব্যক্তি-বিশেষের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের প্রতি দেশের কোটি কোটি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন দেখে ভীত ও দিশেহারা হয়ে শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এবার হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী সম্পর্কে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ করেছে।
তারা হেফাজতের ১৩ দফা দাবির ব্যাপারে নানা অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ব্যর্থ হয়ে এবার হেফাজত আমীরের চরিত্র হননের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর গণহত্যার দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাবে যখন নাস্তিক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারিরা জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হতে শুরু করেছে, তখনই জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এ অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। বিবৃতিদাতারা হলেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুল মালেক হালিম, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী এবং আল্লামা মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী একটি ওয়াজ মাহফিলে ‘কুরুচিপুর্ণ ও নারী বিরোধী’ বক্তব্য দিয়েছেন মর্মে অপপ্রচার চালাচ্ছে নাস্তিক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ওই ভিডিও এর ওপর ভিত্তি করে কিছু চিহ্নিত পত্রিকা, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ও টিভি চ্যানেল আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। এ নিয়ে কোন কোন টিভি চ্যানেল টক শো, বিশেষ রিপোর্ট পর্যন্ত করছে। কয়েকটি পত্রিকাও অতি উৎসাহী ভূমিকা পালন করছে। এসব চিহ্নিত টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার ভূমিকা থেকেই আল্লামা আহমদ শফী সম্পর্কে পরিকল্পিত অপপ্রচারের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ ব্যাপারে আমাদের পরিস্কার বক্তব্য হচ্ছে, আল্লামা শাহ আহমদ শফী এদেশের আলেমকুল শিরোমনি। এদেশে লাখ লাখ আলেম তাঁর ছাত্র। আলেম সমাজসহ এদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানের স্থানে আসীন। আলেম সমাজ নবী-রাসূলগণের উত্তরসুরী (আল-উলামাউ ওরাসাতুল আম্বিয়া)। ৯০ ভাগ মুসলমান অধ্যূষিত বাংলাদেশে মুসলমানরা যাতে কোরআন-হাদীস তথা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারেন, সেজন্য তিনি দিকনির্দেশনামূলক ওয়াজ করে আসছেন। তিনি ইসলামের ফরজ বিধান ‘পর্দা’ লংঘনের কুফল তুলে ধরেন সবসময়। নারী-পুরুষের বিবাহ বহির্ভুত অবাধ-অবৈধ চলাচল ও মেলামেশার ফলে যে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে তার ব্যাপারে বরাবরই সতর্ক করে আসছেন। পাশাপাশি পাশ্চাত্য বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব ও অন্ধ অনুকরণ করে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করার কারণে সমাজে কোন ধরণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে, তাও নিজস্ব ভঙ্গিতে মানুষের সামনে তুলে ধরে আসছেন। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের বিধি বিধানের ব্যাপারে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন দক্ষ জনপ্রিয় ওয়ায়েজিন হিসেবে আল্লামা শাহ আহমদ শফী স্থান কাল পাত্রভেদে ওয়াজের কৌশল অবলম্বন করে আসছেন। গ্রামাঞ্চলে গ্রামের মানুষের বোধগম্য ভাষা ও উদাহরণ দিয়ে, কখনো আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে ওয়াজ করে থাকেন। আবার শহরাঞ্চলে শহরের অধিকতর শিক্ষিত সমাজের উপযোগী ভাষায় বয়ান করে থাকেন। এছাড়া ওয়াজ মাহফিলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে শ্রোতাদের বিষয়টি বোধগম্য করে তোলার কৌশলটি অতি পুরনো। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক ওয়ায়েজিনই গ্রামে প্রচলিত অনেক বিষয়কে রুপকভাবে ধরে নিয়ে উদাহরণ স্বরূপ বক্তব্য দিয়ে থাকেন। গ্রামে প্রচলিত উদাহরণ ও ভাষা এবং বই পুস্তকে ব্যবহৃত ভাষা-শব্দ ওয়াজের ক্ষেত্রে ব্যবহারকে কোনভাবেই কুরুচিপুর্ণ বলা যায় না। আল্লামা শফীর নামে প্রচারিত যেসব শব্দ ও ভাষাকে ‘কুরুচিপুর্ণ’ আখ্যায়িত করা হচ্ছে, এই ধরণের ভাষা বই পুস্তকে, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চিত্রে, স্বাস্থ্য বিষয়ক লিফলেট, বুকলেটে অহরহ দেখা যায়। এই ধরণের উদাহরণ সম্বলিত ওয়াজ যুগ যুগ ধরে গ্রামগঞ্জে চলে আসছে। এসব ওয়াজকে কখনো কুরুচিপুর্ণ বলতে শোন যায়নি।
