করোনায় ফান্ড সংগ্রহ
ব্রিটেনের রানির পদক পেলেন শতবর্ষী দবিরুল
ব্রিটেনের শতবর্ষী বাঙালি দবিরুল ইসলাম চৌধুরী গত রোজার মাসে পায়ে হেঁটে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তহবিলের জন্য প্রায় সাড়ে চার লাখ পাউন্ড সংগ্রহ করেছিলেন। এ কাজের স্বীকৃত স্বরূপ তাকে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করা হয়েছে।
পূর্ব লন্ডনের বো এলাকার বাসিন্দা দবিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই দুর্লভ সম্মান পেয়ে আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান বলে মনে করছি। আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
ব্রিটেনের সমাজ-জীবনে যারা বিশেষ ভূমিকা রাখেন রানি এলিজাবেথের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর তাদের সম্মান জানানোর রীতি রয়েছে। চলতি বছর জুন মাসে এ সম্মাননা ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলেও করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী, অর্থদাতা ও স্বেচ্ছাসেবকদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তা স্থগিত করা হয়।
গত রমজান মাসের পুরোটা সময় দবিরুল ইসলাম চৌধুরী রোজা রেখে প্রতিদিন তার বাড়ির পেছনের ৮০ মিটার বাগানে পায়ে হেঁটে মোট ৯৭০ বার চক্কর দিয়েছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ, ব্রিটেনসহ আরও কিছু দেশের করোনায় বিপর্যস্ত মানুষের সহায়তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন টম মুর তার বাড়ির বাগানে পায়ে হেঁটে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি পাউন্ড চাঁদা তুলেছিলেন। এটা দেখে উৎসাহিত হয়েছিলেন দবিরুল ইসলাম। রোজার মাসের পুরোটা সময় তিনি একইভাবে পায়ে হেঁটে মোট চার লাখ ২০ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে এক লাখ ১৬ হাজার পাউন্ড দেওয়া হয় ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিভাগ এনএইচএস’কে। বাকি অর্থ ৫২টি দেশের ৩০টি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করা হয়।
এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টার্মার বলেন, ‘আমাদের সবার কাছে তিনি প্রেরণার উৎস।’
সপ্তাহ দু’য়েক আগে রানির দফতর থেকে ওবিই পদক প্রাপ্তির চিঠি পেয়ে অবাকই হয়েছিলেন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কোনো একটা ভালো কাজ করি তখন বিশেষ কোনো প্রাপ্তির কথা মাথায় রাখি না। তবু এই স্বীকৃতির জন্য আমি আনন্দিত।’
ব্রিটেনের বাঙালি, বয়স্ক ও অভিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে এ পদক গ্রহণ করছেন বলেও মন্তব্য করেন এই প্রবীণ বাঙালি।
দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯২০ সালে সিলেটের দিরাই উপজেলায়। ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চশিক্ষার আশায় ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। এরপর সেন্ট অলবান্স শহরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে একজন কমিউনিটি লিডার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধের সময়েও অর্থসাহায্য সংগ্রহ করেছিলেন দবিরুল ইসলাম চৌধুরী। -বিবিসি



