বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ইইউ’র বৈঠক

ছয়টি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাইবে ইইউ

EUরাজনৈতিক সংলাপ, নিখোঁজ সালাহউদ্দিনকে খুঁজে বের করা, বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, রাজনৈতিক কর্মসূচির জায়গা সঙ্কুচিত হওয়া, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা এবং রাজনৈতিক হত্যায় পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের উৎসাহী বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চাইবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের উপায় বের করতে বৈঠক করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
বৃহষ্পতিবার ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে- ‘অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে ও অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসতে হবে’- এই মর্মে বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। একই সাথে ছয়টি বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে ইইউর প থেকে।
যে ছয়টি বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাইবে ইইউ তা হলো :
প্রথমত, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপে এবং অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের লক্ষে বিরোধী দলের সাথে রাজনৈতিক সংলাপের আয়োজন করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে খুঁজে বের করতে ‘তদন্ত বা কোন ধরনের উদ্যোগ’ সরকার নিয়েছে।
তৃতীয়ত, জানতে চাওয়া হবে, ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ এখনো কেন বন্ধ হয়নি। দ্রুত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও জোরপূর্বক ব্যক্তি নিখোঁজ হওয়া বন্ধ করতে সরকার কী উদ্যোগ নিয়েছে।
চতুর্থত, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে’- এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে।
পঞ্চমত, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরকার কেন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
সর্বশেষ ‘বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হত্যায় উৎসাহ জোগাচ্ছে’ এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চাওয়া হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে উপস্থিত হননি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত : বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউর বৈঠকে বেলজিয়ামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইসমত জাহান উপস্থিত হননি। যদিও তার বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বলে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থিত না থাকার কারণের ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ইইউ বৈঠক সূত্র জানায়।
এ দিকে বাংলাদেশে সরকারকে চিঠি ইইউর বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধির মাধ্যমে দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে ‘ড্রই ডেলিগেশন’ দলটি বাংলাদেশে অবস্থানকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এক বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে ইইউ প্রতিনিধিদল। অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটে নিহতদের বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, ইইউ পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ দেখায়নি।
কিন্তু তার পরদিন ১৯ ফেব্রুয়ারি ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা বলেছিলেন, ‘মানবাধিকারের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কারণেই তারা বাংলাদেশে এসেছেন।’ এবং মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ জানায়নি এমন কথা তারা বলেননি বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। বিষয়টি আবারো বৈঠকে আলোচিত হয় বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে ছয়টি এজেন্ডা ছিল। বৈঠকে বাংলাদেশে সম্প্রতি সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির দেয়া ‘ড্রই ডেলিগেশন রিপোর্ট’ উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থার বিষয়ে সরেজমিন অভিজ্ঞতা, পর্যালোচনা এবং তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়া সদস্য ক্রিস্টিয়ান ড্যান প্রিদা।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button