তাঁরা বলেন, আল্লামা শফী ইসলামের একজন খাদেম। কোরআন হাদীসের আলোকে মানুষকে সঠিক নির্দেশনা দেয়ার আজীবন চেষ্টা করে আসছেন তিনি। ইসলাম যেখানে নারীদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে, সেখানে আল্লামা শফী নারী বিদ্বেষী হবার প্রশ্নই উঠে না। তিনি বরং নারীদেরকে সবসময় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতেই ওয়াজ করে আসছেন। মুলতঃ নারীদের উপযুক্ত ও শরীয়ত সম্মত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি না করে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলার কারণে নারীরা ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ নানা বিপত্তির মুখে পড়ছেন- এমন বক্তব্যই তিনি দিয়ে আসছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের জন্য শরীয়তসম্মত পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় সমাজে কী অবক্ষয় ঘটছে, তাই তুলে ধরছেন। ইসলামের বিধি বিধান না মেনে বিজাতীয় সংস্কৃতি ও জীবন আচারের অন্ধ অনুকরণে মুসলিমপ্রধান এদেশে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই তিনি পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে করণীয় তুলে ধরেছেন। তিনি কখনো নারীদের ঘরে বন্দী রাখার কথা বলেননি। তবে পরিবারে নারীদের প্রধান দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি কখনো নারীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে বলেননি। তবে প্রচলিত সহশিক্ষার কুফলের দিক তুলে ধরে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তিনি সামাজিক নানা অনাচার ব্যাভিচার বৃদ্ধির কারণগুলো চিহ্নিত করে তা তুলে ধরতে গিয়ে কখনো স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। সেটাই হয়তো বিজাতীয় অপসংস্কৃতির ধারক বাহকদের পছন্দ হচ্ছে না। এজন্যই তারা এসব বক্তব্যকে নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য করছেন।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ওয়াজ এবং বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই। তার বক্তব্যকে খন্ডিতভাবে ধারণ করে ভিডিও তৈরী করে কিংবা আধুনিক প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়ে কারসাজি করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে মহল বিশেষ বিভ্রান্তি সৃষ্টিরও অপপ্রয়াসে লিপ্ত হতে পারে। হেফাজতে ইসলামের আমীর হিসেবে আল্লামা শফী যেখানেই বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি হেফাজতের ১৩ দফা দাবির ব্যাপারেই বলেছেন। তিনি নাস্তিক ব্লগারসহ ইসলাম ও রাসুলের দুশমনদের শাস্তির  দাবিতে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি স্থাপন করার ব্যাপারে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যারা আজ আল্লামা শাহ আহমদ শফীর চরিত্রহননের জন্য অপ্রচার চালাচ্ছে, তারাই হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফাকেও মধ্যযুগীয় আখ্যায়িত করে প্রচারণা চালিয়েছে। নারী সম্পর্কিত দাবিকে নারী বিরোধী বলে অপ্রপ্রচার চালিয়েছে। তারাই কিছু তথাকথিত নারীবাদী এবং সুশীল সমাজ নামধারীদের দিয়ে হেফাজতের ১৩ দফার বিরুদ্ধে মানব বন্ধন, নারী সমাবেশ ইত্যাদি করিয়েছে। তারা আল্লামা শফীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে। শাহবাগী নাস্তিকরা আল্লামা শফীর গ্রেফতার দাবিও করেছে।
আজ যারা আল্লামা শফীর বিরুদ্ধে নতুনকরে অপপ্রচারে লিপ্ত, তাদের পরিচয় দেশবাসির কাছে পরিস্কার। হেফাজতের ওপর সরকারের অন্যায় আচরণের প্রভাব কেমন হতে পারে, তা ইতিমধ্যেই পরিস্কার হয়েছে। বিশেষকরে কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। একারণেই ওই মহলটি এখন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ব্যক্তিগত চরিত্রহরণ ও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে আদাপানি খেয়ে নেমেছে। কিন্তু এদেশের ইসলামপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মানুষ নাস্তিক, ইসলাম বিদ্বেষী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের কোন অপপ্রচারেই বিভ্রান্ত হয়নি, হবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লামা শফীর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির যে আন্দোলন চলছে, তা কোন অপপ্রচারেই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। বরং যারা হেফাজতের ১৩ দফাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে, নাস্তিকদের এখানো মদদ দিয়ে যাচ্ছে, হেফাজতের দাবিকে উপেক্ষা করেছে, হেফাজতের ওপর রাতের আঁধারে গণহত্যা চালিয়েছে, আলেমদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে, তারা ক্রমেই আরো গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button