স্বাধীনতা রক্ষা ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার
স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত
গুগল ডুডলের অভ্যর্থনা বার্তায় ‘শুভ স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশ’
স্বাধীনতা সংরক্ষণ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সন্ত্রাসমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আজ মঙ্গলবার মহান স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকী ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। এদিন রাজধানীর অদূরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। ভোরে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে মূলত দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এদিকে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটি। প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ আলাদা বাণী দিয়েছেন।
এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, তিন বাহনীর প্রধানগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধারা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরপরই সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক। পরে বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ বীর শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল ফটক খুলে দেওয়ার সাথে সাথে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে সাধারণ মানুষের ঢল নামে। এসময় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় স্মৃতিসৌধর মূল বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর বিভিন্ন হল সমূহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সমূহ, জাতীয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বিভিন্ন হল সমূহ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাসদ, গণবিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাপ, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, গণতন্ত্রী পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমিসহ সরকারি-সরকারি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বীর শহীদদের প্রতি।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসাবে দলের নেতাদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এর পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও বঙ্গবন্ধুর প্রতকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন ও খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ, এনামুল হক শামীম ও মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে গতকাল সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ, হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রমসহ এ ধরনের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ রাতে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।বিকেলে বঙ্গভবনে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ আমন্ত্রিত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর মিলন মেলায় পরিণত হয়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনেও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, সড়কে অলঙ্করণ, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করে উৎসবমুখর পরিবেশে।
এ ছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছরের মতো এবারও স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মোহাম্মদপুরে শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠিয়েছেন। এদিকে বিকেলে গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ডাক অধিদপ্তরের ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৯টায় বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআন খানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।
আগের বছরগুলোর মতো, বিশ্বের অন্যতম সার্চ ইঞ্জিন গুগল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে তাদের হোম পেজে বিশেষ ডুডল প্রদর্শনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে। বাংলাদেশের জনগণকে উৎসর্গ করা গুগলের এই ডুডলে, বাংলাদেশের মাটিতে লাল-সবুজের গর্বের পতাকা পত পত করে ওড়ার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গুগল তাদের বিশেষ ডুডল পেজে বলেছে, ৪৮ বছর আগে আজকের এইদিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের জন্ম হয়। আজ বাংলাদেশের মানুষ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
ডুডলের অভ্যর্থনা বার্তায় ‘শুভ স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশ’ লেখা রয়েছে। গুগল প্রথমবার ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ৪৩তম স্বাধীনতা দিবসে একটি বিশেষ ডুডল পোস্ট করেছিল।