১২ ও ১৩ আগস্ট জামায়াতের হরতাল

Hortalহাইকোর্টে নিবন্ধন বাতিলের প্রতিবাদে আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘন্টা হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কর্মসূচির ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। এছাড়া আদালতে এ রায়ের প্রতিবাদে শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচিও ঘোষণা করেন তিনি।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও রায় প্রত্যাখ্যান করে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের প্রধান ইসলামী দল। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের অধীনে জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করার অধিকার রাখে। এই অধিকার অব্যাহত আছে। হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বৃহত্তর বেঞ্চে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলে যে রায় দেয়া হয়েছে তা একটি ভুল রায়। এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এই রিট আবেদনটি সম্পূর্ণ অপরিপক্ক। কারণ নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়াটি এখনো নির্বাচন কমিশনের বিবেচনাধীন। এ অবস্থায় রিট চলতে পারে না। ভারত, ইংল্যান্ড এমনকি আমাদের দেশেও এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের অনেক নজির রয়েছে। জামায়াতের আইনজীবীরা সেসব নজির আদালতে উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু আদালত সে সব অগ্রাহ্য করেছেন।
তিনি বলেন, ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে নির্বাচন কমিশন তাদের একটি মেমোতে উল্লেখ করেন, দু’টো দল ছাড়া বাকি যে ১১টি দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে সবারই গঠনতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর সাথে সাংঘর্ষিক। আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে অন্যান্য দলেরও নিবন্ধন বাতিলের যে দরজা উন্মুক্ত করলেন। এটা গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের জন্য মারাত্মক হুমকী বলে মনে করি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন দলকে ভোট দেবে। জনগণ প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দিয়ে জামায়াত মনোনীত প্রার্থীদের সংসদে পাঠিয়েছে। বর্তমান সংসদেও জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব আছে। বাংলাদেশের পরিবর্তিত সংবিধানেও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ও রাষ্ট্র ধর্ম ‘ইসলাম’ বহাল আছে। এমতাবস্থায় ধর্মীয় দল হিসেবে জামায়াতের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করার প্রশ্নই উঠে না।
জামায়াতের এ শীর্ষ নেতা বলেন, কোন দলের নিবন্ধন সম্পর্কে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পূর্বেই আদালত নিবন্ধন বাতিল করায় আমরা বিস্মিত। আমরা মনে করি এটা আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও সংবিধান পরিপন্থী। এ রায়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রকাশ ঘটেছে। সরকার জামায়াতকে নির্বাচনের বাইরে রাখার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং একদলীয় নির্বাচনের যে চক্রান্ত করছে এ রায়ের মাধ্যমে সেই ষড়যন্ত্র বাস্তুবায়নেরই ব্যবস্থা হয়েছে মাত্র। জনগণ এ রায় মানে না।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, সরকার জনগণকে আদালতের মুখোমুখি দাঁড় করানোর যে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য দেশবাসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিকে এসে ছুটির ঠিক আগের দিন আদালত চলার সর্বশেষ মুহূর্তে এই মামলার রায় ঘোষণা একটি গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। সরকারের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দিলে তাতে জনগণের কষ্ট ও দুর্ভোগ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে। সরকার জনগণকে কষ্টের মধ্যে ফেলার চক্রান্ত করেছে। সরকার জামায়াতকে নিয়ে যে ছিনিমিনি খেলছে তা গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।  পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মানুষের দুঃখ এবং কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা এই মুহূর্তে হরতালের মত কর্মসূচি থেকে বিরত রইলাম। তবে এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এ রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
সরকারের সকল ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আগামী ৩ আগস্ট শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং ১২ ও ১৩ আগস্ট সোম ও মঙ্গলবার দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন রফিকুল ইসলাম খান। একই সঙ্গে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তিনি দেশবাসীর সহযোগীতা কামনা করেন তিনি।
এর আগে দুপুরে বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। পরে এ রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে চেম্বারজজ আদালতে আপিল করেছে জামায়াত।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button