যদি প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনের কঠোর অভিবাসন আইনে বিভ্রান্ত হন, তবে এটা তার পরিবর্তন করা উচিত

সাতবীর সিং: গত বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রভাবশালী লিয়াজোঁ কমিটির সামনে শুনানীর ঘন্টাখানেক পর, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন হয়তো এক মুহূর্তের জন্য স্বস্তি বোধ করেন। কারণ তখন পরীক্ষা নিরীক্ষা সাম্প্রতিক সময়ের কেলেংকারী থেকে সরে অন্য বিষয়ে স্হানান্তরিত হয়। এরপর ইষ্টহ্যাম-এর লেবার পার্টির এমপি স্টিফেন টিমস্ থেকে একটি ঐকান্তিক জরুরী প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। টিমসের নির্বাচনী এলাকার এক দম্পত্তির দুর্ভোগের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

দম্পত্তির পুরুষ ব্যক্তি কোভিড-১৯ সংকটের সময় তার উপার্জন হারান এবং তার স্ত্রীর আয় তাদের মাসিক ঘর ভাড়ার চেয়েও কম। যেহেতু তাদের পাসপোর্টে ‘নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস’ অর্থাৎ ‘সরকারী অর্থ সাহায্য লভ্য নয়’ সীল মারা তাই তারা নিজেদের ও সন্তানদের শিশুদের জন্ম যুক্তরাজ্যে ভরণপোষণের জন্য কোন সহায়তা পেতে অক্ষম। এ অবস্হায় তারা পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়ার হুমকিতে।
বরিস জনসন বলেন, লাইনে থাকুন স্টিফেন তারা কোন ইউনিভার্সেল ক্রেডিট কিংবা চাকুরী সহায়তা ভাতার যোগ্য নয়? টিমস্ জবাবে বলেন, তারা সরকারী সহায়তা পাচ্ছে না। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, যদিও তারা অন্য সবার মতো কর পরিশোধ করেছে এবং একই আইন মেনেছে, কিন্তু অন্য স্হান থেকে ব্রিটেনে আসা অধিকাংশ লোকই বিদঘুটেভাবে ১০ বছর পর্যন্ত সোশ্যাল সিকুইরিটি সেইফটি নেটের সুরক্ষা পেতে নিষেধাজ্ঞার অধীন, এমনকি ব্যক্তিগত কিংবা জাতীয় সংকট মুহূর্তেও।
নিউ লেবার কর্তৃক ১৯৯৯ সালে ‘নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস’ (এনআরপিএফ) চালু হয়। ২০১২ সালে থেরেসা মে এটাকে আরো সম্প্রসারিত করেন এবং এমনকি যারা তাদের ব্রিটিশ পরিবারের সাথে বসবাসের জন্য এসেছেন তাদেরকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করেন। লেবার ও কনজারভেটিভ উভয় দলের আমলে কমপক্ষে ২০০ বারের বেশী এনিয়ে তর্ক বিতর্ক ও বিরোধিতা হয়েছে।
টিমস্ ও অন্যান্য এমপি পরিবারসমূহের জন্য এনআরপি’র ফলে ঝুঁকি সৃষ্টির বিষয়ে উপর্যুপরি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।কিন্তু মন্ত্রীরা শুধুই তাদের উদ্বেগকে ওড়িয়ে দিয়েছেন। কোভিড-১৯ সংকটের শুরুতে ডজন খানেক সংগঠন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে এ ব্যাপারে লিখেছেন । তারা এই নীতি স্হগিতের দাবি জানিয়েছেন।
সত্যি বলতে কি, ‘নো রিকোর্স টু পাবলিক ফান্ডস্’ এই কথাটি যুক্তরাজ্যে আসা যে কারোর জন্য বোধগম্যভাবেই বেদনাদায়ক, বিশেষভাবে কমপক্ষে ১ লাখ ছেলেমেয়েদের জন্য।
মন্ত্রীবর্গ ও উপদেষ্টারা এটা ভাবেননি যে প্রধানমন্ত্রীকে এটা বলা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ যে,লোকজন কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে, কারণ তাদেরকে এনআরপিএফ-এর শর্তাধীনে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং মহামারির সময় একটি ৮ বছরের ব্রিটিশ বালককে অনাহার থেকে বাঁচাতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রয়োজন হয়েছে।
একটি সদ্যজাত শিশুর শীঘ্রই পিতা হতে যাওয়া ব্যক্তি, যে একজন ব্রিটিশ মহিলাকে বিয়ে করেছে, সে তার পরিবারের সাথে বসবাস করতে পারবে না, যতক্ষণ না এদেশেই একজন শ্রমিক হিসেবে তার আয় এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে, যা অর্জন করা দেশটির শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিকের আয়ত্বের বাইরে।
প্রধানমন্ত্রী কি জানেন, এর ফলে কতো হাজার ব্রিটিশ ছেলেমেয়ে পিতৃহীন বা মাতৃহীন হয়ে বেড়ে ওঠেছে?
প্রধানমন্ত্রী কি জানেন, এই মহামারির ভয়াবহতায় স্ট্যাটাসবিহীন লোকজন এখনো চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে অথচ মন্ত্রীরা এমন আইনসমূহের ব্যাপারে লেখালেখি করছেন ও এই বলে ঢাক-ঢোল পেটাচ্ছেন যে, এগুলোকে এনএইচএস থেকে আলাদা রাখা হয়েছে।
আমি এসব প্রশ্ন করছি না একটি বিষয়ের জন্য। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন যে, এদেশে বসবাস ও কাজ করছেন এমন যে কারোর এক বা অন্য ধরনের সহায়তা পাবেন। আমি তার সাথে একমত এবং আমি এটা বিশ্বাস করতে চাই, তিনি ঠিকই তা করবেন।
লেখক: সাতবীর সিং, অভিবাসীদের কল্যাণে যৌথ কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button