লাইবর কেলেঙ্কারি : শীর্ষ ১৬ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মার্কিন নিয়ন্ত্রকের মামলা

লন্ডনে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সুদের হার (লাইবর) নির্ধারণে কারসাজির অভিযোগে শীর্ষ ১৬টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ মামলায় একটি ব্রিটিশ ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনকেও (বিবিএ) বিবাদী করা হয়েছে। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এপির
অভিযুক্ত ১৬টি ব্যাংকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অব আমেরিকা, লন্ডনভিত্তিক সিটিগ্রুপ, লয়েডস, এইচএসবিসি, জার্মান ডয়েচ ব্যাংক, ফরাসি সোসিয়েতে জেনারেলের সঙ্গে রয়েল ব্যাংক অব কানাডা ও টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজেও রয়েছে।
গত শুক্রবার ম্যানহাটনের আদালতে দায়ের করা মামলায় মার্কিন ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) অভিযোগ করে, লন্ডনের বেঞ্চমার্ক হারটি কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রেখে নিজেদের মুনাফা বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু তাদের কারসাজির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে যুক্তরাষ্ট্রেই বন্ধ হয়ে যায় ওয়াশিংটন মিউচুয়াল ব্যাংক, ইন্ডি ম্যাক ব্যাংকসহ ৩৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দায়দেনা কিনে নিয়েছিল এফডিআইসি। লাইবর কারসাজির ফলে তাদের লোকসানটি তুলে নিতেই এ মামলা করেছে বিনিয়োগ ও আমানতের ঝুঁকি ভাগাভাগি করা প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বজুড়ে ট্রিলিয়ন ডলারের বন্ধকি ঋণ, বন্ড এমনকি ভোক্তাঋণের বাজারকে প্রভাবিত করে লাইবর রেট। প্রতিদিন অভিযুক্ত ১৬টি ব্যাংকের উপাত্তের ভিত্তিতে লাইবর রেট নির্ধারণ করে থাকে বিবিএ। ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সুদের হার কত আশা করছে, এ তথ্যই এর মূল ভিত্তি। এফডিআইসি বলছে, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে লাইবর নির্ধারণের সময় বিবিএ কারসাজি প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়েছে, যার দায় তারা এড়াতে পারে না।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কারসাজির সময় বিবিএ জানত ব্যাংকগুলো মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। কারসাজিতে তারা সমর্থন দিয়েছে, যা তথ্যগুলোর যাচাই-বাছাই না করার মধ্য দিয়েই স্পষ্ট। বিবিএ অবশ্য এ অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
লাইবর তদারকির দায়িত্বটি নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের লন্ডনভিত্তিক মালিক কোম্পানি এনওয়াইএসই ইউরোনেক্সটের হাতে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়ে আছে আগেই, যা আগামী বছরের শুরুর দিকে কার্যকর হবে। লাইবর তদারকিতে বিবিএর ব্যর্থতা নিয়ে ব্রিটিশ আইনসভায়ও কথা হয়।
ইউরোপীয় ও মার্কিন নিয়ন্ত্রকরা আগেই লাইবর কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বার্কলেস, আরবিএস, সুইস ইউবিএস, ডাচ রাবোব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। শর্তসাপেক্ষে কেবল ফৌজদারি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে তারা মার্কিন বিচার বিভাগের সঙ্গে ৩৬০ কোটি ডলারের একটি নিষ্পত্তিতে গিয়েছিল। ইউরোপ-আমেরিকা মিলিয়ে লাইবর কেলেঙ্কারির দায়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি জরিমানা দিতে হয়েছে কয়েকটি ব্যাংককে।
লাইবর কারসাজিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছিল কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অ্যান্টিট্রাস্ট আইনে করা মামলাগুলো এক বছর আগেই খারিজ হয়ে গেছে। তবে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগগুলো এখনও রয়ে গেছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবীদের একজন ড্যানিয়েল ব্রোকেট মনে করেন, চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে করা মামলাগুলো আমলে নেবে আদালত।
এফডিআইসির মামলাটিতে অবশ্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়নি। এ বিষয়ে তাদের মুখপাত্রও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button