ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলে বদলে যাবে গতিপথ

EUব্রিটেনের পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লাটভিয়ার রাজধানী রিগায় ইস্টার্ন পার্টনারশিপ সম্মেলনে যোগদানকে কেন্দ্র করে বোঝা গেল ডেভিড ক্যামেরনের গুরুত্ব ইইউ’র কাছে অনেক বেশি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে ক্যামেরনকে ঘিরে ইইউ নেতাদের সাম্প্রতিক তোষামোদকে আবার বেশ কিছু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। কারণ, বেশ কিছুদিন ধরেই ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে। কিন্তু জার্মানি কোনোভাবেই চায় না, ব্রিটেন ইইউ ছেড়ে চলে যাক। কারণ, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করলে পুরো সংগঠনটির গতিপথে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) সংস্কার চান ব্রিটেনের পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। লাটভিয়ার রাজধানী রিগায় ইইউর কর্তা-ব্যক্তিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা গত শুক্রবার তুলে ধরেন তিনি।
উল্লেখ্য, অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটেন ইইউর সদস্য হিসেবে থাকবে কী-না, তা নিয়ে ২০১৭ সালের শেষদিকে গণভোটের আয়োজন করা হবে বলে সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনের তফসিলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্যামেরন। খবরে বলা হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রমাণ দেয়ার পরই মূলত ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার আভাস দেয় ব্রিটেন। এর সপক্ষে ২০১৭ সালের শেষদিকে গণভোট আয়োজনের কথাও বলেন ডেভিড ক্যামেরন। কিন্তু অ্যাঙ্গেলা মার্কেল কোনোভাবেই চান না, ব্রিটেন ইইউ ত্যাগ করুক। এজন্য ব্রিটেন ইইউতে যেসব সংস্কারের কথা বলেছেন, সেসব বিষয়ে সবার আগে সমর্থনও দেন মার্কেল।
ব্রিটেন যে কয়টি বিষয়ে সংস্কারের কথা তুলেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল- ইইউভুক্ত দেশের অধিবাসীরা চাইলেই আরেকটি ইইউভুক্ত দেশে গিয়ে বসবাস করতে পারবে না এবং কাজ করতে পারবে না। কাজ করতে পারলেও সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। ব্রিটেনের এই সংস্কার দাবিগুলোর সঙ্গে অ্যাঙ্গেলা মার্কেলও ঐকমত্য পোষণ করেন। ক্যামেরনের দাবিগুলোকে যৌক্তিক হিসেবেও তুলে ধরেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্কের মতো স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলো যে সংস্কারের কথা বলে আসছিল, সেই সংস্কার দাবিগুলো যৌক্তিক ভিত্তি পেতে যাচ্ছে। তবে ইইউতে সংস্কার এবং ব্রিটেনের ইইউতে থাকা-না থাকার বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানতে জুন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ইইউর গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন তখন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ব্রিটেনের পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করবেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই মূলত ইইউতে থাকবেন কিনা, সেই বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, ইইউর সঙ্গে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটাতে চাইলেও ইউরোপের অন্য দেশের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে লন্ডন।
ইউরোপের সব দেশ ব্রিটেনের স্বার্থের জন্য কম বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলেও জার্মানির গুরুত্বটা লন্ডনের কাছে সব সময়ই বেশি। ইউরোপের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক পরিমন্ডলে একে অপরের পরিপূরক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই লন্ডনের কাছে বার্লিনের গুরুত্বটা সব সময় বেশি। তাছাড়া যে কোনো ধরনের জোটগত সিদ্ধান্তে জার্মানির সমর্থনটা ব্রিটেনের জন্য বেশি জরুরি। অতীতে বেশ কিছু সময় দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন চললেও ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জার্মানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়। জার্মানির অব্যাহত সদিচ্ছার পরিপ্রেক্ষিতেই ইইউর গন্ডির বাইরে এই দুই দেশ ভালো মিত্র হিসেবে পরিচিতি পায়। জার্মানিতে নিযুক্ত ব্রিটেনের সাবেক রাষ্ট্রদূত স্যার পিটার টরি এক সাক্ষাৎকারে বার্লিনকে লন্ডনের সবচেয়ে কাছের মিত্র হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়া দেশটির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল স্টুয়ার্মারও এর সত্যতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অ্যাঙ্গেলা মার্কেল সব সময়ই চান, ব্রিটেন ইইউতে অবস্থান করুক। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণও রয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button