‘হেফাজতের ১৯ দফা বাস্তবায়িত হলে অপরাধ শূন্যে নেমে আসবে’

Shofiদেশের শীর্ষ আলিম, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) চেয়ারম্যান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেছেন, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করেও খোদাদ্রোহী নাস্তিকরা আল্লাহ-রাসুলকে অস্বীকার করছে, তাদের আল্লাহর এই জমিনে থাকার অধিকার নাই। একই সাথে তিনি নাস্তিকদের তওবার মাধ্যমে ঈমানদার ও মুসলমান হয়ে আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করারও আহবান জানান। তিনি শেখ হাসিনা ও তার সরকার এবং দলের প্রতি ইসলামকে ভালো করে বুঝার জন্য আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, হেফাজতের ঘোষিত ১৩ দফা ঈমানি দাবি বাস্তবায়িত হলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা শূন্যে নেমে আসবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, নারী তার মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে।
শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত শানে রেসালত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ব্যক্তি, সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রসহ সব জায়গাকে অনাচারমুক্ত করতে খোদাদ্রোহিতার পথ ছেড়ে ঈমান তথা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, তাকওয়া-পরহেযগারী ও বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আদর্শে ফিরে আসতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ, তাহযীব-তামাদ্দুন, শিল্প-সংস্কৃতি, অর্থ, প্রশাসন ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সব জায়গায় ইমান, আমল, পরকালীন জবাবদিহিতার ভয় সৃষ্টি করতে হবে। গুনাহ, দু®কৃতি, ব্যভিচার-পাপাচারের প্রতি ঘৃণা, অন্যায়, জুলুম, শোষণের বিরুদ্ধে নৈতিক জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। তখনই কেবল আমাদের জীবনের প্রতিটি অঙ্গণে পরিপূর্ণ শান্তি, স্বস্তি ও নির্বিঘœ নিরাপত্তা বিরাজ করবে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, আজ সন্তানের হাতে মাতা-পিতা খুন হচ্ছেন, ভাইয়ের হাত রঞ্জিত হচ্ছে সহোদরের রক্তে, মা তার সন্তানকে হত্যা করে নতুন নিষ্ঠুরতার জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। উঠতি বয়সী তরুণ-যুবকসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ নানা রকম পাপ-পঙ্কিলতায় সমাজকে কলুষিত করছে, আশরাফুল মাখলুকাত মানবসন্তানেরা আজ অমানুষের কাতারে শামিল হচ্ছে। সমাজ থেকে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি হারিয়েছে। এ জন্য পরস্পরকে দোষারোপ না করে নিজেরা সংশোধন হওয়া জরুরি। ব্যক্তির আত্মশুদ্ধি, পরিবারে পরিপূর্ণ ইসলামী আদর্শ ও অনুশাসন চর্চা করা নেহায়েত প্রয়োজন। কুপ্রবৃত্তিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, শুদ্ধ ও সংযত জীবনযাপনের মাধ্যমে মহানবী সা. ও সাহাবায়ে কেরামের সেই সোনালি যুগ আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর বলেন, আমাদের ঘোষিত ১৩ দফা ঈমানি দাবি বাস্তবায়িত হলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা শূন্যে নেমে আসবে, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, নারী তার মর্যাদা ও প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাবে। ঘরে-বাইরে-কর্মস্থলে সর্বত্র পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবে। আপন-পর কারো দ্বারা নিগৃহীত হবে না। আমরা আগেই বলেছি, এখনও বলছি হেফাজতে ইসলামের দাবি ও ইমানি আন্দোলনকে বুঝতে চেষ্টা করুন, হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করুন, অযথা মিথ্যাচার করবেন না; বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। আমরা রাজনীতি করছি না, আমাদের কোনো রাজনৈতিক কোনো ল্য নেই। সমাজ ও রাষ্ট্রে যেখানেই মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রিয়নবীর মান-মর্যাদায় আঘাত হানা হবে এদেশের ইমানদার, নবীপ্রেমিক জনগণকে নিয়ে সেই অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা আজীবন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো। আমরা কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিনি কেবল আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আমরা ময়দানে নেমেছি। কাউকে মতায় আনা কিংবা মতাচ্যুত করা আমাদের কাজ নয়, উদ্দেশ্যও নয়। মিডিয়া, সাংস্কৃতিক অঙ্গণ কিংবা সমাজে আল্লাহ ও রাসূলের শত্র“ উগ্র নাস্তিকদের অপতৎপরতা দেশের ইমানদার জনগণ বরদাশত করবে না। হেফাজতে ইসলাম নাস্তিক্যবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামত পর্যন্ত লড়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ অতিথির ভাষণে মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, বর্তমান সময়ে নানাদিক থেকে নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার ব্যাপক প্রসার ঘটছে। বৃহত্তর মুসলিম দেশ হিসেবে সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস না রাখা সরাসরি কুফরী। মহানবী সা.-কে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা জঘন্যতম অপরাধ। এই অপরাধীদের শাস্তি না হলে আল্লাহর আযাব থেকে কেউ রেহাই পাবে না। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের কারণে দেশে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তারা সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকিস্বরূপ। তিনি বলেন, দেশের কওমী মাদরাসাগুলো মুসলমানদের সন্তানদেরকে আদর্শ ও নৈতিকমূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দলবাজির স্থান নেই। কুরআন-হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে জনগণের ইমান আমল সংশোধনে লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান যুগযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছে। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী আরো বলেন, ছয় এপ্রিল লংমার্চে চল্লিশ লক্ষ মানুষের, ৫ মে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের সমাবেশ প্রমাণ করেছে, এদেশের মানুষ রাসূল প্রেমিক। যারা রাসূলের অবমাননা করবে, যারা রাসূল সা.কে নারীলোভী বলবে, লুচ্ছা ইত্যাদি অবমাননাকর কটূক্তি করবে; তাদের এই বেয়াদবি বরদশত করা হবে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি রাসূলের সাথে যারা বেয়াদবি করে জাতীয় সংসদে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিÍ মৃত্যুদন্ডের আইন পাশ করতে হবে।
আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, কতিপয় ইসলামবিদ্বেষী এনজিও গরিব-অসহায় লোকদের ধর্মান্তরিত করার মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামকে খৃস্টানরাজ্য বানানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার এ ব্যাপারে যথাসময়ে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা হতে চার অধিবেশনে অনুষ্ঠিত শানে রেসালত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহাদ্দিস হযরত আল্লামা মুফতি মুজাফফর আহমদ, আল্লামা আবদুল মালেক হালিম হাইলধর, মাওলানা লোকমান হাকিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শফী বাথুয়া। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী। বক্তব্য রাখেনÑ প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা মোস্তাফা আল হুসাইনি, মাওলানা জুনাইদ আল হাবীব, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, মাওলানা লোকমান হাকিম, মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী, মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসেন, মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা মুফতি কুতুবুদ্দিন নানুপুরী, ড. এ টি এম তাহের, মাওলানা ইয়াসিন হাবিব, মাওলানা আলতাফ হোসেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button