উন্নত বিশ্বে বেড়েছে শিশু দারিদ্র্য

Poorক্রমাগতই দুঃসংবাদ শুনছে উন্নত বিশ্ব। সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে, ২০০৮ সালে মন্দা শুরুর পর থেকে উন্নত বিশ্বের ২৩টি দেশে শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্য বেড়েছে। সম্প্রতি ইউনিসেফ এর একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, মন্দা চলা অবস্থায় ধনী দেশগুলোতে ২.৬ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে শতাংশের বিচারে সবচেয়ে বেশি শিশু দারিদ্র্য বেড়েছে গ্রীস ও আইসল্যান্ডে। এর পরের অবস্থানগুলোতে রয়েছে যথাক্রমে লাটভিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং আয়ারল্যান্ড। এ সময়ে যুক্তরাজ্যে দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা শিশুর সংখ্যা ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ। ইউনিসেফ যে ৪১টি রাষ্ট্রের উপর গবেষণা চালিয়েছিল, তার মধ্যে শিশু কমেছে মাত্র ৮টি দেশে। শিশু দারিদ্র কমার প্রশ্নে সবচেয়ে এগিয়েছে চিলি। দেশটিতে শিশু দারিদ্র্য ৩১.৪ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৮শতাংশ।
নরওয়ের রয়েছে সবচেয়ে কম শিশু দারিদ্রের হার, ৫.৩ শতাংশ। ২০০৮ সালে এই হার ছিল ৯.৬ শতাংশ। আর ৪০ দশমিক পাঁচ শতাংশ নিয়ে শিশু দারিদ্র্যে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে গ্রীস। ২০০৮ সালে তাদের এ হার ছিল ২৩ শতাংশ। লাটভিয়া ও স্পেনেও শিশু দারিদ্র্যের হার ৩৬ শতাংশের উপরে। যুক্তরাষ্ট্রে এ হার ২৫ শতাংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছর ধরেই একান্ত মৌলিক সামগ্রী ও শিক্ষা চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হওয়া শিশু ও তাদের পরিবারের সংখ্যা উন্নত বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বেড়েই চলেছে। ১৯৩০’র দশকের মহামন্দার পর এতো বেশি বেকারত্ব উন্নত বিশ্বে আর কখনোই দেখা দেয়নি।
চিলড্রেন অফ রিসেশান: দ্য ইমপ্যাক্ট অফ দ্য ইকোনোমিক ক্রাইসিস অন চাইল্ড অয়েলবিইং ইন রিচ কান্ট্রিজ নামক গবেষণার গবেষকরা তাদেও গবেষণার অংশ হিসেবে নিজেদের অথবা পরিবারের খাবার কেনার জন্য অর্থের পর্যাপ্ততা, চাপের স্তরসমূহ, সার্বিক অসন্তুষ্টি এবং শিশুদের শিক্ষা ও বেড়ে ওঠার জন্য সুযোগ আছে কি-না এই চারটি সূচকের ভিত্তিতে জনগণকে গত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা ও বঞ্চনার ধারনা সম্পর্কে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন। এর স্কোরের ভিত্তিতে দেখা গেছে, ২০০৭ থেকে ২০১৩ এ সময়ে পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটেছে; বাড়ছে অনিরাপত্তা ও চাপের অনুভূতি বৃদ্ধি। অন্তত দুই দিনে একদিন মাছ, মাংস, মুরগি অথবা সমমানের শাকসবজি গ্রহণ করতে অসমর্থ  সন্তানসহ পরিবারের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে অনেক দেশেই প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এস্তোনিয়া, গ্রীস, আইসল্যান্ড ও ইতালিতে এই হার বর্তমানে যথাক্রমে ১০, ১৮, ৬ ও ১৬ শতাংশ।
জাতিসংঘের জন্য করা এই গবেষণার রিপোর্ট বলছে, বস্তুগত বঞ্চনা ও চাপ শিশুদের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্ককে আক্রান্ত করছে। চলমান মন্দা সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে শিশু ও তরুণদেরকেই। শিক্ষা, চাকুরী অথবা কোন প্রকার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করছে না, এমন লোকের সংখ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে বর্তমানে ৭.৫ মিলিয়ন। ২০০৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে অন্তত এক মিলিয়ন কম ছিল। কমতে শুরু করলেও ইসরায়েলে এ হার বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ, ৩০.৭ শতাংশ। ২০০৭ থেকে ২০১৩, এ সময়ে এমন লোক সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, গ্রীস, ইতালি ও রোমানিয়াতে। পক্ষান্তরে সবচেয়ে বেশি কমেছে তুরস্কে। ২০০৮ সালের ৩৭ শতাংশ থেকে ২০১৩ সালে নেমে এসেছে ৩৫.৫ শতাংশে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেকার কিংবা কোন ধরনের কাজেকর্মে জড়িত না থাকা লোকের সংখ্যা কমার মানে এই নয় যে, তরুণ-তরুণীরা ক্রমান্বয়ে কর্মে স্থিতিশীল হচ্ছে।  ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা চাকুরী করছে, তাদের বেশিরভাগের চাকুরীই খণ্ডকালীন এবং ন্যায্য মজুরির চেয়ে অনেক কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। উন্নত বিশ্বে নামমাত্র মজুরি পাওয়া তরুণ-তরুণীর সংখ্যা গত পাঁচ বছরে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button