হজের কার্যক্রম শুরু, হাজীদের অবস্থান মিনায় আজ আরাফাতে কাল

ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া: আজ ২৯ জুলাই বুধবার থেকে হজের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। সৌদি আরবে হিজরি মাস গণনা অনুযায়ী আজ ৮ জিলহজ। মক্কার অদূরে মিনার তাঁবুতে হাজীদের অবস্থানের দিন। আগামীকাল ৩০ জুলাই বৃহস্পতিবার ৯ জিলহজ মিনা থেকে গিয়ে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিন অর্থাৎ হজের দিন। যদিও অন্যান্য বছর অধিক সংখ্যক হজযাত্রীর কারণে ভিড় এড়াতে আগের দিন সন্ধ্যার পর থেকেই হজযাত্রীদের মিনার তাঁবুতে অবস্থান শুরু হয়ে যেত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর মাত্র ১০ হাজার হজযাত্রীর অংশগ্রহণে হজ পালিত হচ্ছে বলে ভিড় থাকছে না। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের ১৬০টির বেশি দেশের ২০ লাখ মুসলিম হজ পালন করেছেন।
মূলত ৮ জিলহজ ফজরের নামাজের পর থেকেই ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাজীদের মিনার তাঁবুতে গিয়ে অবস্থান করার নিয়ম। সে হিসাবে হজের দিনগুলোর সূচনা আজ থেকেই।
নির্ধারিত স্থান (মিকাত) থেকে ইহরাম বেঁধে মিনায় অবস্থান করেই হাজীরা হজের সব করণীয় সম্পন্ন করবেন। সেখান থেকেই কাল আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। দিন শেষে আরাফাতের ময়দান থেকে ফেরার পথে মুজদালিফায় রাত যাপন করে ১০ জিলহজ শুক্রবার সকালে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরবেন। সেখান থেকে গিয়েই জামারাহ তথা শয়তানের প্রতিকৃতিতে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করবেন। কোরবানি করবেন এবং তাওয়াফে জিয়ারাহ, সাফা মারওয়া সাঈ করে আবার মিনার তাঁবুতে ফিরে আসবেন। পরের দুই দিনও একইভাবে মিনার তাঁবু থেকে গিয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করবেন। ১২ অথবা ১৩ জিলহজ পাথর নিক্ষেপ শেষ করে হাজীরা মিনার তাঁবু ত্যাগ করে হজের কর্তব্যের সমাপ্তি ঘটাবেন। এরপর মক্কা ত্যাগ করার আগে বিদায়ী তওয়াফ করে যে যার অবস্থানে চলে যাবেন।
মিনার তাঁবুতে হাজীরা ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ তথা তালবিয়া পাঠ ছাড়াও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। হজের মাসলা মাসায়েল নিয়ে নিজেরা আলোচনা করেন। আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে মুনাজাত করেন।
কাল মিনা থেকে হাজীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে অবস্থান নেবেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ। এখানে কেউ অবস্থান না করলে তার হজ আদায় হবে না।
৯ জিলহজ ফজরের নামাজ পড়ে হাজীদের আরাফাতের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়ার নিয়ম। মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানের দূরত্ব ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার। অনেকে হেঁটে আরাফাতের দিকে রওয়ানা হন। দুপুরের আগেই হাজীরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে অবস্থান নেবেন। আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে গ্র্যান্ড মুফতি জোহরের ওয়াক্ত শুরু হলেই খোতবা দেবেন। সেখানে জোহর ও আসরের নামাজের পরপর জামাত হবে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত ওই ময়দানে অবস্থান করে হাজীরা আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে কান্নাকাটি করে কাটাবেন। সূর্যাস্তের সাথে সাথেই ময়দান ত্যাগ শুরু করবেন। মিনায় ফেরার পথে মাঝে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। ১০ জিলহজ সকালে ওই ময়দান ত্যাগ করে মিনায় ফিরবেন।
মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভই হজ পালনের প্রধান উদ্দেশ্য। হজের প্রতিটি কাজের মধ্যেই আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ, তার মুখাপেক্ষী হওয়া, তার কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ এবং তার নির্দেশিত পথে বাকিজীবন পরিচালনার স্বীকৃতি ও অনুশীলনই প্রকাশ পায়। এ জন্য হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘হজে মাবরুর বা কবুল হওয়া হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ এ জন্য হাজীরা সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন আল্লাহ যেন হজ পালনকে সহজ করে দেন এবং তার হজকে ‘মাবরুর হজ’ হিসেবে কবুল করেন।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button