২০০৮ সালের পর সবচেয়ে চাপে ব্রিটিশ অর্থনীতি

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্রেক্সিট অনিশ্চতায় পড়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির অবস্থা একেবারে নাজেহাল। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে খারাপ বছরের দেখা পেতে যাচ্ছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মন্দার সময় ব্যতীত এমন খারাপ সময় আর দেখেনি অর্থনীতিটি।

গত বছরের (২০১৯) পুরোটা সময় অস্থির ছিল ব্রিটিশ অর্থনীতি। অন্যদিকে বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন বরিস জনসন। এ সবকিছুই প্রভাব ফেলছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর। ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত জরিপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের শেষ তিন মাস স্থবির ছিল অর্থনীতিটি। কর্মসংস্থান বাজারে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে এবং এক দশক ধরে উন্নতি হওয়ার পর সরকারি ঋণ আবার খাড়াভাবে বাড়তে শুরু করেছে।

কনজারভেটিভ পার্টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জানুয়ারিতেই যদি ব্রেক্সিট চুক্তি করা যায়, তবে ব্রিটেনে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের ‘ঢেউ’ আছড়ে পড়বে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রতিজ্ঞা করেছেন, ৩১ জানুয়ারিই ইইউ থেকে ব্রিটেনকে বের করে নিয়ে আসবেন, এমনকি কোনো চুক্তি না হলেও। জনসনের এমন অবস্থান ব্রিটেনের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মনিটারি কমিটির সাবেক দুই সদস্য মনে করছেন, জনসনের এমন অবস্থানের কারণে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। তারা এও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চলতি বছরও ব্রাসেলসের সঙ্গে জনসনের জটিল বাণিজ্য আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আর এতে ব্রিটিশ অর্থনীতির সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

বিওইর মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) সাবেক সদস্য অ্যান্ড্রু সেন্টেন্স বলেন, একটি নতুন সরকার এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে নতুন গভর্নর—এটি ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য নতুন সূচনা। তবে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ও সম্ভাবনার ওপর ব্রেক্সিট-সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার নেতিবাচক প্রভাব ফেলা অব্যাহত রয়েছে।

এমপিসির আরেক সাবেক সদস্য ডেভিড ব্লেঞ্চফ্লাওয়ার বলেন, বিদেশী, এমনকি ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর কাছে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাজ্যের তুলনায় জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক বা সুইডেন অধিকতর নিরাপদ মনে হতে পারে। অন্যদিকে ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে কোম্পানিগুলো পণ্য মজুদ করা চালিয়ে যাচ্ছে। এর কোনোটাই যুক্তরাজ্যের প্রবৃদ্ধির জন্য ভালো নয়।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২০ সালে ব্রিটেনে কর্মসংস্থান হার কমতে পারে। তবে গড় মজুরি বাড়তে পারে। থিংক ট্যাংকটি বলছে, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক শ্লথগতি ব্যবসায়িক আস্থার বড় পতন ঘটিয়েছে। ফলে বিনিয়োগ না হওয়া ও শূন্য প্রবৃদ্ধির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। শ্লথ অর্থনীতিতে শ্রমবাজারও শ্লথ হয়ে পড়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে ২০২০ সালে ব্রিটেনের শ্রমবাজার খুব কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাবে। নীতিনির্ধারকদের কাজকারবার এবং ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী টর্স্টেন বলেন, ২০১৯ সাল ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ বছর ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মন্দার সময়টা ছাড়া দুর্বলতম প্রবৃদ্ধির বছর এটি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button