ব্যাংক অব ইংল্যান্ডে আজ অব্দি নিয়োগ পাননি কোনো নারী!

৩২০ বছরের ইতিহাসে গভর্নর নিয়োগ পেয়েছেন ১২১ জন, অথচ আজ অব্দি নিয়োগ পাননি কোনো নারী!

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (বিওই) নতুন গভর্নর হলেন অ্যান্ড্রু বেইলি। প্রাজ্ঞ বেইলির নিয়োগকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। তবে বেলা শেষে একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে, একজন নারী বা কৃষ্ণাঙ্গ কেন ব্যাংকটির গভর্নর হতে পারলেন না? কেন আবারো একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হলেন?

ব্যাংকটির গভর্নর নির্বাচন নিয়ে বড় সমালোচনা হলো, প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা যাদের জীবনকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে প্রায়ই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ব্যাংকটি। এদিকে ৩২০ বছরের ইতিহাসে গভর্নর নিয়োগ পেয়েছেন ১২১ জন। অথচ আজ অব্দি নিয়োগ পাননি কোনো নারী!

গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী নিয়োগ না পাওয়া এককভাবে ব্যাংকের কোনো সমস্যা নয়, বরং তা আর্থিক জগতের একটি সাধারণ সমস্যা বলে মনে করেন ডোমিনি মস। লন্ডনের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ‘রিটার্ন হাব’-এর এ প্রতিষ্ঠাতা বলেন, আমাদের ভোক্তাবাজারে নারী-পুরুষের অনুপাত সমান হওয়া সত্ত্বেও বিওইর বোর্ডের দৃশ্য সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক। আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় যে এক ধরনের সাংস্কৃতিক সমস্যা রয়েছে, তা আমাদের স্বীকার করতেই হবে।

প্রতিষ্ঠানটির গভর্নর ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন না বা এ নিয়োগে সাধারণত ব্যাংকটিরও কোনো হাত থাকে না। গভর্নর নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। আর অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। বেইলির ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। লন্ডন শহর বৈচিত্র্যময় করার ক্ষেত্রে বেইলির অবদান বিশাল। গোল্ডম্যান স্যাকসসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শীর্ষ পদে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। কাজেই এ পদে তার নিয়োগকে যথাযথ মনে করেন বেভ শাহ।

ব্যক্তি বেইলিকে নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। তবে তার প্রশ্ন, ব্যাংকটির গভর্নর হওয়ার মতো যোগ্য কোনো নারী নেই কেন? বেইলির নিয়োগ ব্যাংকটির নিয়োগ প্রক্রিয়ার ‘গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগত সমস্যা’কে তুলে ধরেছে বলে মনে করেন শাহ। কোনো নারী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান না হতে পারার মূলে লিঙ্গবৈষম্যই প্রধান অন্তরায় বলে মনে করেন তিনি। কাজেই ব্যাংকটির পুরো কাঠামোর মধ্যে সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন সিটি হাইভের এ প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠানটির কমিটিও যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় নয় বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নিজেদের কর্মীদের মধ্যে আরো বৈচিত্র্য থাকা দরকার ছিল বলে মনে করে ব্যাংকটি। কর্মীদের মধ্যে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যর্থ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের চলতি বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে। তবে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিক হারে নারী, কৃষ্ণাঙ্গ, এশীয় ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর (ব্যামে) মানুষ নিয়োগের চেষ্টা সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে একই প্রতিবেদনে। অন্যদিকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সব নন-জ্যেষ্ঠ পদে নারী-পুরুষের অনুপাত সমান করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তবে এসব পদে চলতি বছর তা ছিল ৪৬ শতাংশ।

ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে নারীর অনুপাত এক-তৃতীয়াংশের মতো, যা ২০১৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি। তখন তা ছিল ১৭ শতাংশ। তবে এখনো তা লক্ষ্যমাত্রার নিচে, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যামের অনুপাত মাত্র ৫ শতাংশ। দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক পেশার তুলনায় ব্যাংকটির নারী-পুরুষের অনুপাতের বিষয়টি অনেক ভালো বলে উল্লেখ করা হয়েছে অনেক পরিসংখ্যানে। তবে বিওইর বর্তমান মুদ্রানীতি কমিটির নয়জনের আটজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ও বাকি জন শ্বেতাঙ্গ নারী। -বিবিসি

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন...
Close
Back to top button