ইমিগ্র্যাশন কমানোর পক্ষে ব্রিটিশরা

UK BAসৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: ব্রিটেনে ক্রমবর্ধমান ইমিগ্রেশনের সংখ্যা বা হার  বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে স্কটল্যান্ড এবং পুরো ব্রিটেনব্যাপী বিবিসি ও ইউগভ এক জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে, দুই তৃতীয়াংশ স্কটিশ জনগন চান ইমিগ্রেশনের সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসতে।  স্কটল্যান্ডের জনগন ইমিগ্রেশন বৃদ্ধিতে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন যেখানে ব্রিটেনের অন্যান্য এলাকার জনগনও অনেকটাই এখন তাদের সুরে মতামত জানিয়েছেন।
জরিপে দেখা গেছে, ৪৯% জনগন যেখানে ইমিগ্রেশনের হার কমিয়ে আনার পক্ষে, ঠিক তার বিপরীতে ১৫% ব্রিটিশ জানিয়েছেন তারা পুরোপুরি ইমিগ্রেশনের সংখ্যা বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে।
অথচ স্কটল্যান্ডের হলিরুড সরকার কিন্তু স্কিলড ওয়ার্কার বা স্কিলড মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার বৃদ্ধির পক্ষে। আর ইউগভ এবং বিবিসির যৌথ জরিপে মাত্র ৫% জনগন বলেছেন, খুব অল্প হারে ইমিগ্রেশনের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে।
আবার দেখা গেছে, পুরো ব্রিটেনের ২২% জনগনের বিপরীতে মাত্র ২৭% স্কটিশ জনগন জানিয়েছেন ইমিগ্রেশন দেশের জন্য ভালো। কন্ট্রাডিক্টরী মতামতও রয়েছে, ৭০% ব্রিটিশদের তুলনায় ৬৪% স্কটিশ জনগন একেবারে ইমিগ্রেশন বন্ধ বা কমিয়ে দেয়ার পক্ষে।
মজার ব্যাপার হলো, বিপরীত লিঙ্গের মধ্যেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মত। স্কটল্যান্ডের মহিলাদের মধ্যে ৬৯% চান ইমিগ্রেশন কমিয়ে দিতে, পক্ষান্তরে ৬০% পুরুষেরা চান কমাতে। আর বয়োজ্যেষ্টদের মধ্যেও রয়েছে মতামত, তাদের মধ্যে থেকে ৬০ বছরের উর্ধে ৭৬% স্কটিশ ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে আর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৪৩% ইমিগ্রেশনের হার কমানোর পক্ষে।
ইউগভ জরিপ গত ৪ থেকে ৬ মার্চের মধ্যে ১,১০০ স্কটিশ প্রাপ্ত বয়স্ক লোকদের মধ্যে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত প্রশ্নে জরিপ পরিচালনা করে। প্রশ্নগুলো গত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালের জরিপের সাথে আরো ব্যাপকভাবে সাযুজ্য রেখে করা হয়েছিলো। দেখা গেছে স্কটিশদের মধ্যে যারা উচ্চ আয়ের পুরুষেরা রয়েছেন, তারা ইমিগ্রেশনকে স্বাগত জানিয়েছেন, আর মহিলারা ঠিক ততোটাই স্বাগতের পক্ষে নন।
থিওরীটেক্যালি এবং প্র্যাকটিক্যালি  স্কটল্যান্ডের জনগন বয়স ও অন্যান্য কারণে লোকসংখ্যা কম থাকায় হলিরুড সরকার ইমিগ্রেশন বৃদ্ধির পক্ষে, যা বিগত সেনসাসে প্রমাণিত ছিলো। বিশেষ করে ব্যবসা ও নতুন নতুন জব মার্কেটের জন্য অধিক ইমিগ্রেশন স্কটল্যান্ডের হলিরুড সরকার স্বাগত জানিয়েছিলো, তাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সাথে সাথে সময়ের জন্য প্রয়োজনীয়। কেননা অতীত রেকর্ড বলছে, লন্ডনের তুলনায় স্কটল্যান্ডে মাইগ্রেন্টের হার কম।
এভারেজ নেট মাইগ্রেশন স্কটল্যান্ডে – যা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে চলাচল সহ বছরে ১০,০০০, পক্ষান্তরে পুরো ইংল্যান্ডে প্রায় ৩০,০০০ এর মতো ।
২০১০ সালে ডেভিড ক্যামেরন ঘোষণা করেছিলেন, ব্রিটেনের নেট মাইগ্রেশন ১০০০,০০০ এর মধ্যে নামিয়ে আনার। কিন্তু সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার অ্যালেক্স সালমন্ড ওয়াদা করেছিলেন নেট মাইগ্রেশন বৃদ্ধি করার।
তাই প্রশ্ন হলো স্কটল্যান্ডের সাধারণ জনগণ কি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে তাদের মতামত শেয়ার করেছেন বা করবেন ?
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্কুল অব এপ্লাইড সাইন্স এন্ড স্টার্লিং ইউনিভার্সিটির ডঃ ম্যারিনা শ্যাপিরা বলেন, ইমিগ্রেশন নিয়ে স্কটিশ জনগনের নেতিবাচক ধারণা পুরো জনগনের মতামতের প্রতিফলন নয় যেমন ব্রিটেনের অন্যান্য অঞ্চলের মতামতের মতো।
তিনি আরো বলেন, তবে আমাদের ব্রিটেনের পাওয়ার অব পলিটিক্স এবং পাওয়ার অব মিডিয়াকে আন্ডার ইস্টিমেট করা কোনভাবে উচিৎ হবেনা, কেননা এখানকার জনগন প্রতিনিয়তই শুনছেন কখন কোথায় কি হচ্ছে।
তিনি বলেন, তারা কেবল স্কটিশ রাজনীতিবিদদেরকে উম্মোচিত করছেননা, বরং রাজনীতিবিদদের কাছে তাদের মতামত উম্মোচন করে দিয়েছেন। তাদের কাছে রয়েছে সাধারণ অর্থনৈতিক স্পেস, একই সাথে কমন পলিটিক্যাল স্পেস, এবং যে কারনে সাধারণ জনগন সমস্ত ফ্যাক্টরসগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন দেখতে চাননা, যেভাবে ব্রিটেনের সমগ্র জনগন বলেছেন। আমাদের কোনভাবে দক্ষিণ ব্রিটেন থেকে যে সমষ্টিগত আওয়াজ আসছে তাকে ওভার ইস্টিমেট করাটা ঠিক হবেনা, যেমন করে জনগন এখন সেই আওয়াজের ধ্বনি শুনছেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button