আর্মেনিয়ার সঙ্গে বিরোধ নিরসনে আগ্রহী তুরস্ক

Erduganতুরস্কের ইতিহাসে অতি ভয়াবহ ঘটনাগুলোর একটি ছিল গালিপলির যুদ্ধ। ফ্রান্স ও বৃটেন একত্রে নেমেছিল যুদ্ধে তুরস্ককে বিধ্বস্ত করার উদ্দেশ্যে। তারা চেয়েছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্য ছিন্নভিন্ন করে দিতে। রাশিয়াকে কথা দিয়েছিল ফ্রান্স ও বৃটেন যদ্ধ শেষে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপিত হবে রুশ সাম্রাজ্যের। তুরস্কের জন্য জীবন-মরণ সংকট নিয়ে উপস্থিত হয় গালিপলির যুদ্ধ। যুদ্ধে তুরস্ক জয়ী হলেও তুরস্কের জন্য ঐ বিজয় চূড়ান্ত সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু পরবর্তী কয়েক বছর দেশের স্বাধীনতা সংহত রাখার জন্য তুরস্ক প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যায় গালিপলির যুদ্ধবিজয়ের প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়েই। গালিপলি ও দার্দানেলিসের উপকূল এলাকায় প্রতিবছর ১৮ মার্চ ঐ প্রতিরোধ যুদ্ধের স্মরণে সমবেত হন তুরস্কবাসী। গালিপলি তাৎপর্যবহ হয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের জন্যও। গালিপলিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সৈন্যদের মৃত্যুবরণ প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল স্মরণ করে থাকে দেশ দু’টি। দিনটিকে ‘আনজাক’ দিবস আখ্যা দেয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
গালিপলি ভ্রমণে আগত অস্ট্রেলিয়ানদের সব সময় স্বাগত জানাতে প্রস্তুত তুর্কীরা। যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া ছিল তুরস্কের শত্রুপক্ষে মিত্র বাহিনীতে। মিত্রবাহিনী ও তুরস্কের বহু সৈন্য সমাহিত রয়েছেন গালিপলিতে পাশাপাশি কবরে। গালিপলি যুদ্ধের একশ’ বছর পূর্ণ হলো ২০১৫-এর আগমনের সঙ্গে। শতবর্ষ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিশ্বের একশ’র বেশী নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তুর্কী প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোগান। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট সজ সার্গসিয়ানও। আশা করা হচ্ছেÑ বৃটিশ প্রিন্স চার্লস এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীরাও স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
তুরস্কের ইউনিয়নিস্ট কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে আর্মেনিয়ানদের বিতাড়ন শুরু করে ২৪ এপ্রিল। দেশান্তর যাত্রায় নিহত তাদের পূর্ব-পুরষদের প্রতিবছর আর্মেনিয়ানরা স্মরণ করেন ২৪ এপ্রিল। তারিখটিকে স্মরণ করে থাকেন সারা বিশ্বের আর্মেনিয়ানরা। ঘটনার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে নিহত আর্মেনিয়ানদের প্রতি সহানুভূতির নিদর্শন স্মরূপ নিজেদের জাতীয় স্মরণ দিবসে ১৮ মার্চের পরিবর্তে ২৪ এপ্রিল উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক। নিহত আর্মেনিয়ানদের উত্তর-পুরুষদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপনসূচক ২০১৪-এর ২৩ এপ্রিল তুরস্ক সরকার একটি বিবৃতি জারি করেন। আর্মেনিয়ানদের দেশান্তর যাত্রার ১৯১৫ সালের ঘটনায় মৃত্যুবরণকারীদের জন্য শোক ব্যক্ত করেন ২৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে তখন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরদোগান।
তুরস্কের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রেসিডেন্ট সার্গসিয়ান। আর্মেনীয় কর্তৃপক্ষকে এরদোগানের ঐ আমন্ত্রণ ছিল তাৎপর্যবহ। আর্মেনিয়ানদের তুরস্ক ত্যাগ ও দেশান্তর যাত্রা সম্পর্কিত তুরস্ক বিরোধী অভিযোগ আজো প্রত্যাখ্যান করে থাকেন অধিকাংশ তুর্কী। তা সত্ত্বেও আর্মেনীয় প্রেসিডেন্টকে এরদোগান আমন্ত্রণ জানান আর্মেনীয় জনগণকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে ১৯১৫ সালের দুঃখজনক ঘটনার জন্য শোক ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে বর্তমান তুরস্ক আর্মেনিয়া সংক্রান্ত অতীতের অবস্থান থেকে সরে আসতে আগ্রহী।
এরদোগানের নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের পক্ষে ব্যাখ্যাস্বরূপ আর্মেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, আর্মেনীয় গণসংহারের ভয়াবহ স্মৃতিকে লাঘব করে তোলার উদ্দেশ্যে এরদোগান তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তুরস্ক চেয়েছে ১৯১৫ সালের ঘটনার পটভূমি ও পরিপ্রেক্ষিত পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে সমকালীন পরিস্থিতির তাগিদ উপলব্ধির ক্ষেত্রে আর্মেনীয় ও তুর্কী জনগণের ও নেতৃত্বের মনোভাবের সম্মিলন ঘটাতে। কিন্তু গালিপলির স্মৃতিতে আবদ্ধ আর্মেনিয়া শত বছর পরও সামনে পদক্ষেপ নিতে অনাগ্রহী দেখে দুঃখপ্রকাশ ছাড়া তুরস্কের আর কিছু করার থাকেনি। ১৯১৫ সালে আর্মেনিয়ানদের ভাগ্যে ঘটিত ঘটনাকে গণসংহার হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত এক বিখ্যাত গবেষক মন্তব্য করেন। গালিপলি অভিযান ও আর্মেনিয়ানদের দেশান্তর সংশ্লিষ্ট দুঃখজনক পরিণাম দু’টি ঘটনা পরস্পর সংশ্লিষ্ট। পরিস্থিতির যথার্থ মূল্যায়ন একটিকে অন্যটি থেকে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসম্পর্ক দেখানোর মাধ্যমে সম্ভব নয়। ১৯১৪ সালে তুরস্কে জার্মান রাষ্ট্রদূত হিসেবে মোতায়েন ওয়ানজেনহেইম এবং অন্য এক ঐতিহাসিক বিবৃত করেছেন যে, বৃটিশ ও ফরাসী সৈন্য গালিপলিতে অবতরণ করতে যাচ্ছে খবর ছড়িয়ে পড়ার পরবর্তীতেই আক্রমণকারীদের জোটভুক্ত আর্মেনিয়ান গোয়েন্দাদের তুরস্ক গ্রেফতার করতে শুরু করে তার আগে নয়। গালিপলিতে মিত্রবাহিনীর সৈন্য অবতরণ তুরস্কের জন্য ছিল ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button